আরও দেখা দেন
অধ্যায় ১২৯
আরও দেখা দেন
শিষ্যরা তখনও ভগ্ন-হৃদয়। তারা সেই ফাঁকা কবরের তাৎপর্য বুঝতে পারছেন না, ও তারা স্ত্রীলোকদের কথায়ও বিশ্বাস করেন না। সুতরাং রবিবার দিন, পরে ক্লিয়পা ও অপর একজন শিষ্য যিরূশালেম থেকে ইম্মায়ূ নামক গ্রামে যাচ্ছিলেন যা প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ।
যাত্রাপথে, যখন তারা ঘটনাবলী যা সেই সময়ে ঘটেছে তা নিয়ে কথাবার্তা বলছেন, এক অপরিচিত ব্যক্তি তাদের সাথে যোগ দেন। “তোমরা চলিতে চলিতে পরস্পর যে সকল কথা বলাবলি করিতেছ, সে সকল কি?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন।
শিষ্যরা দাঁড়ান, তারা হতাশাগ্রস্ত এবং ক্লিয়পা উত্তর দেন: “আপনি কি একা যিরূশালেমে প্রবাস করিতেছেন, আর এই কয়েক দিনের মধ্যে তথায় যে সকল ঘটনা হইয়াছে তাহা জানেন না?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “কি কি প্রকার ঘটনা?”
“নাসরতীয় যীশু বিষয়ক ঘটনা,” তারা উত্তর দেন। “প্রধান যাজকেরা ও আমাদের শাসকগণ প্রাণদণ্ডাজ্ঞার জন্য তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন ও যাতনাদণ্ডে দিলেন। কিন্তু আমরা আশা করিতেছিলাম ইনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করিবেন।”
ক্লিয়পা ও তার সঙ্গী সেই দিনের ঘটনাগুলি বর্ণনা করেন—সেই দূতেদের আশ্চর্য্য অবির্ভাব ও ফাঁকা কবর—কিন্তু এই বিষয়গুলির অর্থ সম্বন্ধে তারা হতবাক একথা স্বীকার করেন। সেই অপরিচিত ব্যক্তি তাদের তিরস্কার করেন: “হে অবোধেরা, এবং ভাববাদীগণ যে সমস্ত কথা বলিয়াছেন, সেই সকল বিশ্বাসকরণে শিথিল চিত্তেরা! খ্রীষ্টের কি অবশ্যক ছিল না যে, এই সমস্ত দুঃখভোগ করেন ও আপন প্রতাপে প্রবেশ করেন?” তিনি তারপর পবিত্র শাস্ত্র থেকে খ্রীষ্ট সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন।
অবশেষে তারা ইম্মায়ূর কাছে এসে পৌঁছান, আর সেই অপরিচিত ব্যক্তি এমন দেখান যেন তিনি চলে যাবেন। কিন্তু শিষ্যরা আরও শুনতে চান, তাই তারা বিনয় করেন: “আমাদের সাথে অবস্থিতি করুন, কারণ সন্ধ্যা হইয়া আসিল।” তাই তিনি ভোজনের জন্য থাকেন। যখন তিনি প্রার্থনা করেন ও রুটি ভেঙ্গে তাদের হাতে দেন, তারা বুঝতে পারেন যে রূপান্তরিত মনুষ্য দেহে তিনি প্রকৃতই যীশু। কিন্তু তারপর তিনি অন্তর্হিত হন।
এখন তারা বোঝে যে সেই অপরিচিত ব্যক্তি কেন এত কিছু জানেন! “আমাদের চিত্ত কি উত্তজ্ব হইয়া উঠিতেছিল না,” তারা প্রশ্ন করেন, “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সাথে কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন?” আর দেরি না করে, তারা যিরূশালেমে যাত্রা করেন, যেখানে তারা প্রেরিত ও যারা তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন, তাদের পান। ক্লিয়পা ও তার সঙ্গী কিছু বলার আগেই অন্যরা উৎসাহের সাথে তাদের বলেন: “প্রভু নিশ্চয়ই উঠিয়াছেন, এবং শিমোনকে দেখা দিয়াছেন!” তারপর দুইজনে বর্ণনা করেন কিভাবে প্রভু তাদের কাছেও আবির্ভূত হন। এই নিয়ে সেই দিনে তিনি চারবার বিভিন্ন শিষ্যদের কাছে দেখা দিয়েছেন।
