সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নম্রতার উপর শিক্ষাদান

নম্রতার উপর শিক্ষাদান

অধ্যায় ৬২

নম্রতার উপর শিক্ষাদান

ফিলিপীয় দেশের কৈসরিয়াতে সেই অশুচি আত্মাগ্রস্ত বালকটিকে সুস্থ করার পর, যীশু নিজ গৃহ কফরনাহূমে ফিরে আসা মনস্থ করলেন। যাইহোক, এই যাত্রাটি তিনি কেবলমাত্র শিষ্যদের নিয়ে করতে চেয়েছিলেন যাতে নিজ মৃত্যু ও এর পর তাদের দায়িত্বভারগুলি সম্বন্ধে আরও প্রস্তুত করে যেতে পারেন। “মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন;” তিনি তাদের ব্যাখ্যা করলেন, “এবং তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে, আর তৃতীয় দিবসে তিনি উঠিবেন।”

যদিও যীশু এই বিষয়ে আগেই বলেছিলেন, এবং তিন প্রেরিত তাঁর “প্রস্থান” ঘটিত বিষয়টির আলোচনা শোনেন যখন তাঁর রূপান্তরিত অবস্থা দেখেন, তবুও তাঁর শিষ্যরা এই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। যদিও কেউ, তাঁকে হত হতে হবে, সেই বিষয়ে অস্বীকার করতে চেষ্টা করলেন না, যেমন পিতর আগে একবার করেছিলেন, এ সম্পর্কে আরও কোনও প্রশ্ন করতে ভয় পাচ্ছিলেন।

অবশেষে তারা কফরনাহূমে এসে পৌঁছালেন, যা যীশুর পরিচর্য্যা কালে তাঁর বাসভূমি স্বরূপ ছিল। এটি পিতরের এবং অন্য কয়েকজন প্রেরিতেরও নিবাসভূমি ছিল। এই স্থানেই, যারা মন্দিরের জন্য কর আদায় করত, তারা পিতরের কাছে আসে। হয়ত তারা যীশুকে কর সংআন্ত রীতি ভঙ্গে কোনভাবে জড়িত করতে চেয়েছিল, তাই তারা জিজ্ঞাসা করে: “তোমাদের গুরু কি আধুলি [মন্দিরের কর] দেন না?”

“দিয়া থাকেন,” পিতর উত্তর দেন।

যীশু হয়ত একটু পরে গৃহ মধ্যে ঢুকেছিলেন, এবং বুঝে গিয়েছিলেন, কি হয়েছে। তাই পিতর জিজ্ঞাসা করার আগেই, যীশু বললেন: “শিমোন, তোমার কেমন বোধ হয়? পৃথিবীর রাজারা কাহাদের হইতে কর বা রাজস্ব গ্রহণ করিয়া থাকেন? কি আপন সন্তানদের হইতে, না অন্য লোক হইতে?”

“অন্য লোক হইতে,” পিতর উত্তর দিলেন।

“তবে সন্তানেরা স্বাধীন,” তখন যীশু তাকে বললেন। যেহেতু যীশুর পিতা এই বিশ্বের রাজা, মন্দিরে যাঁর উপাসনা করা হয়, ঈশ্বরের পুত্রের জন্য কর দান করা অইনযোগ্য অবশ্যকতা নয়। “তথাপি আমরা যেন উহাদের বিদ্ধ না জন্মাই,” যীশু বললেন, “এই জন্য তুমি সমুদ্রে গিয়া বড়শী ফেল, তাহাতে প্রথম যে মাছটি উঠিবে, সেইটি ধরিয়া তাহার মুখ খুলিলে একটি টাকা [চার দ্রাক্‌মা] পাইবে; সেইটি লইয়া আমার এবং তোমার নিমিত্ত উহাদিগকে দেও।”

