সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উত্তরাধিকারের প্রশ্ন

উত্তরাধিকারের প্রশ্ন

অধ্যায় ৭৭

উত্তরাধিকারের প্রশ্ন

লোকেরা জানত যে যীশু ফরীশীর বাড়ীতে সান্ধ্যভোজে গেছেন। সুতরাং তারা বাড়ীর বাইরে হাজার হাজার জন জড় হয় এবং অপেক্ষারত কখন যীশু বার হবেন। তারা কিন্তু ফরীশীদের মত নয় যারা যীশুর বিরোধী এবং কোন এক ভুল কথার জন্য তাঁকে ধরতে চায়, এই মানুষরা উপলব্ধি সহকারে তাঁর কথা শোনার জন্য সাগ্রহে প্রস্তুত।

যীশু, প্রথমে নিজ শিষ্যদের দিকে ফিরে, বলেন: “তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক, তাহা কপটতা।” ঠিক যেমন ঐ ভোজের সময় বোঝা যায়, ফরীশীদের সম্পূর্ণ ধর্মীয় ব্যবস্থাই কপটতাপূর্ণ। যদিও ফরীশীদের মন্দতা লোকদেখান ঈশ্বর ভক্তির দ্বারা আড়াল করা, শেষে এটি উন্মোচিত হবেই। “কিন্তু এমন ঢাকা কিছুই নাই, যাহা প্রকাশ পাইবে না,” যীশু বললেন, “এবং এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না।”

যীশু উৎসাহের পুনরাবৃত্তি করেন, যা তিনি ১২ জনকে দেন যখন তিনি গালীলে তাদের এক প্রচার অভিযানে পাঠান। তিনি বললেন: “যাহারা শরীর বধ করিয়া পশ্চাৎ আর কিছু করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না।” যেহেতু ঈশ্বর এক ছোট চড়াই পাখিকে এমন কি ভুলে যান না, যীশু তাঁর অনুগামীদের নিশ্চয়তা দিলেন ঈশ্বর তাদের ভুলে যাবেন না। তিনি বলেন: “আর লোকে যখন তোমাদিগকে সমাজ গৃহে এবং শাসনকর্তাদের ও কর্ত্তৃপক্ষদের সম্মুখে লইয়া যাইবে, . . . কি কি বলা উচিৎ, তাহা পবিত্র আত্মা সেই দণ্ডে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন।”

সেই লোকসমূহের মধ্যে এক ব্যক্তি উঠে বলে। “হে গুরু,” সে অনুরোধ করে, “আমার ভ্রাতাকে বলুন, যেন আমার সহিত পৈতৃক ধন বিভাগ করে।” মোশির ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ছিল প্রথম পুত্র সন্তান ধনসম্পত্তির দুই অংশ পাবে, সুতরাং বিবাদের কোন কারণ থাকা উচিৎ নয়। কিন্তু এই ব্যক্তি তার আইনগত অংশ ছাড়াও হয়ত বেশী চাইছে।

যীশু সঠিক কারণে জড়িত হতে অস্বীকৃত। “মনুষ্য, তোমাদের উপরে বিচারকর্ত্তা বা বিভাগকর্ত্তা করিয়া আমাকে কে নিযুক্ত করিয়াছে?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন। তিনি এরপর জনতাকে এই গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিলেন: “সাবধান, সর্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” হ্যাঁ, যতই মানুষ উপার্ড্জন করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হয় আর সব কিছু পিছনে ফেলে যেতে হয়। এই বিষয়টিতে জোর দিয়ে, এবং ঈশ্বরের কাছে ভাল নাম অর্ড্জন করতে অসমর্থ হলে কি হয়, তা দেখানোর জন্য যীশু এক দৃষ্টান্ত দিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করলেন:

“একজন ধনবানের জমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হইয়াছিল। তাহাতে সে মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিল, ‘কি করি, আমার শস্য রাখিবার ত স্থান নাই?’ পরে কহিল, ‘এইরূপ করিব, আমার গোলাঘর সকল ভাঙ্গিয়া বড় বড় গোলাঘর নির্ম্মাণ করিব, এবং তাহার মধ্যে আমার সমস্ত শস্য ও দ্রব্য রাখিব; আর আপন প্রাণকে বলিব: “প্রাণ, বহু বৎসরের নিমিত্ত তোমার জন্য অনেক দ্রব্য সঞ্চিত আছে; বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর।”’ কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে কহিলেন, ‘হে নির্ব্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ, তোমা হইতে দাবী করিয়া লওয়া যাইবে। তবে তুমি এই যে আয়োজন করিলে, এ সকল কাহার হইবে?’”

শেষে, যীশু বললেন: “যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান নয়, সে এইরূপ।” যদিও শিষ্যেরা এই ধন সঞ্চয়ের মূর্খতার ফাঁদের মধ্যে নয়, কিন্তু জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য সহজেই তারা যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ সেবা থেকে বিচ্যুত হতে পারে। সুতরাং যীশু এই সময়ে সেই সুন্দর উপদেশের পুনরাবৃত্তি করলেন যা তিনি দেড় বৎসর আগে পর্বতে দত্ত উপদেশে দেন। শিষ্যদের দিকে ফিরে তিনি বলেন:

“এই কারণে আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ‘কি ভোজন করিব,’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না। . . . কাকদের বিষয়ে আলোচনা কর। তাহারা বুনেও না কাটেও না; তাহাদের ভাণ্ডারও নাই গোলাঘরও নাই; আর ঈশ্বর তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন। . . . কানুড় পুরে বিষয় বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল কোন শ্রম করে না, সূতাও কাটে না, তথাপি আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। . . .

“কি ভোজন করিবে, কি পান করিবে, এ বিষয়ে তোমরা সচেষ্ট হইও না, এবং সন্দিগ্ধ চিত্ত হইও না; কেননা জগতের জাতিগণ এই সকল বিষয়ে সচেষ্ট; কিন্তু তোমাদের পিতা জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। তোমরা বরং তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও, তাহা হইলে এই সকলও তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।”

বিশেষ করে এই অর্থনৈতিক সমস্যার সময়ে যীশুর কথাগুলি গভীর ভাবে বিবেচনার যোগ্য। যে ব্যক্তিরা বৈষয়িক প্রয়োজনের প্রতি অতি উদ্বিগ্ন এবং আত্মিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিতে মন্থর হয়ে পড়েছেন, আসলে, কিন্তু তারা ঈশ্বর তাঁর দাসেদের সরবরাহ করতে সমর্থ, সেই বিষয়ে বিশ্বাসের অভাব দেখাচ্ছেন। লূক ১২:১-৩১; দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৭.

▪ কেন, সেই ব্যক্তিটি সবেত, উত্তরাধিকারের বিষয়টি ওঠায়, এবং যীশু কি ধরনের পরামর্শ দেন?

▪ যীশু কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন, এবং এর লক্ষ্য কি ছিল?

▪ কোন উপদেশ যীশু পুনরাবৃত্তি করেন, এবং কেন ইহা উপযুক্ত?