সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ক্ষমার বিষয়ে শিক্ষাদান

ক্ষমার বিষয়ে শিক্ষাদান

অধ্যায় ৬৪

ক্ষমার বিষয়ে শিক্ষাদান

যীশু তখনও কফরনাহূমের গৃহে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি তাদের সঙ্গে ভাইদের মধ্যে সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় তার আলোচনা করছেন, সুতরাং পিতর জিজ্ঞাসা করলেন: “প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে, আমি ক্ষমা করিব?” যেহেতু যিহূদী ধর্মীয় নেতাদের ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনবার ক্ষমা করিতে পারা যায়, তাই সবেতঃ পিতর “কি সাত বার পর্যন্ত?” বলাকে অতি উদারতা বলে বিবেচনা করলেন।

কিন্তু এই প্রকার বিবরণ হিসাবে রেখে দেওয়ার ধারণা ভুল। তাই যীশু পিতরকে সংশোধন করে দিলেন: “তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তরগুণ সাত বার পর্য্যন্ত।” তিনি দেখালেন যে পিতর তার ভাইকে ক্ষমা কতবার করবে এই বিষয়ে কোন সীমা থাকতে পারে না।

ক্ষমাশীল হওয়ার বিষয় তাঁর শিষ্যদের বাধ্যবাধকতার উপর গুরুত্ব বুঝাবার জন্য, যীশু এক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করলেন। এটি এক রাজার সম্বন্ধে যিনি তার ক্রীতদাসদের কাছ থেকে হিসাব নিতে চাইলেন। এক দাসকে তার কাছে আনা হল যে ৬০,০০০,০০০ দিনারীর এক বিরাট পরিমাণে ধারগ্রস্ত। তার ফেরৎ দেবার কোন উপায় নেই। সুতরাং, যীশু ব্যাখ্যা করলেন, রাজা আদেশ দিলেন, সে ও তার স্ত্রী এবং সন্তানদের নিজেদের বিক্রী করে ধার শোধ দিতে হবে।

এই কথায় সেই দাস তার প্রভুর চরণে পড়ে বিনতি জানায়: “হে প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব।”

তার প্রতি করুণাবিষ্ট হয়ে, সেই প্রভু দয়া করে ঐ দাসের প্রচুর ধার ক্ষমা করে দিলেন। যীশু বলে চললেন, তার ধার ক্ষমা হবার সঙ্গে সঙ্গেই, এই দাস গিয়ে তার সহদাস যে মাত্র ১০০ দিনারী এই ব্যক্তির কাছে ধার করেছে তাকে খুঁজে বার করে। তাকে ধরে গলা টিপে, বলে: “তুই যা ধারিস্‌, তাহা পরিশোধ কর্‌।”

কিন্তু সেই সহদাসের কাছে টাকা নেই। সুতরাং সে সেই দাসের পায়ে পড়ে যার কাছে সে ঋণী, বিনতি করে: “আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর, আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করিব।” তার প্রভুর মত, এই দাসটি কিন্তু দয়ালু নয়, কিন্তু সে তার সহদাসকে কারাগারে দিয়ে দিল।

এরপর যীশু বলে চলেন, অন্য দাসেরা কি হয়েছে সব দেখতে পেল, আর গিয়ে প্রভুকে সমস্ত বৃত্তান্ত বলে দিল। ভীষণ রাগে প্রভু সেই দাসকে ডেকে পাঠালেন। “দুষ্ট দাস,” তিনি বললেন, “তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে, আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম। আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিৎ ছিল না?” তার প্রভু ক্রুদ্ধ হয়ে পীড়নকারীদের হাতে সেই ক্ষমাহীন দাসকে সমর্পণ করলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে।

এরপর যীশু শেষে বলেন: “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।”

সত্যই ক্ষমার বিষয়ে কি অপূর্ব শিক্ষাদান! যে প্রচুর পরিমাণে আমাদের পাপের ঋণ ঈশ্বর ক্ষমা করছেন, তার তুলনা করলে যে কোনও ধরনের অপরাধ যদি কোন খ্রীষ্টিয় ভাই আমাদের বিরুদ্ধে করে তা সত্যই অতি ক্ষুদ্র। যিহোবা ঈশ্বর, আমাদের হাজার হাজার বার ক্ষমা করেছেন। এমনকি অনেক সময়, তাঁর বিরুদ্ধে কি পাপ করে ফেলছি তা জানতেও পারি না। সেইজন্য কি আমাদের ভাইদের কয়েক বার ক্ষমা করা উচিৎ নয়, এমনকি যদি সত্যই কোন দোষণীয় কারণ থাকে? স্মরণে রাখুন, যীশু পর্বতে দত্ত উপদেশে যা শিক্ষা দিয়েছেন, “আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন, আমরাও আপন আপন অপরাধীদের ক্ষমা করিয়াছি।” মথি ১৮:২১-৩৫; ৬:১২; কলসীয় ৩:১৩.

▪ কোন বিষয়টি পিতরকে প্রণোদিত করে তার ভাইকে ক্ষমা করার বিষয় সংআন্ত প্রশ্ন উঠাতে, আর কেন তিনি চিন্তা করেন যে তার প্রস্তাব কাউকে সাতবার ক্ষমা করা সত্যই উদারতা?

▪ কিভাবে সেই রাজার তার দাসের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনার উত্তরের সঙ্গে, সেই দাসের তার সহ-দাসের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনার উত্তর আলাদা ধরনের?

▪ যীশুর এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আমরা কি শিখলাম?