সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কি মানুষকে অশুচি করে?

কি মানুষকে অশুচি করে?

অধ্যায় ৫৬

কি মানুষকে অশুচি করে?

যীশুর প্রতি বিরোধিতা বেড়েই চলে। শুধুমাত্র তাঁর কতকগুলি শিষ্য তাঁকে ছেড়ে চলে যায় তাই নয়, কিন্তু যিহূদীয়ার যিহূদীরাও তাঁকে হত্যার চেষ্টা করছিল, যেমন তারা করেছিল তিনি যখন ৩১ সা.শ. নিস্তারপর্বে যিরূশালেমে ছিলেন।

এখন ৩২ সা.শ. নিস্তারপর্ব। সবেত, উপস্থিত থাকার ঐশ্বরিক আবশ্যকতা অনুযায়ী, যীশু যিরূশালেমে গেলেন এই নিস্তারপর্ব পালন করতে। তবুও তিনি খুব সতর্কতার সঙ্গে রইলেন কারণ তাঁর জীবন বিপদাপন্ন। এরপর তিনি গালীলে ফিরে এলেন।

যীশু সবেত কফরনাহূমেই রয়েছেন আর ফরীশী ও অধ্যাপকেরা যিরূশালেম থেকে তাঁর কাছে আসেন। তারা ধর্মীয় ব্যবস্থা ভঙ্গের কোন সূত্র ধরে তাঁকে দোষী করতে পারে তারই খোঁজে রয়েছে। “আপনার শিষ্যগণ কি জন্য প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি লঙ্ঘন করে?” তারা জিজ্ঞাসা করে: “উদাহরণস্বরূপ, আহার করিবার সময় তারা হাত ধোয় না।” ইহা কিন্তু ঈশ্বরীয় উদ্দেশ্যে আবশ্যকীয় নয়, তবুও ফরীশীরা এই পরম্পরাগত প্রথা যার অন্তর্গত ছিল কনুই পর্যন্ত ভাল করে ধোয়া, তা পালন না করাকে গুরুত্বপূর্ণ দোষ মনে করে।

তাদের দোষারোপের উত্তর না দিয়ে, যীশু তাদের দুষ্ট ও স্বেচ্ছাকৃতরূপে ঐশিক ব্যবস্থা অমান্য করার বিষয়ে উল্লেখ করলেন। “তোমাদের পরম্পরাগত বিধি পালনের নিমিত্ত তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা বিলক্ষণ অমান্য করিতেছ কেন?” তিনি জানতে চাইলেন। “ঈশ্বর বলিয়াছেন, ‘তুমি আপন পিতাকে ও মাতাকে সমাদর কর,’ এবং ‘যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড হউক।’ কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, ‘যে ব্যক্তি পিতাকে কিম্বা মাতাকে বলে: “আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে,” সে আপন পিতাকে বা আপন মাতাকে আর সমাদর করিবে না।’”

সত্যই, ফরীশীদের শিক্ষা অনুযায়ী, অর্থ, সম্পত্তি বা যে কোন বস্তু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত, তা মন্দিরেরই অধিকারে, আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা ব্যবহৃত হবে না। আসলে, কিন্তু, উৎসর্গীকৃত দান সেই ব্যক্তিরই কাছে থাকে, যে এই উৎসর্গ করেছে। এই উপায়ে এক পুত্র শুধুমাত্র বলে দিয়ে যে তার অর্থ বা সম্পত্তি “কর্ব্বান্‌”—এক দান, ঈশ্বরের বা মন্দিরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত—তার বৃদ্ধ পিতার বা মাতার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে, যারা হয়ত খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে।

ফরীশীরা ঐশিক ব্যবস্থাকে মন্দভাবে বিকৃত করায় উপযুক্তভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে যীশু বলেন: “এইরূপে তোমাদের সমর্পিত পরম্পরাগত বিধি দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিৰল করিতেছ। কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, যেমন লেখা আছে, ‘এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে। ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।’”

জনতা হয়ত একটু সরে দাঁড়িয়েছিল যাতে ফরীশীরা যীশুকে প্রশ্ন করার সুযোগ পায়। এখন, যখন ফরীশীদের কাছে যীশুর দৃঢ় ভর্ৎসনার কোন উত্তর নেই, তখন তিনি জনতাকে কাছে ডাকলেন। “তোমরা সকলে আমার কথা শুন,” তিনি বললেন, “ও বুঝ। মনুষ্যের বাহিরে এমন কিছুই নাই, যাহা তাহার ভিতরে গিয়া তাহাকে অশুচি করিতে পারে; কিন্তু যাহা যাহা মনুষ্য হইতে বাহির হয়, সেই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে।”

এরপরে, যখন তারা এক গৃহে প্রবেশ করে, তাঁর শিষ্যরা বলেন: “আপনি কি জানেন, এই কথা শুনিয়া ফরীশীরা বিদ্ধ পাইয়াছে?”

“আমার স্বর্গীয় পিতা যে সকল চারা রোপণ করেন নাই, সে সকল উপড়াইয়া ফেলা যাইবে,” যীশুর উত্তর। “উহাদিগকে থাকিতে দেও। উহারা অন্ধদের অন্ধ পথপ্রদর্শক। যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্তে পড়িবে।”

যীশু আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন, যখন কি মানুষকে অশুচি করে, শিষ্যদের হয়ে পিতর তার ব্যাখ্যা শুনতে চান। “তোমরাও কি এখন পর্য্যন্ত অবোধ রইয়াছ?” যীশু উত্তর দিলেন। “ইহা কি বুঝ না যে, যাহা কিছু মুখের ভিতরে যায়, তাহা উদরে যায়, পরে বহিঃস্থানে নিক্ষিপ্ত হয়? কিন্তু যাহা যাহা মুখ হইতে বাহির হয়, তাহা অন্তঃকরণ হইতে আইসে, আর তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। উদাহরণস্বরূপ, অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যা সাক্ষ্য, নিন্দা আইসে। এই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে; কিন্তু অধৌত হস্তে ভোজন করিলে মনুষ্য তাহাতে অশুচি হয় না।”

যীশু এখানে সাধারণ স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছেন না। তিনি এখানে যুক্তি দিলেন না যে একজনকে রান্নার বা খাবার আগে হাত ধুতে হবে না। বরং, যীশু ধর্মীয় নেতাদের ভণ্ডামীকে দোষারোপ করছেন, যারা সুচতুর ভাবে ঐশিক ধর্মীয় ব্যবস্থাকে, অশাস্ত্রীয় পরম্পরাগত রীতির দ্বারা নিজেদের সুবিধাজনক করে নেয়। হ্যাঁ, মন্দ কাজই মানুষকে অপবিত্র করে, আর যীশু দেখিয়ে দিলেন যে মানুষের হৃদয় থেকেই তা উৎপন্ন হয়। যোহন ৭:১; দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬; মথি ১৫:১-২০; মার্ক ৭:১-২৩; যাত্রাপুস্তক ২০:১২; ২১:১৭; যিশাইয় ২৯:১৩.

▪ কি ধরনের বিরোধীতার সম্মুখীন যীশুকে এখন হতে হয়?

▪ কি ধরনের দোষারোপ ফরীশীরা করে, কিন্তু যীশুর কথা অনুযায়ী, ফরীশীরা কিভাবে স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের ব্যবস্থা ভঙ্গ করত?

▪ যীশু কোন বিষয়গুলি দেখিয়ে দিলেন যা মানুষকে অপবিত্র করে?