সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ধনী ব্যক্তি ও লাসার

ধনী ব্যক্তি ও লাসার

অধ্যায় ৮৮

ধনী ব্যক্তি ও লাসার

যীশু তাঁর শিষ্যদের সাথে জাগতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্বন্ধে কথা বলছিলেন, এবং তাদের বুঝিয়ে দেন যে একই সময় আমরা সম্পদ ও ঈশ্বরের দাস হতে পারি না। ফরীশীরাও শুনছিল, আর তারা যীশুর প্রতি ক্রুদ্ধ হল কারণ তারা অর্থ ভালবাসত। তাই তিনি তাদের বললেন: “তোমরাই ত মনুষ্যদের সাক্ষাতে আপনাদিগকে ধার্ম্মিক দেখাইয়া থাক, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের অন্তঃকরণ জানেন; কেননা মনুষ্যদের মধ্যে যাহা উচ্চ, তাহা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ঘৃণিত।”

সময় এসেছে সেই সমস্ত লোকেদের দিকে লক্ষ্য দেবার, যারা জাগতিক বস্তুতে ধনী, রাজনৈতিক শক্তি, এবং ধর্মীয় প্রতিপত্তি প্রভাবে প্রভাবিত। তাদের নিচুস্থানে আনতে হবে। আর, যে ব্যক্তিরা নিজ আত্মিক প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে তাদের উচ্চস্থানে দিতে হবে। যীশু এই পরিবর্ত্তনের বিষয়টি বললেন যখন তিনি ফরীশীদের জানালেন:

“ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণ যোহন [বাপ্তাইজক] পর্যন্ত। সেই অবধি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে, এবং প্রত্যেক জন সবলে সেই রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে। কিন্তু ব্যবস্থার এক বিন্দু পড়িয়া যাওয়া অপেক্ষা বরং আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হওয়া সহজ।”

ফরীশী ও অধ্যাপকেরা তাদের মোশির ব্যবস্থায় পারদর্শী থাকার বিষয়টি সম্বন্ধে খুব গর্বিত ছিল। স্মরণ করুন যখন যীশু এক ব্যক্তিকে দৃষ্টিদান করেন, তারা গর্ব করে: “আমরা মোশির শিষ্য। আর আমরা জানি ঈশ্বর মোশির সঙ্গে কথোপকথন করেন।” এখন মোশির আইনের যে উদ্দেশ্য তা পূর্ণ হয় নম্র ব্যক্তিদের ঈশ্বরের মনোনীত রাজা, যীশু খ্রীষ্টের নিকট পরিচালনা করে। সেইকারণে যোহনের পরিচর্য্যার অরম্ভে, সকল ধরনের লোকে, বিশেষ করে নম্র ও গরিব, নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হবার জন্য।

যেহেতু মোশির ব্যবস্থা পরিপূর্ণ, তাই পালন করার বাধ্যতা এখন উঠে গেছে। আইন বহুক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমোদন দিত, কিন্তু যীশু এখন বললেন: “যে কেহ আপনার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া আর একজনকে বিবাহ করে সে ব্যভিচার করে, এবং যে কেহ স্বামীত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” এই রায় ফরীশীদের কতই না বিরক্ত করল, কারণ তারা বহু ক্ষেত্রেই বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদন করে!

ফরীশীদের প্রতি মন্তব্য করে, যীশু এক দৃষ্টান্ত দেন দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে, যাদের মর্যাদা বা পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্ত্তিত হয়। আপনি কি স্থির করতে পারেন এই ব্যক্তিদের দ্বারা কাদের চিত্রিত করা হচ্ছে আর তাদের পরিস্থিতির পরিবর্ত্তনের অর্থই বা কি?

