সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“দেখ! সেই মানুষ!”

“দেখ! সেই মানুষ!”

অধ্যায় ১২৩

“দেখ! সেই মানুষ!”

যীশুর আচরণে প্রভাবিত হয়ে ও তাঁর নির্দোষীতা স্বীকার করে, পীলাত আরও একটি উপায়ে চেষ্টা করেন তাঁকে মুক্তি দেবার। “তোমাদের এমন এক রীতি আছে,” তিনি সমবেত জনতাকে বলেন, “যে আমি নিস্তারপর্বের সময় তোমাদের জন্য এক ব্যক্তিকে ছাড়িয়া দিই।”

বারাব্বা যে একজন কুখ্যাত হত্যাকারী, সেও সেই সময় বন্দী আছে, তাই পীলাত জিজ্ঞাসা করেন: “তোমরা কি চাও, আমি কাহাকে ছাড়িয়া দিব, বারাব্বাকে অথবা যীশু যাহাকে খ্রীষ্ট বলে?” (NW)

প্রধান যাজকদের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে, লোকেরা বারাব্বার মুক্তি ও যীশুর মৃত্যু দাবী করে। পীলাত তবুও আশা ছাড়েন না, তিনি পুনরায় জবাব চেয়ে জিজ্ঞাসা করেন: “এই দুইজনের মধ্যে কাহাকে ছাড়িয়া দিব?”

“বারাব্বাকে,” তারা চিৎকার করে।

“তবে যীশু, যাহাকে খ্রীষ্ট বলে, তাহাকে কি করিব?” পীলাত বিরক্তির সাথে জিজ্ঞাসা করেন।

একযোগে তারা চিৎকার করে উত্তর দেয়: “উহাকে যাতনা দণ্ডে দাও!” “যাতনা দণ্ডে দাও! উহাকে যাতনা দণ্ডে দাও!” (NW)

ইহা জেনে যে তারা নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যু চাইছে, পীলাত অনুরোধ করেন: “কেন, এ কি অপরাধ করিয়াছে? মৃত্যুর যোগ্য কোন দোষ আমি ইহাতে পাই নাই; তাই শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব।” (NW)

কিন্তু তার চেষ্টা সত্ত্বেও, সেই ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা উত্তেজিত জনতা, চিৎকার করতে থাকে: “উহাকে যাতনা দণ্ডে দাও!” তাদের পুরোহিতদের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে, সেই জনতা কেবল রক্ত চায়। আর চিন্তা করুন, মাত্র পাঁচদিন পূর্বে, এদের মধ্যেই অনেকে সবেত সেই ভিড়ে ছিল যারা যীশুকে যিরূশালেমে রাজারূপে স্বাগত জানিয়েছিল! এই সময় ধরে, যীশুর শিষ্যরা, যদিও উপস্থিত থেকে থাকেন, তারা নীরব ও দৃষ্টির অগোচরে ছিলেন।

পীলাত, যখন দেখেন যে তার আবেদনে কিছু ফল হচ্ছে না, কিন্তু, চিৎকার বেড়েই চলেছে, তিনি জল নেন ও জনতার সামনে তার হাত ধুয়ে নেন এবং বলেন: “এই ধার্ম্মিক ব্যক্তির রক্তপাত সম্বন্ধে আমি নির্দ্দোষ। তোমরাই তাহা বুঝিবে।” তাহাতে লোকেরা উত্তর করিল: “উহার রক্ত আমাদের উপরে ও আমাদের সন্তানদের উপরে বর্ত্তুক।”

তাই তাদের দাবির সাথে মিল রেখে—সঠিক কি তা জেনেও জনতাকে সন্তুষ্ট করার অধিক ইচ্ছায়—পীলাত বারাব্বাকে মুক্তি দেন। যীশুকে নিয়ে গিয়ে তাঁর বস্ত্র খুলিয়ে নিলেন ও কোড়া মারালেন। এই কোড়া সাধারণ কোড়া নয়। দ্যা জার্নাল অফ দ্যা অ্যামেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বর্ণনা করে কোড়া মারার রোমীয় রীতি:

“সাধারণ জিনিসটি ছিল ছোট একটি চাবুক (বেতের চাবুক) যার আগায় চামড়ার ফিতা থাকত, আর এই ফিতাগুলির আগায় লোহার তীক্ষ্ণ টুকরা বা ভেড়ার হাড় বাঁধা থাকত। . . . রোমীয় সৈন্যরা যখন কোন দোষীকে তা দিয়ে সজোরে বার বার মারত, সেই লোহার টুকরা গভীরভাবে আহত করত, আর চামড়ার ফিতা ও ভেড়ার হাড় শরীরের চামড়া কেটে এর তলার টিস্যুগুলিকে আঘাত করত। তারপর চাবুকাঘাত যখন চলতে থাকত, তখন তা পেশীতে গিয়ে আঘাত করত এবং তা রক্তাক্ত এক অবস্থার সৃষ্টি করত।”

এই বেদনাময় প্রহারের পর, যীশুকে রাজ্যপালের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়, আর সৈন্যদের সম্পূর্ণ দলকে ডাকা হয়। সেখানে সৈন্যরা তাঁর উপর আরও অপব্যবহার করে কাঁটার মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় সজোরে পরিয়ে দিয়ে। তারা তাঁর ডান হাতে এক নল ধরিয়ে দেয়, এবং তাঁকে বেগুনিয়া বস্ত্র পরায়, যে ধরনের বস্ত্র রাজোচিত ব্যক্তিরা পরে। তারপর তারা তাঁকে ঠাট্টা করে বলে: “যিহূদী-রাজ, নমস্কার!” তারা তাঁকে চড় মারে ও মুখে থুথুও দেয়। তাঁর কাছ থেকে সেই নল নিয়ে, তারা তাঁর মাথায় আঘাত করে, তার দ্বারা অবমাননার কাঁটার “মুকুট” তাঁর মাথায় আরও গেঁথে যায়।

যীশুর অসাধারণ মনের দৃঢ়তা এবং শক্তি এইরূপ অত্যাচারের মুখে পীলাতকে এত প্রভাবিত করে যে তিনি তাঁকে মুক্তি দিতে আর একবার চেষ্টা করেন। “দেখ! আমি ইহাকে তোমাদের কাছে বাহিরে আনিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার, যে আমি ইহার কোনই দোষ পাইতেছি না,” তিনি জনতাকে বলেন। তিনি হয়ত চিন্তা করেন যে যীশুর অত্যাচার প্রযুক্ত যে অবস্থা হয়েছে তা তাদের হৃদয়কে কোমল করবে। যীশু সেই নিষ্ঠুর উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে দাঁড়িয়ে, পরণে তাঁর কাঁটার মুকুট ও বেগুনিয়া বস্ত্র, মুখ থেকে রক্ত ঝরছে এবং তাতে বেদনার স্পষ্ট ছাপ, পীলাত ঘোষণা করেন: “দেখ! সেই মানুষ!”

যদিও তিনি ক্ষত বিক্ষত, কিন্তু তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি, সত্যই পৃথিবীতে সর্বকালের জীবিতদের মধ্যে মহত্তম ব্যক্তি! হ্যাঁ, যীশু এক প্রশান্ত ও মর্যাদাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করে তাঁর মহত্বের প্রমাণ দেন যা পীলাতও স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন, কারণ তার কথাগুলির মধ্যে যুক্ত আছে করুণা ও সম্মান উভয়ই। যোহন ১৮:৩৯–১৯:৫; মথি ২৭:১৫-১৭, ২০-৩০; মার্ক ১৫:৬-১৯; লূক ২৩:১৮-২৫.

▪ কিভাবে পীলাত চেষ্টা করেন যীশুকে মুক্তি দেবার?

▪ পীলাত কিভাবে নিজেকে দায়িত্ব মুক্ত করতে চান?

▪ কোড়া মারার সাথে কি জড়িত আছে?

▪ যীশুকে কোড়া মারার পর কিভাবে উপহাস করা হয়?

▪ পীলাত আর কি চেষ্টা করেন যীশুকে মুক্তি দেবার?