সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অনেক শিষ্যরা যীশুর অনুসরণ ত্যাগ করে

অনেক শিষ্যরা যীশুর অনুসরণ ত্যাগ করে

অধ্যায় ৫৫

অনেক শিষ্যরা যীশুর অনুসরণ ত্যাগ করে

যীশু কফরনাহূমের এক সমাজগৃহে স্বর্গ হতে প্রকৃত খাদ্যর বিষয়ে তাঁর অংশ সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য প্রকৃত রূপে সেই আলোচনাটির প্রসারণ মাত্র, যা শুরু হয় সেই লোকেদের সঙ্গে যারা তাঁকে গালীল সমুদ্রের পূর্ব প্রান্ত থেকে ফিরবার সময় দেখতে পেয়েছিল, যেখানে তারা অলৌকিক ভাবে যোগান রুটী ও মাছের দ্বারা খাদ্য খেয়েছিল।

যীশু তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যান এই বলে: “আমি যে খাদ্য দিব, সে আমার মাংস, জগতের জীবনের জন্য।” ঠিক দুবছর আগে, ৩০ সা.শ. বসন্তকালে, যীশু নীকদীমকে বলেন, ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে তিনি তাঁর পুত্রকে ত্রাণকর্ত্তা রূপে দিলেন। এইভাবে, যীশু এখন দেখিয়ে দিচ্ছেন যে মানব জগতের মধ্যে যে কেহ প্রতীকরূপে তাঁর মাংস খাবে, অর্থাৎ যে বলিদান তিনি খুব শীঘ্রই করতে যাচ্ছেন তাতে বিশ্বাস করবে, অনন্ত জীবন পেতে পারে।

জনতা, তবুও, যীশুর কথায় বিদ্ধ পেল। “এ ব্যক্তি কেমন করে ভোজনের জন্য আমাদের আপনার মাংস দিতে পারে?” তারা জিজ্ঞাসা করে। যীশু চান যে তাঁর শ্রোতারা যেন বুঝতে পারে যে তাঁর মাংস খাওয়ার অর্থটি একটি রূপক অর্থে বুঝতে হবে। সুতরাং, বিষয়টিকে জোর দেবার জন্য তিনি যা বললেন, তা কিন্তু আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করলে আরও ভীষণ রূপে আপত্তিজনক।

“তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর,” যীশু ঘোষণা করলেন, “তোমাদিগেতে জীবন নাই। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব; কারণ আমার মাংস প্রকৃত ভক্ষ্য এবং আমার রক্ত প্রকৃত পানীয়। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে থাকে, এবং আমি তাহাতে থাকি।”

সত্যই, যীশুর শিক্ষা শুনতে আপত্তিজনক মনে হত যদি তিনি নরমাংস ভক্ষণ সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতেন। কিন্তু, নিশ্চয়ই, যীশু আক্ষরিক অর্থে মাংস খেতে বা রক্ত পান করবার জন্য অনুরোধ করছেন না। তিনি শুধুমাত্র জোর দিচ্ছেন যে যারা অনন্ত জীবন পাবে তাদের অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে সেই বলিদানে, যা তাঁকে দিতে হবে যখন তিনি তাঁর সিদ্ধ মানব শরীর উৎসর্গ করবেন ও তাঁর জীবনরক্ত ঢেলে দেবেন। তবুও, তাঁর বহু শিষ্যরা তাঁর শিক্ষা বুঝবার কোন প্রচেষ্টা না দেখিয়ে প্রতিবাদ করল: “এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?”

তাঁর বহু শিষ্যরা বচসা করছে ইহা জেনে যীশু বলেন: “একথায় কি তোমাদের বিদ্ধ জন্মে? তবে মনুষ্যপুত্র পূর্বে যেখানে ছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে উঠিতে দেখিলে কি বলিবে? . . . আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ আছে, যাহারা বিশ্বাস করে না।”

যীশু বলে চললেন: “এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, যদি পিতা হইতে ক্ষমতা দত্ত না হয়, কেহই আমার নিকট আসিতে পারে না।” এ কথায়, বহু শিষ্য তাঁকে ছেড়ে গেল, আর তাঁর অনুসরণ করল না। সুতরাং তাঁর ১২ জন প্রেরিতের দিকে ফিরে যীশু জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছ?”

পিতর উত্তর করিলেন: “প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের পবিত্র ব্যক্তি।” সত্যই আনুগত্যের কি উত্তম উদাহরণ, যদিও পিতর ও অন্য প্রেরিতরা যীশুর শিক্ষার বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝতে পারেনি!

যদিও পিতরের উত্তরে যীশু খুশি হয়েছিলেন, যীশু মন্তব্য করেন: “তোমরা এই যে বারো জন, আমি কি তোমাদিগকে মনোনীত করি নাই? আর তোমাদের মধ্যেও একজন দিয়াবল আছে।” তিনি ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার সম্বন্ধে বলছিলেন। হয়ত এই সময়েই যীশু যিহূদার মধ্যে এক মন্দ পথের “শুরু,” বা সূত্রপাত দেখতে পান।

যীশু লোকেদের তাঁকে রাজা বানাবার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে, তাদের হতাশ করেছেন, তাই হয়তো তারা যুক্তি তোলে, ‘কি ভাবে ইনি সেই মশীহ যদি তিনি মশীহর অধিকারগত স্থান না নিতে চান?’ আর এই বিষয়টিও লোকেদের অন্তরে এক সতেজ চিন্তা হয়ে রইল। যোহন ৬:৫১-৭১; ৩:১৬.

▪ কাদের জন্য যীশু নিজের মাংস দেন, এবং কিভাবে তারা ‘তাঁর মাংস খায়’?

▪ যীশুর আর কোন কথা লোকদের হতবাক করে, তবুও তিনি কিসে জোর দিচ্ছিলেন?

▪ যখন বহুজন যীশুর অনুসরণ ত্যাগ করে, পিতরের উত্তর কি ছিল?