“একজন ধনবান লোক ছিল,” যীশু ব্যাখ্যা করেন, “সে বেগুনে কাপড় ও সূক্ষ্ম বস্ত্র পরিধান করিত, প্রতিদিন জাঁকজমকের সহিত আমোদ প্রমোদ করিত। তাহার ফটকদ্বারে লাসার নামে এক জন কাঙ্গালকে রাখা হইয়াছিল, সে ঘায়ে ভরা ছিল, এবং সেই ধনবানের মেজ হইতে পতিত গুঁড়াগাঁড়া খাইতে বাঞ্ছা করিত। আবার কুকুরেরাও আসিয়া তাহার ঘা চাটিত।”

যীশু এখানে ধনী ব্যক্তির দ্বারা চিত্রিত করছেন যিহূদী ধর্মীয় নেতাদের, এর মধ্যে কেবল ফরীশী ও অধ্যাপকরা নয় কিন্তু সদ্দূকী ও প্রধান পুরোহিতরাও অন্তর্ভূক্ত। তারা আত্মিক সুযোগ ও সুবিধার ক্ষেত্রে ধনী, এবং তারা ঐ ধনী ব্যক্তিরই মত আচরণ করে। তাদের রাজকীয় বেগুনী বস্ত্র বুঝাচ্ছে তাদের অনুকূলজনক অবস্থান, আর সূক্ষ্ম বস্ত্র চিত্রিত করছে তাদের আত্ম-ধার্মিকতা।

এই গর্বিত ধনী ব্যক্তিরা গরীব, সাধারণ ব্যক্তিদের নীচু চোখে দেখত, তাদের বলত ‘অ্যাম হা·’আ’রেটস, অথবা ধূলার মানুষ। এইভাবে লাসার চিত্রিত করছে এই ব্যক্তিদের যাদের ঐ ধর্মীয় নেতারা উপযুক্ত আত্মিক পুষ্টি ও সুযোগ দিতে অস্বীকৃত। যেমন, লাসার ঘায়ে ভরা ছিল, এই সাধারণ ব্যক্তিদের দেখা হত আত্মিকভাবে অসুস্থ হিসাবে আর শুধু কুকুরদের সঙ্গে থাকার উপযুক্ত রূপে। তবুও, এই লাসার শ্রেণী আত্মিক পুষ্টির জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত এবং তাই দ্বারেই রয়েছে; ধনী ব্যক্তিদের মেজ থেকে পড়ে যাওয়া যা কিছু আত্মিক খাবারের টুকরো পাওয়ার আশায়।

যীশু এবার ধনী ব্যক্তি ও লাসারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিষয় ব্যাখ্যা দিয়ে চললেন। পরিবর্ত্তনগুলি কি কি, আর এগুলি কিসের প্রতিনিধিত্ব করছে?

ধনী ব্যক্তি ও লাসার এক পরিবর্ত্তন অভিজ্ঞতা করে

ধনী ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করছে ধর্মীয় নেতাদের যারা আত্মিক সুযোগ ও সুবিধায় অনুকূল অবস্থায় রয়েছেন, এবং লাসার চিত্রিত করছে সাধারণ মানুষদের যারা আত্মিক পুষ্টির জন্য ক্ষুধিত। যীশু তাঁর গল্প বলে চলেছেন, এই ব্যক্তিদের মধ্যে এক নাটকীয় পরিবর্ত্তনের ব্যাখ্যা দিলেন।

“কালআমে,” যীশু বললেন, “ঐ কাঙ্গাল মরিয়া গেল, আর স্বর্গদূতগণ তাহাকে লইয়া অব্রাহামের কোলে বসাইলেন। পরে সেই ধনবানও মরিল এবং কবর প্রাপ্ত হইল। আর পাতালে, যাতনার মধ্যে, সে চক্ষু তুলিয়া দূর হইতে অব্রাহামকে এবং তাঁহার কোলে লাসারকে দেখিতে পাইল।”

যেহেতু এই ধনী ব্যক্তি ও লাসার আক্ষরিক ব্যক্তি নয় কিন্তু রূপকার্থে শ্রেণীভুক্ত লোকেরা, সুতরাং যুক্তিযুক্তভাবে তাদের মৃত্যুও রূপক। তাদের মৃত্যু কিসের প্রতীক, বা কি চিত্রিত করে?