যখন শিষ্যরা সবাই কফরনাহূমে ফিরে একত্রিত হলেন, হয়ত পিতরের গৃহেই হয়েছিলেন, তারা জিজ্ঞাসা করেন: “তবে স্বর্গ রাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?” যীশু জানতেন কোন্‌ বিষয়টি তাদের এই প্রশ্নের উৎস, কারণ তিনি জ্ঞাত ছিলেন যে তাঁর সঙ্গে আসবার পথে তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে আলোচনা চলছিল, যখন তারা ফিলিপীয় কৈসরিয়া নগর থেকে ফিরছিলেন। সুতরাং তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “পথে তোমরা কোন বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করিতেছিলে?” লজ্জিত হয়ে, শিষ্যরা চুপ করে রইলেন, কারণ কে শ্রেষ্ঠ, পথে এই বিষয়ে বাদানুবাদ করছিলেন।

যীশু প্রায় তিনবছর তাদের শিক্ষাদান করার পরও, শিষ্যরা এই বিষয়ে তর্কাতর্কি করছে তা জেনে কি আশ্চর্য্য লাগছে? ইহা, বুঝিয়ে দেয় যে মানবিক অসিদ্ধতার এবং পূর্বের ধর্মীয় প্রভাব কতখানি থাকে। যিহূদী ধর্ম অনুযায়ী, যাতে শিষ্যরা প্রতিপালিত হয়ে উঠেছেন, যে কোনও ক্ষেত্রেই পদ ও মর্য্যাদাতে জোর দেওয়া হত। ইহা ছাড়া, হয়ত পিতর, যীশুর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী রাজ্য সংআন্ত “চাবিগুলির” অধিকারযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে মহান ভেবেছিলেন। যাকোব ও যোহনও হয়ত ঐ ধরনের চিন্তাধারাকে মনের মধ্যে স্থান দেন, কারণ তারা যীশুর রূপান্তর চাক্ষুষ দেখেন।

যাই হোক না, যীশু এখানে এক মর্মস্পর্শী দৃশ্যের উপস্থাপনা করলেন যাতে তাদের মনোভাব সংশোধন করতে পারেন। তিনি একটি শিশুকে ডেকে, তাদের মধ্যে দাঁড় করালেন, তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন: “তোমরা যদি না ফির, ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না। অতএব, যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গরাজ্যে শ্রেষ্ঠ। আর যে কেহ, ইহার মত একটি শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে।”

শিষ্যদের সংশোধিত করার কি অত্যাশ্চর্য্য উপায়! যীশু তাদের উপর রেগে উঠলেন না বা তাদের উদ্ধত, লোভী, বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী বললেন না। বরং, তিনি তাঁর সংশোধনমূলক শিক্ষাদানে শিশুদের উদাহরণ ব্যবহার করলেন, যারা স্বভাবে নম্র এবং উচ্চাশামুক্ত এবং সাধারণভাবে তাদের মধ্যে স্থানাধিকারের চিন্তা দেখা যায় না। এইভাবে যীশু দেখালেন তাঁর শিষ্যদের এই গুণাবলী অর্ড্জনের প্রয়োজনীয়তা আছে যেগুলি নম্র শিশুদের চিহ্নিত করে। সেই জন্য যীশু শেষে বললেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান।” মথি ১৭:২২-২৭; ১৮:১-৫; মার্ক ৯:৩০-৩৭; লূক ৯:৪৩-৪৮.

▪ কফরনাহূমে ফেরার পথে, কোন শিক্ষা যীশু পুনরায় দিলেন, এবং কিভাবে এটি গ্রহণ করা হল?

▪ কেন যীশু মন্দির সংআন্ত কর দিতে বাধ্য নন, কিন্তু কেন তবুও তিনি তাহা দেন?

▪ শিষ্যদের তর্কাতর্কির বিষয়টিতে হয়ত কিসের অবদান ছিল, এবং যীশু কিভাবে তাদের সংশোধন করেন?