করুণা প্রদর্শনের এক শিক্ষা
অধ্যায় ৪০
করুণা প্রদর্শনের এক শিক্ষা
যীশু হয়ত এখনও নায়িনে আছেন, যেখানে তিনি সম্প্রতি একজন বিধবার ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছেন, আথবা তিনি নিকটবর্তী কোন নগর পরিদর্শন করছেন। একজন ফরীশী যার নাম শিমোন সে নিকট থেকে যিনি এই আশ্চর্য্য কাজ করছেন তাঁকে দেখতে চাইছিল। সেই জন্য সে যীশুকে ভোজে নিমন্ত্রণ করে।
এই সুযোগ উপস্থিত অন্যদের প্রতি পরিচর্য্যায় ব্যবহার করার জন্য, যীশু সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, যেমন তিনি পাপী ও করগ্রাহীদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, শিমোনের গৃহে, অতিথিদের প্রতি যে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়, তিনি তা পান না।
চটি পরে ধুলোর রাস্তায় হাঁটলে পা গরম ও নোংরা হয়ে যায়, আর অতিথেয়তা দেখানোর একটি কাজ হল অতিথিদের পা ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়া। কিন্তু যীশুর পা ধুইয়ে দেওয়া হয়নি। তাঁকে অভ্যর্থনার যে চুম্বন তাও দেওয়া হয় না, যা সাধারণ রীতি। আর তাঁর চুলের জন্য রীতি অনুযায়ী তেল দেওয়া হয়নি।
যখন খাওয়া চলছিল, এবং অতিথিরা সকলে মেজে বসে ছিলেন, আমন্ত্রিত নয় এমন একজন মহিলা ঘরে প্রবেশ করে। নগরে সকলে জানে যে সে অনৈতিক জীবন যাপন করে। সে হয়ত যীশুর শিক্ষা শুনেছে, যার অন্তর্ভুক্ত তাঁর আহ্বান ‘যারা ভারগ্রস্ত যেন তাঁর কাছে আসে ও নব শক্তি পায়।’ আর সে যা শুনেছে তাতে প্রভাবিত হয়ে, এখন যীশুকে খুঁজে বার করেছে।
সেই নারী এসে যীশুর পিছনে দাঁড়ায় এবং হাঁটু গেড়ে তাঁর পায়ের কাছে বসে। তার চোখের জল তাঁর পায়ে পড়ে, সেই জল সে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দেয়। আর সে তার সাথে আনা সুগন্ধি তেল তাঁর পায়ে ঢেলে দেয়, ও স্নেহপূর্বক তাঁর পা চুম্বন করে। অনুমোদন না করে শিমোন দেখে। “এ যদি ভাববাদী হইত,” সে চিন্তা করে, “তবে জানিতে পারিত, ইহাকে যে স্পর্শ করিতেছে, সে কে এবং কি প্রকার স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপিষ্ঠা।”
তার চিন্তা বুঝে, যীশু বলেন: “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”
“গুরু, বলুন!” সে বলল।
“এক মহাজনের দুইজন ঋণী ছিল,” যীশু শুরু করেন। “একজন ধারিত পাঁচ শত সিকি, আর একজন পঞ্চাশ। তাহাদের পরিশোধ করার সঙ্গতি না থাকাতে তিনি উভয়কেই ক্ষমা করিলেন। ভাল, তাহাদের মধ্যে কে তাহাকে অধিক প্রেম করিবে?”
“আমার বোধ হয়,” শিমোন বলে, হয়ত একটু তাচ্ছিল্য ভাবে প্রশ্নের তাৎপর্য্য বুঝতে না পেরে, “যাহার অধিক ঋণ ক্ষমা করিলেন, সেই।”
“যথার্থ বিচার করিলে,” যীশু বলেন। আর তারপর স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে, তিনি শিমোনকে বলেন: “এই স্ত্রীলোকটি দেখিতেছ? আমি তোমার বাটিতে প্রবেশ করিলাম, তুমি আমার পা ধুইবার জল দিলে না। কিন্তু এই স্ত্রীলোকটি চোখের জলে আমার পা ভিজাইয়াছে ও নিজের চুল দ্বারা তাহা মুছাইয়া দিয়াছে। তুমি আমাকে চুম্বন করিলে না, কিন্তু যে অবধি আমি ভিতরে আসিয়াছি, এ আমার চরণ চুম্বন করিতেছে, ক্ষান্ত হয় নাই। তুমি তৈল দিয়া আমার মস্তক অভিষিক্ত করিলে না, কিন্তু এ সুগন্ধি দ্রব্যে আমার চরণ অভিষিক্ত করিয়াছে।”
এই স্ত্রীলোক তার বিগত অনৈতিক জীবনের জন্য হৃদয় থেকে যে অনুতপ্ত তার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। তাই যীশু, এই বলে শেষ করেন: “আর এই জন্য তোমাকে কহিতেছি, ইহার যে বহু পাপ, তাহার ক্ষমা হইয়াছে, কেননা এ অধিক প্রেম করিল; কিন্তু যাহাকে অল্প ক্ষমা করা যায়, সে অল্প প্রেম করে।”
যীশু কোনভাবে অনৈতিকতার পক্ষে ওজর দেখাবার বা অনুমোদন করার চেষ্টা করছেন না। কিন্তু তিনি, তাদের প্রতি করুণা দেখাচ্ছেন যারা জীবনে ভুল করে কিন্তু দেখায় যে তারা তার জন্য দুঃখিত ও খ্রীষ্টের কাছে আসে নিষ্কৃতি পাবার জন্য। সেই নারীকে সত্যই নব-শক্তি দান করে, যীশু বলেন: “তোমার পাপ ক্ষমা হইয়াছে . . . তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরিত্রাণ করিয়াছে; শান্তিতে প্রস্থান কর।” লূক ৭:৩৬-৫০; মথি ১১:২৮-৩০.
▪ কিভাবে যীশুকে তাঁর নিমন্ত্রণকারী শিমোন সমাদর করে?
▪ কে যীশুকে খুঁজে বার করে এবং কেন?
▪ কি উপমা যীশু দেন, আর কিভাবে তা তিনি ব্যবহার করেন?