যীশু সবেমাত্র পরিস্থিতির পরিবর্ত্তন-জনিত বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে বলেন যে, ‘ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণ যোহন পর্যন্ত, আর সেই অবধি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার হইতেছে।’ তাহলে, এই যোহন ও যীশুর প্রচার কাজের সময় থেকেই এই ধনী ব্যক্তি ও লাসার মারা গেল তাদের আগের পরিস্থিতি, বা অবস্থা থেকে।

নম্র, অনুতপ্ত লাসার শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বঞ্চিত দশা থেকে মৃত্যু হল আর ঐশিক অনুগ্রহে আসতে পারল। যদিও, আগে তারা ধর্মীয় নেতাদের দিকে তাকাত যদি তাদের আত্মিক মেজ থেকে কিছু পড়ে, কিন্তু এখন যীশুর দত্ত শাস্ত্রীয় সত্য তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে দিল। এইভাবে তারা এখন তাঁর কোলে অর্থাৎ অনুগ্রহের স্থানে এল, মহান অব্রাহাম, যিহোবা ঈশ্বরের।

অন্যদিকে, যারা ধনী ব্যক্তির শ্রেণীভুক্ত এখন তারা ঐশিক অনুগ্রহ বিহীন অবস্থায় এল, কারণ তারা আমাগত যীশুর শিক্ষা রাজ্যের সুসমাচারকে অস্বীকার করে চলেছে। এর ফলে তারা তাদের আগের অপাত অনুগ্রহের পরিস্থিতি থেকে মৃত্যু বরণ করল। বস্তুত, তাদের সর্ম্পকে বলা হয়েছে তারা এক রূপক যাতনায় আছে। ধনী ব্যক্তি যেমন বলছে, শুনুন:

“পিতঃ অব্রাহাম, আমার প্রতি দয়া করুন, লাসারকে পাঠাইয়া দিউন, যেন সে আঙ্গুলির অগ্রভাগ জলে ডুবাইয়া আমার জিহ্বা শীতল করে, কেননা এই অগ্নিশিখায় আমি যন্ত্রণা পাইতেছি।” ঈশ্বরের জ্বলন্ত বিচার সম্পর্কিত সংবাদ যা যীশুর শিষ্যরা ঘোষণা করেছে তার দ্বারা, প্রত্যেকটি ধনী ব্যক্তি শ্রেণী যন্ত্রণা পাচ্ছে। তারা চায় শিষ্যরা যেন এই সংবাদ আর না বলে, যাতে এর দ্বারা তাদের যন্ত্রণার কিছুটা লাঘব হয়।

“কিন্তু অব্রাহাম কহিলেন, ‘স্মরণ কর, তোমার সুখ তুমি জীবন কালে পাইয়াছ, আর লাসার তদ্রূপ দুঃখ পাইয়াছে। এখন সে এই স্থানে সান্ত্বনা পাইতেছে, আর তুমি যন্ত্রণা পাইতেছ। আর এসকল ছাড়া আমাদের ও তোমাদের মধ্যে বৃহৎ এক শূন্যস্থলী স্থির রহিয়াছে, যেন এখান হইতে যাহারা তোমাদের কাছে যাইতে চাহে, তাহারা না পারে, আবার ওখান হইতে আমাদের কাছে কেহ পার হইয়া আসিতে না পারে।’”

