সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দৃষ্টান্তগুলির দ্বারা মুখোস উন্মোচন

দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দৃষ্টান্তগুলির দ্বারা মুখোস উন্মোচন

অধ্যায় ১০৬

দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দৃষ্টান্তগুলির দ্বারা মুখোস উন্মোচন

যীশু মন্দিরে আছেন। একটু আগে তিনি ধর্মীয় নেতাদের হতবুদ্ধি করেছেন যারা জানতে চাইছিল কি ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি এই সকল কাজ সম্পাদন করছিলেন। তাদের এই বিহ্বল অবস্থা কেটে ওঠার আগেই, যীশু জিজ্ঞাসা করেন: “কিন্তু তোমাদের কেমন বোধ হয়?” আর এরপর তিনি তাদের দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়ে দেন যে তারা কি ধরনের ব্যক্তি।

“এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল,” যীশু বর্ণনা করেন। “তিনি প্রথম জনের নিকট গিয়া কহিলেন, ‘বৎস, যাও আজ দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কর্ম কর।’ সে উত্তর করিল, ‘কর্ত্তা, আমি যাইতেছি,’ কিন্তু গেল না। দ্বিতীয় জনের কাছে তিনি সেইরূপ কহিলেন। সে উত্তরে কহিল, ‘আমার ইচ্ছা নাই।’ শেষে অনুশোচনা করিয়া গেল। সেই দুইয়ের মধ্যে কে পিতার ইচ্ছা পালন করিল?” যীশু প্রশ্ন করেন।

“দ্বিতীয় জন,” তাঁর বিরোধীরা উত্তর দিল।

তাই যীশু ব্যাখ্যা করেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, করগ্রাহী ও বেশ্যারা তোমাদের অগ্রে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে।” এই করগ্রাহী ও বেশ্যারা, প্রথমে ঈশ্বরের সেবা করতে অস্বীকার করে। কিন্তু পরে, সেই দ্বিতীয় সন্তানটির মত অনুতাপ করে তাঁর সেবা করে। অন্যদিকে, ধর্মীয় নেতারা, সেই প্রথম সন্তানটির মত, ঈশ্বরকে সেবা করার দাবী করে, অথচ, যেমন যীশু বলেন: “কেননা যোহন [বাপ্তাইজক] ধার্ম্মিকতার পথ দিয়া তোমাদের নিকট আসিলেন, আর তোমরা তাঁহাকে বিশ্বাস করিলে না। কিন্তু করগ্রাহী ও বেশ্যারা তাঁহাকে বিশ্বাস করিল; আর তোমরা তাহা দেখিয়া শেষেও এরূপ অনুশোচনা করিলে না যে, তাঁহাকে বিশ্বাস করিবে।”

যীশু এরপর দেখান ঐ ধর্মীয় নেতারা কেবল ঈশ্বরের সেবা করা অবহেলা করেছেন তা নয়। আসলে তারা দুষ্ট, ও অসৎ ব্যক্তি। “একজন গৃহকর্ত্তা ছিলেন,” যীশু বলেন, “তিনি দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিয়া তাহার চারিদিকে বেড়া দিলেন, ও তাহার মধ্যে দ্রাক্ষা-কুণ্ড খনন করিলেন, এবং উচ্চ গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন; পরে কৃষকদিগকে তাহা জমা দিয়া অন্য দেশে চলিয়া গেলেন। আর ফলের সময় সন্নিকট হইলে তিনি আপন ফল গ্রহণ করিবার জন্য কৃষকদের নিকট নিজ দাসদিগকে প্রেরণ করিলেন। তখন কৃষকেরা তাঁহার দাসদিগকে ধরিয়া কাহাকেও প্রহার করিল, কাহাকেও বধ করিল, কাহাকেও পাথর মারিল। আবার তিনি পূর্বাপেক্ষা আরও অনেক দাস প্রেরণ করিলেন; তাহাদের প্রতিও তাহারা সেইরূপ করিল।”

