সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তৃতীয়বার ঈশ্বরের স্বর শোনা যায়

তৃতীয়বার ঈশ্বরের স্বর শোনা যায়

অধ্যায় ১০৪

তৃতীয়বার ঈশ্বরের স্বর শোনা যায়

যখন যীশু মন্দিরে ছিলেন, তাঁর প্রাণ উদ্বিগ্ন হয় আগত যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগের জন্য। তাঁর প্রধান চিন্তা তাঁর পিতার নামের উপর তা কি প্রভাব ফেলবে, তাই তিনি প্রার্থনা করেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।”

তখন, স্বর্গ থেকে, এই বাণী হয় জোরাল গলায় ও ঘোষণা করে: “আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।”

যে জনতা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা হতবুদ্ধি হয়। “কোন স্বর্গ দূত ইহাঁর সাথে কথা কহিলেন,” অনেকে বলে। অন্যরা দাবি করে যে মেঘগর্ড্জন করেছে। কিন্তু, আসলে, যিহোবা ঈশ্বর কথা বলেছিলেন! যীশুর ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের স্বর, কিন্তু এই প্রথমবার মানুষ শুনছিল তা নয়।

যীশুর বাপ্তিস্মর সময়, সাড়ে তিন বৎসর পূর্বে, যোহন বাপ্তাইজক শোনেন যখন ঈশ্বর যীশুর সম্বন্ধে বলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” তারপর, গত নিস্তারপর্বের পরে, যখন তিনি, যাকোব, যোহন এবং পিতরের সামনে রূপান্তরিত হন, ঈশ্বর ঘোষণা করেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতে আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।” আর এখন, তৃতীয়বার, নিশান ১০ তারিখে, যীশুর মৃত্যুর চারদিন পূর্বে, মানুষ আবার ঈশ্বরের স্বর শুনতে পায়। কিন্তু এবার যিহোবা এমনভাবে কথা বলেন যে বিরাট জনতা তা শুনতে পায়!

যীশু ব্যাখ্যা করেন: “ঐ বাণী আমার জন্য হয় নাই, কিন্তু তোমাদেরই জন্য।” ইহা প্রমাণ করে যে প্রকৃতপক্ষে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ। “এখন এ জগতের বিচার উপস্থিত,” যীশু বলে চলেন, “এখন এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে।” যীশুর বিশ্বস্ত জীবনধারা, নিশ্চিত করে যে, জগতের অধিপতি, শয়তান দিয়াবল, “বাহিরে নিক্ষিপ্ত” হবার যোগ্য।

তাঁর আগত মৃত্যুর পরিণাম কি হবে সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, যীশু বলেন: “আমি ভূতল হইতে উচ্চীকৃত হইলে সকলকে আমার নিকটে আকর্ষণ করিব।” তাঁর মৃত্যু কোন অর্থে হার স্বীকার নয়, কারণ এর মাধ্যমে, তিনি অন্যদের তাঁর কাছে টানবেন, যাতে তারা তাঁর সাথে অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পারে।

কিন্তু সেই জনতা প্রতিবাদ করে: “আমরা ব্যবস্থা হইতে শুনিয়াছি যে খ্রীষ্ট চিরকাল থাকেন; তবে আপনি কি প্রকারে বলিতেছেন যে, মনুষ্যপুত্রকে উচ্চীকৃত হইতে হইবে? সেই মনুষ্যপুত্র কে?”

