সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক ফরীশীর দ্বারা আপ্যায়িত

এক ফরীশীর দ্বারা আপ্যায়িত

অধ্যায় ৮৩

এক ফরীশীর দ্বারা আপ্যায়িত

যীশু এখনও সেই প্রধান ফরীশীর বাড়ীতে রয়েছেন আর সবেমাত্র সেই জলোদরীকে সুস্থ করেছেন। যখন লক্ষ্য করলেন অন্যান্য নিমন্ত্রিত লোকেরা প্রধান প্রধান আসন মনোনীত করছে, তিনি নম্রতার উপর এক শিক্ষা দিলেন।

“যখন কেহ তোমাকে বিবাহ ভোজে নিমন্ত্রণ করে,” যীশু বলে চলেন, “তখন প্রধান আসনে বসিও না। কি জানি, তোমা হইতে অধিক সম্মানিত আর কোন লোক তাহার দ্বারা নিমন্ত্রিত হইয়াছে, আর যে ব্যক্তি তোমাকে ও তাহাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছে, সে আসিয়া তোমাকে বলিবে, ‘ইহাকে স্থান দেও।’ আর তখন তুমি লজ্জিত হইয়া নিম্মতম স্থান গ্রহণ করিতে যাইবে।”

তাই যীশুর পরামর্শ: “কিন্তু তুমি যখন নিমন্ত্রিত হও তখন নিম্নতম স্থানে গিয়া বসিও; তাহাতে যে ব্যক্তি তোমাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছে, সে যখন আসিবে, তোমাকে বলিবে, ‘বন্ধু, উচ্চতর স্থানে গিয়া বস।’ তখন যাহারা তোমার সহিত বসিয়া আছে, সেই সকলের সাক্ষাতে তোমার গৌরব হইবে।” শেষে, যীশু বললেন: “কেননা যে কেহ অপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে, অর যে কেহ অপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।”

এরপর, যীশু যে ব্যক্তি তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল সেই ফরীশীকে পরামর্শ দিলেন কিভাবে এক ভোজ ঈশ্বরের কাছে পুরস্কারযোগ্য হয়। “তুমি যখন মধ্যাহ্ন-ভোজ কিম্বা রাত্রি-ভোজ প্রস্তুত কর, তখন তোমার বন্ধুগণকে, বা তোমার ভ্রাতাদিগকে বা তোমার জ্ঞাতিদিগকে কিম্বা ধনী প্রতিবাসীগণকে ডাকিও না। কি জানি তাহারাও তোমাকে পাল্টা নিমন্ত্রণ করিবে, আর তুমি প্রতিদান পাইবে। কিন্তু তুমি যখন ভোজ প্রস্তুত কর, তখন দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে নিমন্ত্রণ করিও; তাহাতে ধন্য হইবে, কেননা তোমার প্রতিদান করিতে তাহাদের কিছুই নাই।”

এই ধরনের ভোজে অসহায় মানুষদের খাদ্যদান করলে দানকারীর আনন্দ নিয়ে আসবে, যীশু তাঁর নিমন্ত্রণকারীকে যেমন বলেন “ধার্ম্মিকগণের পুনরুত্থান সময়ে তুমি প্রতিদান পাইবে।” যীশুর এই ধরনের উচ্চপ্রকৃতির ভোজটির বর্ণনা এক সহনিমন্ত্রিত ব্যক্তিকে আর এক ধরনের ভোজের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। এই অতিথি বলল, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে ঈশ্বরের রাজ্যে ভোজন করিবে।” তবুও, সবাই সেই আনন্দের প্রত্যাশা উপযুক্তভাবে মূল্যবান রূপে গণ্য করে না, সেটি যীশু এক দৃষ্টান্তের সাহায্যে ব্যাখ্যা করে চললেন।

