তারা যীশুকে ফাঁদে ফেলতে ব্যর্থ হয়
অধ্যায় ১০৮
তারা যীশুকে ফাঁদে ফেলতে ব্যর্থ হয়
যেহেতু যীশু মন্দিরে শিক্ষা দিচ্ছেন ও তাঁর ধর্মীয় শত্রুদের তিনটি দৃষ্টান্ত সবেমাত্র বলেছেন যা তাদের দুষ্টতাকে প্রকাশ করে দিয়েছে, ফরীশীরা রেগে যায় ও পরামর্শ করে কিভাবে তাঁকে ফাঁদে ফেলবে যাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তারা এক ফন্দি করে এবং তাদের শিষ্যদের, হেরোদের দলের লোকেদের সাথে তাঁর কাছে পাঠায়, যাতে তাঁরা ভুল ধরতে পারে।
“গুরু,” এই ব্যক্তিরা বলে, “আমরা জানি, আপনি সত্য, এবং সত্যরূপে ঈশ্বরের পথের বিষয় শিক্ষা দিতেছেন, এবং আপনি কাহারও বিষয় ভীত নহেন, কেননা আপনি মনুষ্যের মুখাপেক্ষা করেন না। ভাল, আমাদিগকে বলুন, আপনার মত কি? কৈসরকে কর দেওয়া বিধেয় কি না?”
যীশু তাদের এই দুষ্ট চাটুবাদে বোকা বনে যাননি। তিনি জানেন যদি বলেন, ‘না, কর দেওয়া ঠিক বা বিধেয় নয়,’ তাহলে তাঁকে রোমীয়দের বিরুদ্ধে চআন্তকারী রূপে দোষী করা হবে। আর, যদি বলেন, ‘হ্যাঁ, কর দেওয়া বিধেয়,’ যিহূদীরা যারা রোমীয়দের পরাধীনতা ঘৃণা করে, তারা তাঁকে ঘৃণা করবে। তিনি উত্তর দেন: “কপটীরা, আমার পরীক্ষা কেন করিতেছ? সেই করের মুদ্রা আমাকে দেখাও।”
যখন তারা একটি তাঁর কাছে নিয়ে আসে, তিনি প্রশ্ন করেন: “এই মূর্ত্তি ও এই নাম কাহার?”
“কৈসরের,” তারা উত্তর দেয়।
“কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” এই ব্যক্তিরা, যখন যীশুর এই কর্তৃত্বব্যঞ্জক উত্তর শুনল, তারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করল। আর তারা তাঁকে একা ছেড়ে চলে যায়।
ফরীশীরা যীশুর বিপক্ষে কিছু করতে বিফল হয়েছে দেখে, সদ্দূকীরা, যারা দাবী করে থাকে যে পুনরুত্থান নেই, তারা যীশুর কাছে আসে ও জিজ্ঞাসা করে: “গুরু, মোশি বলিয়াছেন, ‘কেহ যদি নিঃসন্তান হইয়া মরে, তবে তাহার ভাই তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিয়া আপন ভাইয়ের জন্য বংশ উৎপন্ন করিবে।’ ভাল, আমাদের মধ্যে সাতটি ভাই ছিল; আর জ্যেষ্ঠ বিবাহের পর মরিয়া গেল, এবং সন্তান না হওয়াতে আপন ভ্রাতার জন্য নিজ স্ত্রীকে রাখিয়া গেল। দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রভৃতি সপ্তম জন পর্যন্ত সেইরূপ করিল। সকলের শেষে সে স্ত্রীও মরিয়া গেল। অতএব পুনরুত্থানে ঐ সাত জনের মধ্যে সে কাহার স্ত্রী হইবে? সকলেই ত তাহাকে বিবাহ করিয়াছিল।”
উত্তরে যীশু বলেন: “তোমরা কি ভ্রান্ত হইতেছ না, কারণ তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের পরাআম? কেননা পুনরুত্থানে লোকে বিবাহ করে না, এবং বিবাহিতাও হয় না, বরং স্বর্গে ঈশ্বরের দূতগণের ন্যায় থাকে। কিন্তু মৃতদের বিষয়ে, তাহারা যে উত্থিত হয়, এই বিষয়ে মোশির গ্রন্থে, ঝোপের বৃত্তান্তে ঈশ্বর তাঁহাকে কিরূপ বলিয়াছিলেন, তাহা কি পাঠ কর নাই? তিনি বলিয়াছিলেন, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর’? তিনি মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের। তোমরা বড়ই ভ্রান্তিতে পড়িয়াছ।”
আবার সেই জনতা যীশুর কথা শুনে চমৎকৃত হয়। কিছু, কিছু সদ্দূকীরাও স্বীকার করে, “হে গুরু, আপনি বেশ বলিয়াছেন।”
যখন ফরীশীরা লক্ষ্য করে যে তিনি সদ্দূকীদের স্তব্ধ করেছেন, তারা একদল হয়ে যীশুর কাছে আসে, যাতে তাঁর আরও পরীক্ষা করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করে: “গুরু, ব্যবস্থার মধ্যে কোন আজ্ঞা মহৎ?”
যীশু উত্তর করেন: “প্রথমটি এই, ‘হে ইস্রায়েল শুন; আমাদের ঈশ্বর যিহোবা একই যিহোবা, আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন এবং তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে।’ দ্বিতীয়টি এই, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’ এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই।” বাস্তবে, যীশু যোগ করেন: “এই দুই আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদীগ্রন্থও ঝুলিতেছে।” (NW)
“গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন,” অধ্যাপক তাঁর সাথে একমত হয়। “‘তিনি এক, এবং তিনি ব্যতীত অন্য নাই’; আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা এবং প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ।”
সেই অধ্যাপক বুদ্ধিপূর্বক উত্তর দিয়েছে দেখে যীশু তাকে বলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য হইতে তুমি দূরবর্ত্তী নও।”
গত তিন দিন যাবৎ—রবিবার, সোমবার, ও মঙ্গলবার—যীশু মন্দিরে শিক্ষা দিচ্ছেন। লোকে আনন্দের সাথে তাঁর কথা শুনছে, কিন্তু ধর্মীয় নেতারা তাঁকে হত্যা করতে চায়, এখন অবধি তাদের চেষ্টা বিফল হয়েছে। মথি ২২:১৫-৪০; মার্ক ১২:১৩-৩৪; লূক ২০:২০-৪০.
▪ ফরীশীরা কি চআন্ত করে যীশুকে ফাঁদে ফেলার জন্য এবং তিনি যদি হ্যাঁ অথবা না উত্তর দেন তাহলে তার ফল কি হবে?
▪ সদ্দূকীদের যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা তিনি কিভাবে ব্যর্থ করেন?
▪ ফরীশীরা যীশুকে পরীক্ষা করার আর কোন চেষ্টা করে, এবং তার ফল কি হয়?
▪ যিরূশালেমে তাঁর পরিচর্য্যার শেষ সময়কালে, কতদিন যীশু মন্দিরে শিক্ষা দেন, ও তার প্রতিক্রিয়া কি হয়?