সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কুটীরবাস পর্বের সময়ে

কুটীরবাস পর্বের সময়ে

অধ্যায় ৬৬

কুটীরবাস পর্বের সময়ে

যীশুর বাপ্তিস্মিত হবার পর প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেছে, আর তিনি সুপরিচিত হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার লোক তাঁর অলৌকিক কাজগুলি দেখেছেন, সমস্ত দেশে তাঁর কার্য্যাবলীর বিবরণ ছড়িয়ে গেছে। এখন, লোকেরা কুটীরবাস পর্বের জন্য যিরূশালেমে জমা হচ্ছে, তারা এখানেও তাঁকে খুঁজছে। “সেই ব্যক্তি কোথায়?” তারা জানতে চাইছে।

যীশু এখন এক বিতর্কমূলক ব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। “তিনি ভাল লোক,” কিছু জন বলছে। “তাহা নয়, বরং সে লোক সমূহকে ভুলাইতেছে,” অন্য লোকেরা বলছে। এই ধরনের ফুস্‌ফুস্‌ করে কথাবার্তা পর্বের প্রথম দিনগুলিতে উঠতে শুরু করেছে। তবুও যীশুর পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলবার সাহস কারও নেই। কারণ লোকেরা যিহূদী নেতাদের থেকে প্রতিশোধের ভয় করে।

পর্বের অর্দ্ধেক শেষ হবার পর, যীশু আসেন। তিনি মন্দির অবধি যান, সেখানে লোকে তাঁর অত্যাশ্চর্য্যমূলক শিক্ষাদান পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। যেহেতু যীশু রব্বি স্কুলে শিক্ষা নেননি, যিহূদীরা আশ্চর্য্য হয়ে ভাবে: “এ ব্যক্তি শিক্ষা না করিয়া কি প্রকারে শাস্ত্রজ্ঞ হইয়া উঠিল?”

“আমার উপদেশ আমার নহে,” যীশু ব্যাখ্যা করলেন, “কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার। যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর হইতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি।” যীশুর শিক্ষা ঈশ্বরের সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসারে। যার জন্য, তিনি ঈশ্বরের গৌরব চাইবেন, তাঁর নিজের নয়। “মোশি তোমাদিগকে কি ব্যবস্থা দেন নাই?” যীশু জিজ্ঞাসা করেন। ভর্ৎসনার সঙ্গে বললেন: “তথাপি তোমাদের মধ্যে কেহই সেই ব্যবস্থা পালন করে না।”

“কেন আমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ?” এবার যীশু জিজ্ঞাসা করেন।

জনতার মধ্যে, যারা এই পর্বে এসেছিল, তারা এই প্রচেষ্টা সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিল। তারা এটি ধারণাতীত মনে করে, এই অত্যাশ্চর্য্য শিক্ষককে কেন কেউ হত্যা করতে চাইবে। সুতরাং তাদের বিশ্বাস যে যীশুর কিছু একটা হয়েছে তাই এরকম চিন্তা করছেন। “তোমাকে ভূতে পাইয়াছে,” তারা বলে, “কে তোমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছে?”

যিহূদী নেতারা কিন্তু যীশুকে হত্যা করতে চাইছে, যদিও জনতা, এখনও তা বুঝছে না। দেড় বছর আগে যীশু যখন বিশ্রামবারে এক ব্যক্তিকে সুস্থ করেন, নেতারা তখন তাঁকে হত্যা করতে চায়। সুতরাং এখন যীশু তাদের অযৌক্তিকতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জিজ্ঞাসা করেন: “মোশির ব্যবস্থা লঙ্ঘন যেন না হয়, তজ্জন্য যদি বিশ্রামবারে মানুষে ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হয়, তবে আমি বিশ্রামবারে একটি মানুষকে সর্ব্বাঙ্গীন সুস্থ করিয়াছি বলিয়া আমার উপরে কি আধ করিতেছ? দৃশ্য মতে বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায্য বিচার কর।”

যিরূশালেমবাসীরা, যারা এই পরিস্থিতি জানত, তারা এখন বলল: “একি সেই নহে, যাহাকে তাহারা বধ করিতে চেষ্টা করেন? আর, দেখ! এ প্রকাশ্য রূপে কথা কহিতেছে, আর তাহারা ইহাকে কিছুই বলে না। অধ্যক্ষগণ কি বাস্তবিক জানেন যে, এ সেই খ্রীষ্ট?” এই যিরূশালেমবাসীরা ব্যাখ্যা দেন কেন তারা বিশ্বাস করে না যে যীশুই খ্রীষ্ট: “যাহা হউক, এ কোথা হইতে আসিল, তাহা আমরা জানি; খ্রীষ্ট যখন আইসেন, তখন তিনি কোথা হইতে আসিলেন, তাহা কেহ জানে না।”

যীশু উত্তর দেন: “তোমরা ত আমাকে জান, এবং আমি কোথা হইতে আসিয়াছি, তাহাও জান। আর আমি আপনা হইতে আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি সত্যময়; তোমরা তাঁহাকে জাননা। আমিই তাঁহাকে জানি, কেননা আমি তাঁহার নিকট হইতে আসিয়াছি, আর তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।” এতে লোকে তাঁকে ধরতে চেষ্টা করল, যাতে কারাগারে দিতে পারে বা তাঁকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু তারা সমর্থ হল না কারণ যীশুর মৃত্যুর সময় এখনও আসেনি।

তবুও, অনেকেই যীশুতে বিশ্বাস করল, যেমন তাদের করা উচিৎ। কারণ, তিনি জলের উপর হেঁটেছেন, বাতাসকে থামিয়েছেন, ঝড়বিক্ষুদ্ধ সমুদ্রকে শান্ত করেছেন, অলৌকিক ভাবে হাজার হাজার জনকে খাইয়েছেন কেবলমাত্র কটি রুটি ও মাছ দিয়ে, অসুস্থকে সুস্থ করেছেন, খঞ্জকে হাঁটিয়েছেন, অন্ধর চক্ষু খুলে দিয়েছেন, কুষ্ঠীকে সুস্থ করেছেন, এমনকি মৃতকেও উঠিয়েছেন। তাই তারা জিজ্ঞাসা করে: “খ্রীষ্ট যখন আসিবেন, তখন ইহাঁর কৃত কার্য্য অপেক্ষা তিনি কি অধিক চিহ্ন কার্য্য করিবেন?”

ফরীশীরা যখন তাঁহার বিষয়ে লোকেদের এই সমস্ত ফুসফুস করতে শুনলেন, তখন প্রধান যাজকেরা ও তারা তাঁকে ধরে আনবার জন্য কয়েকজন পদাতিকদের পাঠিয়ে দিলেন। যোহন ৭:১১-৩২.

▪ পর্বের সময়ে যীশু কখন সেখানে এসে পৌঁছান, আর লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে কি বলে?

▪ কেন কিছু লোকেরা বলে যে, যীশু ভূতগ্রস্ত?

▪ যিরূশালেমবাসীদের যীশুর সম্বন্ধে কি মনোভাব ছিল?

▪ কেন বহু ব্যক্তিরা যীশুতে বিশ্বাস করল?