এক হারান পুত্রের গল্প
অধ্যায় ৮৬
এক হারান পুত্রের গল্প
ফরীশীদের কাছে এক হারান মেষ ও সিকির ফিরে পাওয়ার দৃষ্টান্তগুলি সবে মাত্র শেষ হয়েছে, যীশু এখন আর একটি দৃষ্টান্ত বলে চললেন। এটি হল এক প্রেমময় পিতা ও তার দুই পুত্রের সঙ্গে ব্যবহার সম্পর্কে, যাদের প্রত্যেকেরই গুরুতর দোষ আছে।
প্রথমে, কনিষ্ঠ পুত্র, যে এই দৃষ্টান্তে প্রধান চরিত্র। সে তার উত্তরাধিকারের অংশ নিল, যা তার পিতা ইতস্ততঃ না করে সমস্ত দিয়ে দিল। সে তারপর ঘর ছেড়ে খুব অনৈতিক জীবনযাপনে জড়িয়ে পড়ল। কিন্তু কিভাবে যীশু গল্পটি বলছেন তা শুনুন, আর বুঝতে পারছেন কি না দেখুন এখানে চরিত্রগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করছে কারা।
“এক ব্যক্তির,” যীশু শুরু করলেন, “দুই পুত্র ছিল। তাহাদের মধ্যে কনিষ্ঠ আপন পিতাকে বলিল, ‘সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তাহা আমাকে দাও।’ তাহাতে তিনি [পিতা] তাহাদের মধ্যে ধন বিভাগ করে দিলেন।” এই কনিষ্ঠ পুত্র যা পেল তা দিয়ে সে কি করল?
“অল্পদিন পরে,” যীশু ব্যাখ্যা করছেন, “সেই কনিষ্ঠ পুত্র সমস্ত একত্র করিয়া লইয়া দূরদেশে চলিয়া গেল, আর তথায় সে অনাচারে নিজ সম্পত্তি উড়াইয়া দিল।” আসলে, সে বারবণিতাদের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে অর্থ খরচ করে ফেলল। এরপর কষ্টের সময় এল, যেমন যীশু বর্ণনা দিয়ে চললেন:
“সে সমস্ত ব্যয় করিয়া ফেলিলে পর সেই দেশে ভারী আকাল হইল, তাহাতে সে কষ্টে পড়িতে লাগিল। তখন সে গিয়া সেই দেশের একজন গৃহস্থের আশ্রয় লইল। আর সে তাহাকে শূকর চরাইবার জন্য আপনার মাঠে পাঠাইয়া দিল; তখন শূকরে যে শুঁটী খাইত, তাহা দিয়া সে উদর পূর্ণ করিতে বাঞ্ছা করিত, আর কেহই তাহাকে দিত না।”
ইহা কতই নীচে নামা যে শূকর চরাতে বাধ্য হওয়া, কারণ ব্যবস্থা অনুযায়ী এই পশুরা অশুচি ছিল! তবে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিচ্ছিল সেই পুত্রকে ভীষণ ক্ষুধা, যার জন্য শূকরের খাদ্য খাবার জন্য সে ইচ্ছুক ছিল। তার ভয়ঙ্কর কষ্টের জন্য, যীশু বলেন, “সে চেতনা পাইল।”
গল্প চালিয়ে গিয়ে, যীশু ব্যাখ্যা দেন: “সে [নিজেকে] বলিল, ‘আমার পিতার কত মজুর বেশী খাদ্য পাইতেছে, কিন্তু আমি এখানে ক্ষুধায় মরিতেছি! আমি উঠিয়া আমার পিতার নিকটে যাইব, তাহাকে বলিব: “পিতঃ, স্বর্গের বিরুদ্ধে এবং তোমার সাক্ষাতে আমি পাপ করিয়াছি। আমি আর তোমার পুত্র নামের যোগ্য নই। তোমার একজন মজুরের মত আমাকে রাখ।”’ পরে সে উঠিয়া আপন পিতার নিকটে আসিল।”
এখানে কিছু বিবেচনার বিষয় আছে: যখন সে ঘর ছেড়ে দিচ্ছিল তখন পিতা যদি রেগে তার প্রতি চেঁচামেচি করত, তাহলে সেই পুত্র একবাক্যে কি করতে হবে তা ভাবত না। হয়তো সে তার নিজের দেশে ফিরে অন্য কোথাও চাকরীর সন্ধানে যেত যাতে তাকে বাবার সম্মুখীন না হতে হয়। কিন্তু, এই সমস্ত চিন্তা তার মনে এল না। সে তার ঘরেই যেতে চায়!
