এক বাঞ্ছিত অতিমানবীয় শাসক
অধ্যায় ৫৩
এক বাঞ্ছিত অতিমানবীয় শাসক
যখন যীশু অলৌকিকভাবে হাজার হাজার জনকে খাওয়ান, তখন জনতা অত্যন্ত আশ্চর্য্য হয়। “উনি সত্যই সেই ভাববাদী, যিনি জগতে আসিতেছেন,” তারা বলে। তারা সিদ্ধান্তে আসে যে যীশু কেবলমাত্র মোশির থেকে মহান ভাববাদী তাই নয় কিন্তু তিনি এক অতি বাঞ্ছিত শাসকও হতে পারবেন। সুতরাং তাঁকে ধরে রাজা করার পরিকনো তারা করতে থাকে।
যীশু, কিন্তু, লোকে কি পরিকনো করছে তা জানতেন। সুতরাং তিনি জবরদস্তি তাদের হাতে পড়াকে খুব তাড়াতাড়ি এড়াতে চাইলেন। তিনি জনতাকে বিদায় করে শিষ্যদের নৌকাতে উঠতে এবং কফরনাহূমের দিকে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। এর পর তিনি বেরিয়ে গিয়ে পর্বতে গেলেন প্রার্থনার জন্য। আর সে রাতে যীশু সেখানে একা রইলেন।
ভোর হবার ঠিক কিছু আগেই যীশু তাঁর সুবিধাজনক উঁচু স্থানটি থেকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, সজোর বাতাসের ধাক্কায় ঢেউগুলি সমুদ্রে যেন ওলট পালট করছে। যেহেতু নিস্তারপর্ব কাছে, তাই প্রায় পূর্ণ চন্দ্রের আলোয় যীশু দেখলেন, যে নৌকায় তাঁর শিষ্যরা আছে, সেটি তীরে আসবার জন্য সেই ঢেউএর বিরুদ্ধে এগোতে চাইছে। তারা তাদের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে নৌকা বাইছে।
তা দেখে, যীশু পর্বত থেকে নেমে, ঢেউএর উপর দিয়ে হেঁটে নৌকার দিকে এগোতে থাকলেন। নৌকাটি তিন চার মাইল এগিয়ে গেছে, যখন যীশু এটির কাছে পৌঁছেছেন তবুও, তিনি এগিয়ে চলেছেন যেন তিনি নৌকা ছেড়ে আরও এগিয়ে যাচ্ছেন। যখন শিষ্যরা তাঁকে দেখলেন, চেঁচিয়ে উঠলেন, “এ যে অপচ্ছায়া!”
যীশু তখন তাদের সান্ত্বনা দিয়ে উত্তর দিলেন, “এ আমি, ভয় করিও না।”
তখন পিতর বললেন: “হে প্রভু, যদি আপনি হন, তবে আমাকে জলের উপর দিয়া আপনার নিকটে যাইতে আজ্ঞা করুন।”
“আইস!” যীশু উত্তর দেন।
তাহাতে, পিতর, নৌকা হতে নেমে, জলের উপর দিয়ে হেঁটে যীশুর কাছে চললেন। কিন্তু বাতাস দেখে তিনি ভয় পেলেন, এবং ডুবে যেতে যেতে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে বললেন, “হে প্রভু, আমাকে রক্ষা করুন!”
তখনই যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ধরলেন, আর বললেন: “হে অল্প বিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করিলে?”
এরপর পিতর ও যীশু নৌকায় উঠলেন, বাতাস থেমে গেল, আর শিষ্যরা আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন। কিন্তু তাদের কি তা হওয়া উচিৎ ছিল? যদি তারা “সেই রুটীর বিষয়ে অর্থ” বুঝতে পারতেন, সেই বিরাট অলৌকিক কার্যটি যেটি কয়েক ঘন্টা পূর্বে করেছিলেন, হাজার হাজার মানুষকে মাত্র পাঁচটি রুটী ও দুটি মাছ দিয়ে খাইয়েছিলেন তা উপলব্ধি করতেন, তাহলে তিনি যে জলের উপর দিয়ে হেঁটে এলেন ও বাতাসকে থামিয়ে দিলেন, তাতে আশ্চর্য্য হবার কোনও কিছুই নেই। এখন, যাইহোক, শিষ্যরা যীশুকে প্রণাম করে বললেন: “সত্যই আপনি ঈশ্বরের পুত্র।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই, তারা গিনেষরতে এসে উপস্থিত হলেন, এক সুন্দর, ফলদায়ী সমতলভূমি কফরনাহূমের কাছে। এখানে তারা নৌকাটিকে নোঙ্গর করলেন। কিন্তু তারা যখন তীরে উঠলেন, লোকে যীশুকে চিনতে পেরে চারিদিকের শহরে গিয়ে, যারা অসুস্থ তাদের খুঁজে বের করল। আর খাটে করে তাদের আনল, আর শুধুমাত্র তারা যীশুর বস্ত্রের থোপমাত্র স্পর্শ করেই সুস্থ হয়ে গেল।
ইতিমধ্যে, যে লোকেরা যীশুর হাজার হাজার জনকে খাদ্য খাওয়ানো লক্ষ্য করেছিল তারা দেখল যে যীশু চলে গেছেন। সুতরাং যখন তিবিরিয়া থেকে নৌকা এল, তাতে চড়ে বসে তারা যীশুর খোঁজে কফরনাহূমের দিকে যাত্রা করল। যখন তারা তাঁকে পেল, বলল: “রব্বি, আপনি এখানে কখন আসিয়াছেন?” যীশু তাদের ভর্ৎসনা করেন যা আমরা শীঘ্রই বুঝতে পারব। যোহন ৬:১৪-২৫; মথি ১৪:২২-৩৬; মার্ক ৬:৪৫-৫৬.
▪ হাজার হাজার জনকে আশ্চর্য্যজনকভাবে যীশু খাদ্য দেবার পর, লোকে তাঁকে নিয়ে কি করতে চাইল?
▪ যে পর্বতে তিনি একাকী চলে গিয়েছিলেন সেখান থেকে যীশু কি দেখতে পান, আর তারপর তিনি কি করেন?
▪ কেন শিষ্যদের এগুলি দেখে এত আশ্চর্য্য হওয়া উচিৎ নয়?
▪ তারা তীরে পৌঁছানোর পর কি ঘটল?