সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একটি বাদানুবাদের কেন্দ্রবিন্দু

একটি বাদানুবাদের কেন্দ্রবিন্দু

অধ্যায় ৪১

একটি বাদানুবাদের কেন্দ্রবিন্দু

শিমোনের গৃহে ভোজে যোগ দেবার পর, যীশু গালীলে তাঁর দ্বিতীয় প্রচারের অভিযান শুরু করেন। এই প্রদেশে তাঁর গত পরিদর্শন কালে, তাঁর সাথে কেবল তাঁর প্রথম শিষ্যরা ছিলেন, পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহন। কিন্তু এখন তাঁর ১২ জন প্রেরিত, ও কিছু নারীরা, তাঁর সাথে আছে। এর মধ্যে আছে মগ্দলীনী মরিয়ম, শোশন্না ও যোহানা, যার স্বামী হেরোদ রাজার একজন উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী।

যীশুর প্রচার কাজ যত তীব্র হয়, তাঁর কাজকে ঘিরে বাদানুবাদও তত বাড়ে। একজন ভূতগ্রস্ত লোক, যে অন্ধ ও কথা বলতে পারে না, তাকে যীশুর কাছে নিয়ে আসা হয়। যখন যীশু তাকে সুস্থ করেন, যাতে সে এই মন্দ আত্মা থেকে মুক্ত হয় ও কথা বলতে এবং দেখতে পায়, সেই বিরাট জনতা তা দেখে মুগ্ধ হয়। তারা বলতে আরম্ভ করে: “ইনিই কি সেই দায়ূদ সন্তান?”

এত ভিড় একত্র হয় যে গৃহে যীশু ছিলেন তার চারপাশে যে তিনি এবং তাঁর শিষ্যরা ভোজনও করতে পারেন না। যারা তাঁকে প্রতিজ্ঞাত “দায়ূদ সন্তান” বলে ভাবছিল তারা ছাড়া, যিরূশালেম থেকে অধ্যাপকরা ও ফরীশীরা এসেছিল তাঁর দুর্নাম করতে। যখন যীশুর আত্মীয়রা এই গোলমাল সম্বন্ধে শোনে যা তাঁর চারিদিকে ঘটছে, তারা আসে তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে। কি কারণের জন্য?

কারণ, যীশুর নিজের ভাইরা তখন অবধি বিশ্বাস করে না যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। আর, যে গোলমাল ও বিবাদ তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে সেই চরিত্রের যীশুকে তারা নাসরতে বড় হবার সময় দেখেনি। তাই, তারা বিশ্বাস করে যে যীশুর মানসিকভাবে কিছু সমস্যা হয়েছে। “এর মস্তিধের ভ্রম হইয়াছে,” তারা এই উপসংহারে আসে, আর তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে চায়।

কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণ পরিষ্কার দেখায় যে যীশু একজন ভূতগ্রস্ত লোককে ভাল করেছেন। অধ্যাপকরা ও ফরীশীরা জানে তারা এই বাস্তবকে অস্বীকার করতে পারবে না। তাই যীশুকে ছোট করার জন্য তারা লোকদের বলে: “এ ব্যক্তি আর কিছুতে নয়, কেবল ভূতগণের অধিপতি বেল্‌সবূলের দ্বারাই ভূত ছাড়ায়।”

তাদের হৃদয়ের কথা জেনে, যীশু ফরীশী ও অধ্যাপকদের তাঁর নিকট ডেকে বলেন: “যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়; এবং যে কোন নগর কিম্বা পরিবার আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা স্থির থাকিবে না। আর শয়তান যদি শয়তানকে ছাড়ায়, সে ত আপনারই বিপক্ষে ভিন্ন হইল; তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে?”

কি বিধ্বস্তকারী যুক্তি! যেহেতু ফরীশীরা দাবি করে যে তাদের পদের লোকেরা ভূত ছাড়ায়, যীশু তাদের জিজ্ঞাসা করেন: “আর আমি যদি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা কাহার দ্বারা ছাড়ায়?” আর এক কথায়, যীশু তাদের অভিযোগ তাদের বিপক্ষেই আনেন। যীশু এরপর সাবধান করেন: “কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য নিশ্চিত তোমাদের উপর আসিয়া পড়িয়াছে।”

ইহা বোঝাতে যে ভূতেদের বার করতে পারা প্রমাণ দেয় যে শয়তানের উপর তাঁর ক্ষমতা আছে, যীশু বলেন: “আর অগ্রে সেই বলবান ব্যক্তিকে না বাঁধিয়া কে কেমন করিয়া সেই বলবানের গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহার ঘরের দ্রব্য লুট করিতে পারিবে? বাঁধিলে পরেই সে তাহার ঘর লুট করিবে। যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ; এবং যে আমার সাথে কুড়ায় না, সে ছড়াইয়া ফেলে।” ফরীশীরা সরাসরি যীশুর বিপক্ষে, এবং প্রদর্শন করে যে তারা শয়তানের অনুচর। তারা ইস্রায়েলীয়দের তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

সেই কারণে, যীশু এই দুষ্ট বিপক্ষতাকারীদের সাবধান করেন “পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হইবে না।” তিনি ব্যাখ্যা করেন: “যে কেহ মনুষ্য পুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে না, ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়।” এই অধ্যাপক ও ফরীশীরা ক্ষমাহীন পাপ করছে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার আশ্চর্য্য কাজকে শয়তানের বলে অখ্যা দিয়ে। মথি ১২:২২-৩২; মার্ক ৩:১৯-৩০; যোহন ৭:৫.

▪ কিভাবে যীশুর গালীলের দ্বিতীয় ভ্রমণ প্রথমটির থেকে আলাদা?

▪ কেন যীশুর আত্মীয়রা তাঁকে ধরতে আসে?

▪ কিভাবে ফরীশীরা যীশুর আশ্চর্য্য কাজকে ছোট করতে চায়, আর যীশু তা কিভাবে খণ্ডন করেন?

▪ সেই ফরীশীরা কিসের দোষে দোষী, এবং কেন?