স্পষ্টতঃ, তাহলে যীশুর এই দৃষ্টান্তের পিতা হলেন আমাদের প্রেমময়, ক্ষমাশীল স্বর্গীয় পিতা যিহোবা ঈশ্বর। আপনি হয়ত চিনতে পারছেন সেই পথভ্রষ্ট অথবা অপব্যয়ী পুত্র প্রতিনিধিত্ব করছে পরিচিত পাপীদের। ফরীশীরা, যাদের সাথে যীশু কথা বলছেন, তারা এর পূর্বে তাঁকে বিদ্রূপ করেছে এই ধরনের লোকের সাথে ভোজন করার জন্য। কিন্তু বড় ছেলে কাদের চিত্রিত করে?
যখন হারান পুত্রকে পাওয়া গেল
যখন যীশুর দৃষ্টান্তের সেই হারান, বা অপব্যয়ী পুত্র, তার পিতার বাড়ী ফিরে এল, কি ধরনের অভ্যর্থনা পেল? শুনুন যেমন যীশু বর্ণনা করছেন:
“সে দূরে থাকিতেই তাহার পিতা তাহাকে দেখিতে পাইলেন, ও করুণাবিষ্ট হইলেন, আর দৌড়িয়া গিয়া তাহার গলা ধরিয়া চুম্বন করিতে থাকিলেন।” কত ক্ষমাশীল, ও সহৃদয় পিতা, এ ক্ষেত্রে আমাদের স্বর্গীয় পিতা, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিরূপ!
হয়তো পিতা পুত্রের অনাচারের জীবন যাত্রার বিষয়ে শুনেছেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ অভ্যর্থনা করলেন, সবিস্তারে কারণ শুনতে অপেক্ষা করে রইলেন না। যীশুরও এই ধরনের অভ্যর্থনা পূর্ণ মনোভাব আছে, পাপী ও করগ্রাহীদের কাছে নিজে এগিয়ে গেছেন, যারা এই দৃষ্টান্তে অপব্যয়ী পুত্রকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
সত্যই, যীশুর দৃষ্টান্তের বিবেচক পিতা সন্দেহ নেই যে তার পুত্রের অনুতপ্ত মনটি বুঝে গেছিলেন, তার দুঃখার্ত্ত ও অবসাদগ্রস্ত চেহারার দ্বারা যখন সে ফিরে এসেছিল। কিন্তু পিতার প্রেমপূর্ণরূপে এগিয়ে আসার জন্য পুত্রের পক্ষে সহজ হয়েছিল নিজ পাপ স্বীকার করার, যেমন যীশু বলছেন: “সেই পুত্র তাহাকে বলিল, ‘পিতঃ, স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার সাক্ষাতে আমি পাপ করিয়াছি। আমি তোমার পুত্র নামের যোগ্য নই। তোমার একজন মজুরের মত আমাকে রাখ।’”
তবুও, কথা কটি তখনও শেষ হয়নি যখন তার পিতা সক্রিয় হলেন, তিনি দাসদের আদেশ দিলেন: “শীঘ্র করিয়া সবচেয়ে ভাল কাপড়খানি আন। আর ইহাকে পরাইয়া দাও, এবং ইহার হাতে অঙ্গুরী দাও, পায়ে জুতা দাও। আর হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটি আনিয়া মার; আমরা ভোজন করিয়া আমোদ প্রমোদ করি। কারণ আমার এই পুত্র মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।” তাহাতে “তাহারা আমোদ প্রমোদ” করিতে লাগিল।
এর মধ্যে, পিতার “জ্যেষ্ঠ পুত্র ক্ষেত্রে ছিল।” আপনি দেখুন আনুমান করতে পারছেন কিনা এ কাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, সমস্ত গল্পটি শোনার পর। যীশু জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্বন্ধে বললেন: “পরে সে আসিতে আসিতে যখন বাটীর নিকটে পৌঁছিল, তখন বাদ্য ও নৃত্যের শব্দ শুনিতে পাইল। আর সে একজন দাসকে কাছে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এ সকল কি। সে তাহাকে কহিল, ‘তোমার ভাই আসিয়াছে, এবং তোমার পিতা হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটি মারিয়াছেন, কেননা তিনি তাহাকে সুস্থ পাইয়াছেন।’ তাহাতে সে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল, ভিতরে যাইতে চাহিল না। তখন তাহার পিতা বাহিরে আসিয়া তাহাকে সাধ্যসাধনা করিলেন। কিন্তু সে উত্তর করিয়া পিতাকে কহিল, ‘দেখ, এত বৎসর আমি তোমার সেবা করিয়া আসিতেছি, কখনও তোমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করি নাই, তথাপি কখনও একটি ছাগ বৎসও দাও নাই, যেন আমি নিজ মিত্রগণের সঙ্গে আমোদ প্রমোদ করিতে পারি। কিন্তু তোমার এই যে পুত্র বেশ্যাদের সঙ্গে তোমার ধন খাইয়া ফেলিয়াছে, সে যখন আসিল, তাহারই জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটি মারিলে।’”
