এক ভীতিজনক ঝড়কে স্তব্ধ করা
অধ্যায় ৪৪
এক ভীতিজনক ঝড়কে স্তব্ধ করা
যীশুর এই দিনটি কাজের মধ্য দিয়ে কেটেছে, যার মধ্যে ছিল সমুদ্র তটে সেই বিরাট জনতাকে শিক্ষা দেওয়া এবং পরে বিরলে তাঁর শিষ্যদের সেই দৃষ্টান্ত বুঝিয়ে দেওয়া। যখন সন্ধ্যা হয়ে এল, তিনি বলেন: “চল ওপারে যাই।”
গালীল সমুদ্রের পূর্বদিকে একটি অঞ্চল যার নাম দিকাপলি, যা এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে দি’কা, মানে “দশ” এবং প’লিস্, মানে “নগর।” দিকাপলির নগরগুলি গ্রীক সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল, অবশ্য কোন সন্দেহ নেই যে অনেক যিহূদীরাও এখানে বাস করতেন। এই এলাকায় যীশুর কাজ অবশ্য খুব সীমিত। আর তাঁর এই পরিদর্শনকালে, যেমন আমরা পরে দেখব, তিনি এখানে বেশীক্ষণ থাকতে পারেন না।
যখন যীশু অনুরোধ করেন ওপারে যাবার জন্য, শিষ্যরা তাঁকে নৌকায় করে নিয়ে যায়। কিন্তু, তাদের প্রস্থান, সকলে লক্ষ্য করে ফেলেছিল। শীঘ্রই অন্যরা নৌকায় তাদের পিছু নিল। অপর পার বেশী দূরে নয়। আসলে, গালীল সমুদ্র একটি বড় হ্রদের তুল্য যা ২১ কিলোমিটার লম্বা ও ১২ কিলোমিটার চওড়া।
যীশুকে দেখে বোঝা যায় যে তিনি ক্লান্ত। তাই, তারা তীর ছাড়ার কিছু পরে, যীশু নৌকার পেছনে গিয়ে, তাঁর মাথা বালিশে দিয়ে, ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর অনেক প্রেরিতরাই অভিজ্ঞ নাবিক, যারা গালীল সমুদ্রে অনেক মাছ ধরেছে। তাই তারা নৌকার দায়িত্ব নেয়।
কিন্তু এই যাত্রা খুব সহজ হয় না। কারণ হ্রদের উপর জলের তাপমাত্রা বেশ গরম, যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১৩ মিটার নিচে, আর নিকটবর্তী পর্বতগুলির ঠাণ্ডা হাওয়া যখন হঠাৎ হ্রদের উপর এসে পড়ে, তা ভারী ঝড়ের সৃষ্টি করে। আর এখন ঠিক তাই ঘটে। শীঘ্রই ঢেউগুলি নৌকার উপর আছড়ে পড়তে থাকে, সুতরাং প্রায় ডুবে যাবার উপক্রম হয়। কিন্তু, যীশু তখনও ঘুমাচ্ছেন!
অভিজ্ঞ নাবিকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করে নৌকা ঠিক রাখতে। কোন সন্দেহ নেই আগেও তারা ঝড়ের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু এবারে তাদের ক্ষমতায় আর কুলাচ্ছে না। তাদের জীবন সংশয়ে, তারা যীশুকে ঘুম থেকে তোলে। ‘হে গুরু, আপনার কি চিন্তা হইতেছে না? আমরা মারা পড়িলাম!’ তারা বিস্ময়ে বলে ওঠে। ‘আমাদের রক্ষা করুন, আমরা যে ডুবে যাচ্ছি!’
যীশু নিজে ঘুম থেকে উঠে, সেই ঝড়কে ও সমুদ্রকে এই আজ্ঞা করলেন: “নীরব হও! স্থির হও!” আর তখন সেই ঝড় বন্ধ হয় আর সমুদ্র শান্ত হয়। তাঁর শিষ্যদের দিকে ফিরে, তিনি জিজ্ঞাসা করেন: ‘তোমরা ভীত কেন? তোমাদের কি এখন অবধি বিশ্বাস নাই?’
আর তখন, এক অস্বাভাবিক ভয় শিষ্যদের গ্রাস করল। ‘সত্যই এই ব্যক্তি কে?’ তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে, কারণ ‘তিনি জল ও বাতাসকে আজ্ঞা করেন, আর তারা তার কথা শুনে।’
কি ক্ষমতাই না যীশু প্রদর্শন করেন! ইহা জানা কত আশ্বস্তজনক যে আমাদের যিনি রাজা তাঁর ক্ষমতা আছে প্রকৃতির উপর আর যখন তাঁর রাজ্যের অধীনে তিনি এই পৃথিবীর উপরে পূর্ণ দৃষ্টি দেবেন, তখন সকল ব্যক্তিরা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় না করে নিরাপত্তায় বাস করবে!
ঝড় থেমে যাবার কিছু পরে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা নিরাপদে পূর্বদিকের কূলে পৌঁছান। হয়ত অন্য নৌকাগুলিও ঝড়ের দাপট থেকে রক্ষা পেয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরে যায়। মার্ক ৪:৩৫–৫:১; মথি ৮:১৮, ২৩-২৭; লূক ৮:২২-২৬.
▪ দিকাপলি কি, আর তা কোথায় অবস্থিত?
▪ কি প্রাকৃতিক কারণগুলি দায়ী গালীল সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের জন্য?
▪ যখন তাদের নাবিকসুলভ দক্ষতা তাদের বাঁচাতে অসমর্থ হয়, শিষ্যরা তখন কি করে?