“কোন এক ব্যক্তি বড় এক ভোজ প্রস্তুত করিয়া অনেককে নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে আপন দাস দ্বারা . . . নিমন্ত্রিতদিগকে বলিয়া পাঠাইলেন, ‘আইস, এখন সকলই প্রস্তুত।’ তাহারা তখন সকলেই একমত হইয়া ক্ষমাভিক্ষা করিতে লাগিল। প্রথম জন তাহাকে কহিল, ‘আমি একখানি ক্ষেত্র আয় করিলাম, তাহা দেখিতে না গেলে নয়; বিনতি করি আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে।’ আর একজন কহিল, ‘আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনিলাম, তাহাদের পরীক্ষা করিতে যাইতেছি; বিনতি করি, আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে।’ আর একজন কহিল, ‘আমি বিবাহ করিলাম, এই জন্য যাইতে পারিতেছি না।’”

কি তুচ্ছ অজুহাত! এক ক্ষেত্র বা বলদ কিনবার আগে সাধারণত দেখতে যেতে হয়, সুতরাং দেখবার জন্য পরে প্রকৃত কোনও জরুরী বিষয় থাকে না। ঠিক সেইরকমই, কোন ব্যক্তির বিবাহ তাকে ঐ ধরনের কোনও দরকারী নিমন্ত্রণ রক্ষায় বাধা দিতে পারে না। সুতরাং এই সমস্ত অজুহাত শুনে, প্রভু রেগে গেলেন এবং দাসকে আদেশ দিলেন:

“‘শীঘ্র বাহির হইয়া নগরের পথে পথে ও গলিতে গলিতে যাও, দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে এখানে আন।’ পরে সেই দাস কহিল, ‘প্রভু, আপনি যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করা গেল, আর এখনও স্থান আছে।’ তখন প্রভু দাসকে কহিলেন, ‘বাহির হইয়া রাজপথে রাজপথে ও বেড়ায় বেড়ায় যাও, এবং আসিবার জন্য লোকদিগকে পীড়াপীড়ি কর, যেন আমার গৃহ পরিপূর্ণ হয়। . . . ঐ নিমন্ত্রিতদের মধ্যে একজনও আমার ভোজের আস্বাদ পাইবে না।’”

কি পরিস্থিতি এই দৃষ্টান্তের দ্বারা ব্যাখ্যা করা হল? এই “প্রভু” যিনি ভোজ দিচ্ছেন তিনি হলেন যিহোবা ঈশ্বর; “দাস” যিনি এই আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, তিনি যীশু খ্রীষ্ট; এবং এই “বড় এক ভোজ” হল, স্বর্গ রাজ্যের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার সুযোগসকল।

সবার পূর্বে, সঙ্গতিপূর্ণ হতে প্রথমে যারা রাজ্যের জন্য নিমন্ত্রণ প্রাপ্ত হল, তারা যীশুর দিনের যিহূদী ধর্মীয় নেতারা। যাইহোক, তারা নিমন্ত্রণ অস্বীকার করে। এইভাবে, ৩৩ সা.শ. পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে বিশেষ করে আরম্ভ হয় দ্বিতীয় নিমন্ত্রণের প্রসার যিহূদী জাতির অবজ্ঞাত ও হীন লোকদের প্রতি। কিন্তু ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে ১,৪৪,০০০ স্থান পূর্ণ করতে যথেষ্ট লোকেরা সাড়া দিল না। ফলে ৩৬ সা.শ. সাড়ে তিন বছর পরে, তৃতীয় ও শেষ নিমন্ত্রণ প্রসারিত হল অছিন্নত্বক যিহূদী নয় এমন ব্যক্তিদের কাছে, আর সেই সংগ্রহ করার কাজ আমাদের দিন অবধি চলে আসছে। লূক ১৪:১-২৪.

▪ নম্রতার বিষয়ে যীশু কোন শিক্ষা দিলেন?

▪ কিভাবে এক নিমন্ত্রণকর্তা ঈশ্বরের কাছে পুরস্কারযোগ্য ভোজ দিতে পারে, এবং কেন ইহা তাকে আনন্দ এনে দেয়?

▪ কেন সেই নিমন্ত্রিতদের অজুহাত তুচ্ছ?

▪ যীশুর সেই “মহাভোজের” দৃষ্টান্ত কি বোঝাচ্ছে?