এই জ্যেষ্ট পুত্রের মত, কারা পাপীদের ক্ষমা ও মনোযোগের প্রতি সমালোচক ছিল? এরা কি ফরীশী ও ব্যবস্থাবেত্তাগণ নয়? তারা যীশুর সমালোচনা করে যেহেতু তিনি পাপীদের অভ্যর্থনা করেন, আর সেটাই এই দৃষ্টান্ত দিতে প্রণোদিত করেছিল যীশুকে, স্বভাবতই তারাই এই জ্যেষ্ঠ পুত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।
যীশু তাঁর গল্প শেষ করলেন জ্যেষ্ঠ পুত্রের প্রতি পিতার এই আবেদনের দ্বারা: “বৎস, তুমি সর্বদাই আমার সঙ্গে আছ, আর যাহা যাহা আমার, সকলই তোমার; কিন্তু আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিৎ হইয়াছে, কারণ তোমার ভাই মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।”
যীশু এরপর অকথিত রেখেছেন সেই জ্যেষ্ঠ পুত্র কি করেছিল। তবে পরে, যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর, “যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইল,” হয়তো এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন কিছু এই সব “জ্যেষ্ঠ পুত্র” শ্রেণীর লোক, যাদের সঙ্গে যীশু এখানে কথা বলছেন।
কিন্তু আধুনিক দিনে এই দুই পুত্রের প্রতিনিধিত্ব কারা করছে? এরা হচ্ছে তারা যারা যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যথেষ্ট জানে ও যার ফলে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে তাদের এক ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। এই জ্যেষ্ঠপুত্র প্রতিনিধিত্ব করছে “ক্ষুদ্র মেষপালের” অথবা “স্বর্গে লিখিত প্রথমজাতদের মণ্ডলীর” কিছু সদস্যদের। তারা এমন মনোভাব গ্রহণ করে যা সেই জ্যেষ্ঠ পুত্রের মত। তাদের কোন অভিপ্রায় ছিল না এই পার্থিব শ্রেণীকে “অপর মেষদের” আমন্ত্রণ করবার, যারা মনে করছিল তারা সব মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে।
সেই অপব্যয়ী পুত্র, অন্যদিকে, তাদের চিত্রিত করে যারা জগত তাদের যা দিতে চায় সেই আনন্দ উপভোগ করার জন্য ঈশ্বরের লোকেদের ছেড়ে চলে যায়। সময়ে, অবশ্য, তারা মনপরিবর্ত্তন করে ও আবার ঈশ্বরের সক্রিয় দাস হয়। সত্যই, কতই প্রেমময় ও করুণাময় পিতা তাদের প্রতি যারা উপলব্ধি করে তাদের ক্ষমার প্রয়োজনীয়তা ও তাঁর কাছে ফেরৎ আসে! লূক ১৫:১১-৩২; লেবীয় পুস্তক ১১:৭, ৮; প্রেরিত ৬:৭; লূক ১২:৩২; ইব্রীয় ১২:২৩; যোহন ১০:১৬.
▪ যীশু কাদের এই দৃষ্টান্ত, বা গল্পটি বলছেন, এবং কেন?
▪ এই গল্পের প্রধান চরিত্র কে, এবং তার কি হয়?
▪ যীশুর দিনে এই পিতা ও কনিষ্ঠ পুত্র কাদের প্রতিনিধিত্ব করেছে?
▪ যীশু কিভাবে তাঁর দৃষ্টান্তে করুণাময় পিতার উদাহরণের অনুকরণ করছেন?
▪ জ্যেষ্ঠ পুত্রের মনোভাব তার ভাইকে অভ্যর্থনার বিষয়ে কিরূপ ছিল, এবং কিভাবে ফরীশীরা জ্যেষ্ঠপুত্রের মত ব্যবহার করল?
▪ যীশুর দৃষ্টান্তটি আমাদের দিনে কি ভাবে প্রয়োগ করা যায়?