সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন শমরীয়া নারীকে শিক্ষাদান

একজন শমরীয়া নারীকে শিক্ষাদান

অধ্যায় ১৯

একজন শমরীয়া নারীকে শিক্ষাদান

যিহূদীয়া থেকে গালীলে যাবার পথে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা শমরিয়া প্রদেশ দিয়ে যান। সেই ভ্রমণের পথে ক্লান্ত হয়ে, প্রায় দুপুরের সময় তারা বিশ্রাম নেবার জন্য শুখর নামক নগরে একটি কূপের কাছে যাত্রা ভঙ্গ করেন। এই কূপটি বহু শতাব্দী পূর্বে যাকোব খনন করেছিলেন, আর আজ অবধি তা রয়েছে বর্তমান দিনের নগর নাব্লুসের কাছে।

যীশু যখন এখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাঁর শিষ্যরা নগরে যান কিছু খাদ্য কিনতে। যখন একজন শমরীয় স্ত্রীলোক সেখানে জল নিতে আসে, তিনি অনুরোধ করেন: “আমাকে পান করিবার জল দাও।”

যিহূদী ও শমরীয়রা একে অপরের সাথে কোন সম্বন্ধ রাখত না, তাদের মধ্যে এক বদ্ধমূল সংস্কার থাকার দরুন। সেই জন্য আশ্চর্য্য হয়ে, স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞাসা করে: “আপনি যিহূদী হইয়া কেমন করিয়া আমার কাছে পান করিবার জল চাহিতেছেন, আমি তো শমরীয় স্ত্রীলোক?”

“তুমি যদি জানিতে,” যীশু উত্তর করেন, “কে তোমাকে বলিতেছেন, ‘আমাকে পান করিবার জল দাও’ তবে তাঁহারই নিকটে যাচ্ঞা করিতে, এবং তিনি তোমাকে জীবন্ত জল দিতেন।”

“মহাশয়,” স্ত্রীলোকটি উত্তর দেয়, “জল তুলিবার জন্য আপনার কাছে কিছুই নাই, কূপটিও গভীর; তবে সেই জীবন্ত জল কোথা হইতে পাইলেন? আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোব হইতে কি আপনি মহান্‌? তিনিই আমাদের এই কূপ দিয়াছেন, আর ইহার জল তিনি নিজে ও তাঁহার পুত্রগণ পান করিতেন, তাঁহার পশুপালও পান করিত?”

“যে কেহ এই জল পান করে, তাহার আবার পিপাসা হইবে,” যীশু মন্তব্য করেন। “কিন্তু আমি যে জল দিব, তাহা যে কেহ পান করে, তাহার পিপাসা আর কখনও হইবে না; বরং আমি তাহাকে যে জল দিব, তাহা তাহার অন্তরে এমন জলের উনুই হইবে, যাহা আনন্ত জীবন পর্যন্ত উথলিয়া উঠিবে।”

“মহাশয়, সেই জল আমাকে দিউন, যেন আমার পিপাসা না পায়, এবং জল তুলিবার জন্য এতটা পথ হাঁটিয়া আসিতে না হয়,” সেই স্ত্রীলোকটি উত্তরে জানায়।

যীশু এখন তাহাকে বলেন: “যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডাকিয়া লইয়া আইস।”

“আমার স্বামী নাই,” স্ত্রীলোকটি উত্তর দেয়।

যীশু তার উক্তির সত্যতা প্রতিপাদন করেন। “তুমি ভালই বলিয়াছ, ‘যে, আমার স্বামী নাই।’ কারণ তোমার পাঁচটি স্বামী হইয়া গিয়াছে, আর এখন তোমার যে আছে, সে তোমার স্বামী নয়।”

“মহাশয়, আমি দেখিতেছি যে আপনি ভাববাদী,” স্ত্রীলোকটি আশ্চর্য্য হয়ে বলে। তার আত্মিক বিষয়ে অগ্রহ প্রকাশ করে, সে মন্তব্য করে যে শমরীয়রা “এই পর্বতে ভজনা করিতেন [গরিসীম পর্বত যা কাছেই অবস্থিত]; আর আপনারা [যিহূদীরা] বলিয়া থাকেন যে স্থানে ভজনা করা উচিত সে স্থানটি যিরূশালেমেই আছে।”

তবুও, উপাসনার স্থানটিই গুরুত্বপূর্ণ নয়, যীশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। “এমন সময় আসিতেছে,” তিনি বলেন, “যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন। ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাহার ভজনা করে তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।”

স্ত্রীলোকটি দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। “আমি জানি মশীহ আসিতেছেন, যাঁহাকে খ্রীষ্ট বলে,” সে জানায়। “তিনি যখন আসিবেন, তখন আমাদিগকে সকলই জ্ঞাত করিবেন।”

“তোমার সহিত কথা কহিতেছি যে আমি, আমিই তিনি,” যীশু ঘোষণা করেন। এই বিষয়ে চিন্তা করুন! এই স্ত্রীলোকটি যে অপরাহ্নে জল তুলতে আসে, সবেত যাতে নগরের অন্য মহিলাদের দৃষ্টিগোচর না হয়, কারণ তারা হয়তো তাকে ঘৃণা করে তার জীবন যাপনের ধরনের জন্য, সে কিন্তু যীশুর দ্বারা অপূর্ব করুণা লাভ করে। সরাসরি, তিনি তাকে বলেন যা তিনি খোলাখুলিভাবে আর কারোর কাছে স্বীকার করেননি। এর ফল কি হয়?