কিভাবে ন্যায়যুক্ত ও উপযুক্ত নাটকীয় পরিবর্ত্তন এই লাসার শ্রেণী ও ধনী শ্রেণীর মধ্যে হল! এই পরিস্থিতির পরিবর্ত্তন কয়েক মাস পরে ৩৩ সা.শ. পঞ্চাশত্তমীর দিন সম্পূর্ণ করা হয়, যখন পুরাতন ব্যবস্থা চুক্তি, নূতন চুক্তির দ্বারা পরিবর্ত্তিত হয়ে গেল। আর তখনই অভ্রান্ত ভাবে পরিষ্কার হয়ে গেল যে শিষ্যরাই, ফরীশী বা অন্য ধর্মীয় নেতারা নয়, ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রাপ্ত। এই যে “বৃহৎ এক শূন্যস্থলী” যা রূপক ধনী ব্যক্তিকে যীশুর শিষ্যদের থেকে পৃথক করছে তা চিত্রিত করছে ঈশ্বরের অপরিবর্ত্তনীয়, ধার্মিক বিচারাজ্ঞা।

ধনী ব্যক্তি এবার অনুরোধ করে “পিতা অব্রাহাম”: “আমার পিতার বাটীতে উহাকে [লাসারকে] পাঠাইয়া দিউন, যেখানে আমার পাঁচ ভাই আছে।” ধনী ব্যক্তি এই ভাবে প্রকাশ করে দিল যে তার আর একটি পিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, যে আসলে শয়তান দিয়াবল। ধনী ব্যক্তি অনুরোধ করে লাসার ঈশ্বরের বিচারাজ্ঞাকে লঘু করুক যাতে তার “পাঁচ ভাই,” তার ধর্মীয় সঙ্গীরা, এই “যাতনা স্থলে” না আসে।

“কিন্তু অব্রাহাম কহিলেন, ‘তাহাদের কাছে মোশি ও ভাববাদীরা আছে; তাঁহাদেরই কথা তাহারা শুনুক।’” যদি এই “পাঁচ ভাই” যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে চায়, ত তাদের মোশির ও ভাববাদীগ্রন্থে যা লেখা আছে তা পালন করতে হবে, এবং তারপর যীশুকে মশীহ রূপে সনাক্ত করে তাঁর শিষ্য হতে হবে। কিন্তু ধনী ব্যক্তি বাধা দেয়: “তাহা নয়, পিতঃ অব্রাহাম, বরং মৃতদের মধ্য হতে যদি কেহ তাহাদের নিকটে যায় তাহা হইলে তাহারা মন ফিরাইবে।”

তবুও, তাকে বলা হল: “তাহারা যদি মোশির ও ভাববাদীগণের কথা না শুনে, তবে মৃতগণের মধ্য হইতে কেহ উঠিলেও তাহারা মানিবে না।” ঈশ্বর লোকেদের বিশ্বাসের জন্য বিশেষ চিহ্ন বা আশ্চর্য্য কাজ করবেন না। তারা শাস্ত্র পড়বে ও প্রয়োগ করবে যদি তাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে হয়। লূক ১৬:১৪-৩১; যোহন ৯:২৮, ২৯; মথি ১৯:৩-৯; গালাতীয় ৩:২৪; কলসীয় ২:১৪; যোহন ৮:৪৪.

▪ কেন ধনী ব্যক্তি ও লাসারের মৃত্যু রূপক, এবং তাদের মৃত্যু কি চিত্রিত করছে?

▪ যোহনের পরিচর্য্যার আরম্ভ থেকে, কোন পরিবর্ত্তন ঘটার ইঙ্গিত যীশু দিলেন?

▪ যীশুর মৃত্যুর পর কি উঠে যাবে, এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এটি কি প্রভাব আনবে?

▪ যীশুর দৃষ্টান্তে, ধনী ব্যক্তি ও লাসার কাদের চিত্রিত করছে?

▪ ধনী ব্যক্তি যে যন্ত্রণা ভোগ করছে তা কি, এবং কোন উপায়ে সে অনুরোধ করে যাতে এই যন্ত্রণা লাঘব হতে পারে?

▪ “শূন্যস্থলী” কি চিত্রিত করে?

▪ কে এই ধনী ব্যক্তির আসল পিতা, আর তার পাঁচ ভাই কারা?