তাদের সব প্রমাণ দেওয়া সত্বেও, ও ঈশ্বরের স্বর শোনা সত্বেও বেশীর ভাগ বিশ্বাস করে না যে যীশুই হচ্ছেন সত্যই সেই মনুষ্যপুত্র, যিনি প্রতিজ্ঞাত মশীহ। তথাপি, ছয়মাস পূর্বে তিনি যেমন করেছিলেন কুটিরবাস পর্বে, পুনরায় যীশু নিজেকে “জ্যোতি” বলে বর্ণনা করেন ও তাঁর শ্রোতাদের উৎসাহ দেন: “যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, সেই জ্যোতিতে বিশ্বাস কর, যেন তোমরা জ্যোতির সন্তান হইতে পার।” এই কথা বলার পর, যীশু গোপনে থাকেন, কারণ তাঁর জীবন বিপন্ন।

যিহূদীদের যীশুতে বিশ্বাসের অভাব যিশাইয়ের ভাববাণীকে পূর্ণ করে ‘এই লোকেরা তাদের চোখ অন্ধ করেছে, তাদের হৃদয় কঠিন করেছে যাতে তারা পরিবর্তন হয়ে সুস্থ না হয়।’ যিশাইয় দর্শনে যিহোবার স্বর্গীয় প্রাঙ্গন দেখেছিলেন, আর সেখানে যীশুকে তাঁর মানব রূপে আসার পূর্বের মহিমায় দেখতে পেয়েছিলেন যিহোবার সাথে। অথচ, যিহূদীরা একগুঁয়ে ভাবে, যিশাইয় যা লেখেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সেই প্রতিজ্ঞাত মুক্তিদাতা রূপে অস্বীকার করে।

অন্যদিকে, অনেকে এমনকি শাসনকর্ত্তারাও (উচ্চ আদালত, যিহূদী মহাসভার সদস্যরাও) যীশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। নীকদীম ও অরিমাথিয়ার যোষেফ এদের মধ্যে দুইজন। কিন্তু এই শাসকেরা, অন্তত বর্তমানে তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করতে ভয় পায়, যে তাদের মহাসভার পদ থেকে বার করে দেওয়া হবে। কত কিছুই না তারা হারায়!

যীশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন: “যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে আমাতে নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাতেই বিশ্বাস করে; এবং যে আমাকে দর্শন করে, সে তাঁহাকেই দর্শন করে, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। . . . আর যদি কেহ আমার কথা শুনিয়া পালন না করে, আমি তাহার বিচার করি না, কারণ আমি জগতের বিচার করিতে নয়, কিন্তু জগতের পরিত্রাণ করিতে আসিয়াছি। . . . আমি যে বাক্য বলিয়াছি, তাহাই শেষদিনে তাহার বিচার করিবে।”

যিহোবার মানবজাতির প্রতি প্রেম তাঁকে পরিচালনা করে যীশুকে পাঠাতে যাতে যারা তাঁর উপর বিশ্বাস করে তারা যেন রক্ষা পায়। তারা রক্ষা পাবে কিনা তা নির্ধারণ করা হবে যীশুর দ্বারা ঈশ্বর যা বলেছেন তারা তা পালন করেছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে। এই বিচার হবে “শেষের দিনে,” খ্রীষ্টের হাজার বৎসরের রাজত্বে।

যীশু এই বলে শেষ করেন: “কারণ আমি আপনা হইতে বলি নাই; কিন্তু কি কহিব ও কি বলিব, তাহা আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন। আর আমি জানি যে, তাঁহার আজ্ঞার অর্থ অনন্ত জীবন। অতএব আমি যাহা যাহা বলি, তাহা পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন, তেমনি বলি।” যোহন ১২:২৮-৫০; ১৯:৩৮, ৩৯; মথি ৩:১৭; ১৭:৫; যিশাইয় ৬:১, ৮-১০.

▪ কোন তিন উপলক্ষে যীশুর ক্ষেত্রে লোকে ঈশ্বরের স্বর শোনে?

▪ কিভাবে ভাববাদী যিশাইয় যীশুর মহিমা দেখেন?

▪ সেই শাসনকর্ত্তারা কারা যারা যীশুর উপর বিশ্বাস রাখে, কিন্তু কেন তারা খোলাখুলি ভাবে তাঁকে স্বীকার করেনি?

▪ “শেষ দিন” কি, এবং কিসের উপর ভিত্তি করে লোকেরা বিচারিত হবে?