এই “দাসেরা” হচ্ছে ভাববাদীগণ যাদের “গৃহকর্ত্তা,” যিহোবা ঈশ্বর সেই “দ্রাক্ষাক্ষেত্রে,” “কৃষকদের” নিকট পাঠান। এই কৃষকেরা হচ্ছে ইস্রায়েল জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা, যে জাতিকে বাইবেল চিহ্নিত করেছে ঈশ্বরের “দ্রাক্ষাক্ষেত্র” বলে।

যেহেতু “কৃষকেরা” খারাপ ব্যবহার ও “দাসদের” হত্যা করে, যীশু ব্যাখ্যা করেন: “অবশেষে [দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা] আপন পুত্রকে তাহাদের নিকট প্রেরণ করিলেন, বলিলেন, ‘তাহারা আমার পুত্রকে সমাদর করিবে।’ কিন্তু কৃষকেরা পুত্রকে দেখিয়া পরস্পর বলিল, ‘এই ব্যক্তি উত্তরাধিকারী, আইস, ইহাকে বধ করিয়া আমরা ইহার অধিকার হস্তগত করি!’ পরে তাহারা তাঁহাকে ধরিয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বাহিরে ফেলিয়া বধ করিল।” এবার, ধর্মীয় নেতাদের সম্বোধন করে, যীশু জিজ্ঞাসা করেন: “অতএব দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা যখন আসিবে, তখন সেই কৃষকদিগকে কি করিবেন?”

“যেহেতু তাহারা দুষ্ট,” ধর্মীয় নেতারা উত্তর দেয়, “সেই দুষ্টদিগকে নিদারুণরূপে বিনষ্ট করিবেন, এবং সেই ক্ষেত্র এমন অন্য কৃষকদিগকে জমা দিবেন, যাহারা ফলের সময় তাহাকে ফল দিবে।”

তাই তারা না জেনে নিজেদের উপর বিচারাজ্ঞা ঘোষণা করছে, যেহেতু তারা সেই ইস্রায়েলীয় “কৃষকদের” অন্তর্গত যারা যিহোবার “দ্রাক্ষাক্ষেত্রে” নিযুক্ত যা ইস্রায়েল জাতি। যে ফল যিহোবা চান এই কৃষকদের নিকট থেকে তা হল তাঁর পুত্রের উপর বিশ্বাস, যিনি সত্য মশীহ। তাদের এইরূপ ফল উৎপন্ন করায় ব্যর্থ হওয়াতে, যীশু সাবধান করেন: “তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পাঠ কর নাই [গীতসংহিতা ১১৮:২২, ২৩], ‘যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রা করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল। ইহা যিহোবা হইতেই হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত’? এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে। আর এই প্রস্তরের উপরে যে পড়িবে, সে ভগ্ন হইবে; কিন্তু এই প্রস্তর যাহার উপরে পড়িবে, তাহাকে চুরমার করিয়া ফেলিবে।”

সেই অধ্যাপক ও প্রধান যাজকেরা বুঝতে পারল যে যীশু তাদের সম্বন্ধে বলছেন, আর তারা তাঁকে বধ করতে চায়, যে হচ্ছে সেই ন্যায়সঙ্গত “উত্তরাধিকারী।” তাই ঈশ্বরের রাজ্যের শাসক হবার সুযোগ এক জাতিরূপে তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, ও এক নূতন জাতিকে দেওয়া হবে যাদের ‘দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কৃষক’ হিসাবে গঠন করা হবে, যারা ভাল ফল উৎপন্ন করবে।

যেহেতু ধর্মীয় নেতারা জনতাকে ভয় করে, যারা যীশুকে ভাববাদী বলে মানে, তারা তাঁকে এই সময়ে বধ করতে চেষ্টা করেন না। মথি ২১:২৮-৪৬; মার্ক ১২:১-১২; লূক ২০:৯-১৯; যিশাইয় ৫:১-৭.

▪ যীশুর প্রথম দৃষ্টান্তে, দুই সন্তান কাদের চিত্রিত করে?

▪ দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে, কারা “গৃহকর্ত্তা,” “দ্রাক্ষাক্ষেত্র,” “কৃষকেরা,” সেই “দাস” এবং “উত্তরাধিকারীকে” চিত্রিত করে?

▪ এই ‘দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কৃষকদের’ কি হবে এবং কারা তাদের স্থান নেবে?