অনেক শমরীয়রা বিশ্বাসী হয়

শিষ্যরা খাবার নিয়ে শুখর থেকে ফিরে আসে, সেই যাকোবের কূপের কাছে যীশুর কাছে যেখানে তারা তাকে রেখে গিয়েছিল, এবং সেখানে এখন তিনি একজন শমরীয় নারীর সাথে কথা বলছিলেন। যখন শিষ্যরা উপস্থিত হন, সে তার জলের কলসী ফেলে, নগরের দিকে যায়।

যে বিষয় যীশু তাকে বলেছিলেন সেইগুলিতে গভীর অগ্রহ দেখিয়ে, সে নগরের লোকদের বলে: “আইস, একটি মানুষকে দেখ, আমি যাহা কিছু করিয়াছি তিনি সকলই আমাকে বলিয়া দিলেন।” তারপর, যেন তাদের কৌতুহল বাড়ে, সে জিজ্ঞাসা করে: “তিনিই কি সেই খ্রীষ্ট নহেন?” সেই প্রশ্ন তার কাজ সম্পাদন করল—লোকেরা নিজেরা তা দেখার জন্য বাইরে গেল।

ইতিমধ্যে, শিষ্যেরা যীশুকে বিনতি করে যাতে তিনি নগর থেকে নিয়ে আসা খাদ্য খান। কিন্তু তিনি উত্তর দেন: “আহারের জন্য আমার এমন খাদ্য আছে যা তোমরা জান না।”

“কেহ কি ইহাকে খাদ্য আনিয়া দিয়াছে?” শিষ্যরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করেন। যীশু ব্যাখ্যা করেন: “আমার খাদ্য এই যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি। তোমরা কি বল না আর চারি মাস পরে শস্য কাটিবার সময় হইবে?” যাহাহোক, আত্মিক শস্য ছেদনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যীশু বলেন: “চক্ষু তুলিয়া ক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, শস্য এখনই কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ হইয়াছে। যে কাটে সে বেতন পায়, এবং অনন্ত জীবনের নিমিত্ত শস্য সংগ্রহ করে। যেন যে বুনে ও যে কাটে, উভয়ে একত্র আনন্দ করে।”

যীশু হয়ত সেই শমরীয় নারীর সাথে কথাবার্ত্তার বৃহৎ ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন—যে অনেকে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করছে এই স্ত্রীলোকের সাক্ষ্যে। সে নগরের লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই বলে: “আমি যাহা কিছু করিয়াছি, তিনি সকলই আমাকে বলিয়া দিলেন।” তাই, যখন শুখরের লোকেরা তাঁর নিকট কূপের কাছে আসে, তারা তাঁকে থাকতে এবং তাদের সাথে আরও কথা বলতে বলে। যীশু সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন ও দুই দিন তাদের সাথে থাকেন।

শমরীয়রা যত যীশুর কথা শোনে, আরও অনেকে বিশ্বাসী হয়। তখন তারা সেই স্ত্রীলোকটিকে বলে: “এখন যে আমরা বিশ্বাস করিতেছি সে আর তোমার কথা প্রযুক্ত নয়, কেননা আমরা আপনারা শুনিয়াছি ও জানিতে পারিয়াছি যে, ইনি সত্যই জগতের ত্রাণকর্তা।” অবশ্যই সেই শমরীয় নারী উত্তম উদাহরণ রাখেন যে আমরা কিভাবে খ্রীষ্ট সম্বন্ধে অন্যদের অগ্রহ বাড়াতে পারি যাতে তারা এই বিষয় আরও অনুসন্ধান করে!

আপনার স্মরণে থাকতে পারে শস্যছেদনের সময় আর মাত্র চার মাস বাকি—সবেত বার্লি শস্যের, যা প্যালেস্টাইনে বসন্তকালে হয়ে থাকে। তাই এখন হয়ত নভেম্বর কি ডিসেম্বর মাস। এর অর্থ ৩০ সা.শ. নিস্তারপর্বের পর, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যিহূদীয়ায় প্রায় আট মাস ব্যয় করেন শিক্ষা ও বাপ্তিস্মের কাজে। এরপর তারা তাদের গৃহের এলাকা সেই গালীলের দিকে যাত্রা করেন। তাদের জন্য সেখানে কি অপেক্ষা করছে? যোহন ৪:৩-৪৩.

▪শমরীয় নারী কেন আশ্চর্য্য হল যখন যীশু তার সঙ্গে কথা বলেন?

▪যীশু তাকে জীবন্ত জল এবং কোথায় উপাসনা করতে হবে সেই সম্বন্ধে কি শিক্ষা দেন?

▪ কিভাবে যীশু তার কাছে প্রকাশ করেন তিনি কে, আর এই প্রকাশ এত আশ্চর্য্যজনক কেন?

▪ কি সাক্ষ্যের কাজ শমরীয় নারী করে আর তার ফল কি হয়?

▪ যীশুর খাদ্য কিভাবে শস্যছেদনের সাথে জড়িত?

▪ যীশু ৩০ সা.শ. নিস্তারপর্বের পর তাঁর পরিচর্য্যা কার্যে কতকাল যিহূদীয়াতে ছিলেন তা আমরা কি করে নির্ণয় করতে পারি?