যীশু হঠাৎ পঞ্চমবার দেখা দেন। যদিও গৃহের দরজা সব বন্ধ কারণ শিষ্যরা যিহূদীদের ভয়ে রয়েছেন, তিনি প্রবেশ করেন, এবং তাদের মধ্যস্থানে দাঁড়িয়ে, তিনি বলেন: “তোমাদের শান্তি হউক।” তারা ভয় পান, মনে করেন কোন আত্মা দেখছেন। তাই, তিনি তাদের বুঝিয়ে দেন যে তিনি কোন অপচ্ছায়া নন, ও বলেন: “কেন উদ্বিগ্ন হইতেছ? তোমাদের অন্তরে বিতর্কের উদয়ই বা কেন হইতেছে? আমার হাত ও আমার পা দেখ, এ আমি স্বয়ং; আমাকে স্পর্শ কর আর দেখ; কারণ আমায় যেমন দেখিতেছ, আত্মার এরূপ অস্থি-মাংস নাই।” কিন্তু তারা তবুও বিশ্বাস করতে দ্বিধাবোধ করেন।
তাদের বুঝতে সাহায্য করতে যে তিনি সত্যই যীশু, তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “তোমাদের কাছে এখানে কি কিছু খাদ্য আছে?” একখানি ভাজা মাছ নিয়ে খেয়ে, তিনি বলেন: “তোমাদের সঙ্গে থাকিতে আমি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছিলাম [মৃত্যুর আগে], আমার সেই বাক্য এই, মোশির ব্যবস্থায় ও ভাববাদীগণের গ্রন্থে এবং গীতসংহিতায় আমার বিষয়ে যাহা যাহা লিখিত আছে, সে সকল অবশ্য পূর্ণ হইবে।”
তিনি কথা বলে চলেন, যা প্রায় তাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করার সমান, যীশু শিক্ষা দেন: “এইরূপ লিখিত আছে যে, খ্রীষ্ট দুঃখভোগ করিবেন, এবং তৃতীয় দিনে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিবেন, আর তাঁহার নামে পাপমোচনার্থক মনপরিবর্ত্তনের কথা সর্বজাতির কাছে প্রচারিত হইবে—যিরূশালেম হইতে আরম্ভ করা হইবে, তোমরাই এ সকলের সাক্ষী।”
যে কোন কারণেই থোমা এই গুরুত্বপূর্ণ রবিবার দিনের সন্ধ্যার সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তাই এরপরের দিন, অন্যরা আনন্দের সাথে তাকে বলেন: “আমরা প্রভুকে দেখিয়াছি!”
“আমি যদি তাঁহার দুই হাতে পেরেকের চিহ্ন না দেখি,” থোমা জানান, “ও সেই পেরেকের স্থানে আমার অঙ্গুলি না দিই, এবং তাঁহার কুক্ষিদেশ মধ্যে আমার হাত না দিই, তবে কোন মতে বিশ্বাস করিব না।”
আট দিন পরে শিষ্যরা আবার গৃহ মধ্যে মিলিত হয়েছেন। এবার থোমা তাদের মধ্যে আছেন। যদিও সব দরজা বন্ধ, যীশু আবার তাদের মধ্যে এসে দাঁড়ান ও বলেন: “তোমাদের শান্তি হোক।” তারপর, থোমার দিকে ফিরে, তাকে ডাকেন: “এদিকে তোমার অঙ্গুলি বাড়াইয়া দেও, আমার হাত দুখানি দেখ, আর তোমার হাত বাড়াইয়া দেও, আমার কুক্ষিদেশ মধ্যে দেও; এবং অবিশ্বাসী হইও না, বিশ্বাসী হও।”
“প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার!” থোমা উৎসাহে বলে ওঠেন।
“তুমি আমাকে দেখিয়াছ বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছ?” যীশু জিজ্ঞাসা করেন। “ধন্য তাহারা, যাহারা না দেখিয়া বিশ্বাস করিল।” লূক ২৪:১১, ১৩-৪৮; যোহন ২০:১৯-২৯.
▪ এক অপরিচিত ব্যক্তি দুই শিষ্যকে যারা ইম্মায়ূতে যাচ্ছিলেন কি জিজ্ঞাসা করেন?
▪ অপরিচিত ব্যক্তি কি বলেন যা শিষ্যদের হৃদয় উত্তজ্ব করে?
▪ কিভাবে শিষ্যরা বুঝতে পারেন কে সেই অপরিচিত ব্যক্তি?
▪ যখন ক্লিয়পা ও তার সঙ্গী যিরূশালেমে ফেরেন তারা কি উৎসাহজনক খবর শোনেন?
▪ যীশু কিভাবে পঞ্চমবার তাঁর শিষ্যদের দেখা দেন, আর সেই সময় কি ঘটে?
▪ যীশুর পঞ্চম আবির্ভাবের আট দিন পর কি ঘটে, এবং কিভাবে থোমা অবশেষে নিশ্চিত হন যে যীশু জীবিত?