সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নীকদীমকে শিক্ষাদান

নীকদীমকে শিক্ষাদান

অধ্যায় ১৭

নীকদীমকে শিক্ষাদান

যখন তিনি ৩০ সা.শ. নিস্তারপর্বে যোগ দিচ্ছিলেন, তখন যীশু অনেক উল্লেখযোগ্য চিহ্নকার্য, অথবা আশ্চর্য্য কাজ করেন। এর ফলস্বরূপ, অনেক ব্যক্তিরা তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন। নীকদীম, যিনি যিহূদী মহাসভা, যা যিহূদী মহাবিচারালয়, তার একজন সদস্য ছিলেন, তিনি খুব প্রভাবিত হন এবং আরও শিখতে চান। তাই তিনি রাতের অন্ধকারে যীশুর সঙ্গে দেখা করেন, হয়ত ভয় পান যে অন্য যিহূদী নেতাদের কাছে তার সুনাম নষ্ট হবে যদি তাকে তারা দেখে ফেলে।

“রব্বি,” তিনি বলেন, “আমরা জানি আপনি ঈশ্বরের নিকট হইতে অগত গুরু; কেননা আপনি যে সকল চিহ্ন কার্য্য সাধন করিতেছেন, ঈশ্বর সহবর্ত্তী না থাকিলে এ সকল কেহ করিতে পারে না।” উত্তরে, যীশু নীকদীমকে বলেন কেহ যদি ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে চায়, তবে সেই ব্যক্তিকে “নূতন জন্ম” নিতে হবে।

কিন্তু, কি করে একজন ব্যক্তি আবার জন্ম নিতে পারে? “সে কি দ্বিতীয় বার মাতার গর্ভে প্রবেশ করিয়া জন্মিতে পারে?” নীকদীম প্রশ্ন করে।

না, দ্বিতীয় বার জন্ম নেবার অর্থ তা নয়। “যদি কেহ জল ও আত্মা হইতে জন্ম না নেয়,” যীশু বুঝিয়ে দেন, “সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না।” যখন যীশু বাপ্তাইজিত হন এবং তাঁর উপর পবিত্র আত্মা নেমে আসে, তিনি তখন জন্ম নেন “জল ও আত্মা” হইতে। আর তার সাথে স্বর্গ থেকে রব ছিল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাতে আমি প্রীত,’ ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে তিনি একজন আত্মিক পুত্র এনেছেন যার সামনে আশা আছে স্বর্গীয় রাজ্যে প্রবেশ করার। পরে, ৩৩ সা.শ. পঞ্চাশত্তমীর দিনে, অন্য বাপ্তাইজিতরা পবিত্র আত্মা পাবে ও আবার জন্ম গ্রহণ করবে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে।

কিন্তু ঈশ্বরের বিশেষ মানব সন্তানের যে ভূমিকা তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। “আর মোশি যেমন প্রান্তরে সেই সর্পকে উচ্চে উঠাইয়াছিলেন,” যীশু নীকদীমকে বলেন, “সেইরূপ মনুষ্যপুত্রকেও উচ্চীকৃত হইতে হইবে, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পায়।” হ্যাঁ, সেই ইস্রায়েলীয়দের যাদের বিষাক্ত সর্প দংশন করেছিল তাদের যেমন বাঁচবার জন্য তাম্রসর্পের প্রতি তাকাতে হয়েছিল, ঠিক তেমনই সমস্ত মানবজাতিকে ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যদি তারা মৃত্যুর যে অবস্থায় আছে তার থেকে রক্ষা পেতে চায়।

এই সম্বন্ধে যিহোবার প্রেমময় ভূমিকার উপর জোর দিয়ে, যীশু এরপর নীকদীমকে বলেন: “ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” তাই, যিরূশালেমে তাঁর পরিচর্য্যা আরম্ভ করার কেবল ছয় মাস পরে, যীশু পরিষ্কার করে দেন যে তিনিই হচ্ছেন মানবজাতিকে রক্ষা করার যিহোবা ঈশ্বরের একমাত্র উপায়।

যীশু নীকদীমকে এই সম্বন্ধে আরও ব্যাখ্যা করেন: “কেননা ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই,” এর অর্থ, জগতকে প্রতিকূলভাবে, বা দোষী সাব্যস্ত করার জন্য নয়, মানবজাতিকে ধ্বংসের নিমিত্ত দণ্ড দেবার জন্য নয়। কিন্তু, যেমন যীশু বলেন, তাঁকে পাঠান হয়েছে, “জগৎ যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়।”

নীকদীম ভয়ে রাতের অন্ধকারে যীশুর কাছে এসেছে। তাই ইহা আগ্রহের বিষয় যে যীশু তার সাথে কথোপকথন শেষ করেন এই বলে, “আর সেই বিচার এই যে, জগতে জ্যোতি [যা যীশু নিজের জীবন ও শিক্ষার মধ্যে প্রকাশ করেছিলেন] আসিয়াছে, এবং মনুষ্যেরা জ্যোতি হইতে অন্ধকার অধিক ভালবাসিল, কেননা তাহাদের কর্ম্ম সকল মন্দ ছিল। কারণ যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে, এবং জ্যোতির নিকটে আইসে না, পাছে তাহার কর্ম্ম সকলের দোষ ব্যক্ত হয়। কিন্তু যে সত্য সাধন করে, সে জ্যোতির নিকটে আইসে, যেন তাহার কর্ম্ম সকল ঈশ্বরে সাধিত বলিয়া সপ্রকাশ হয়।” যোহন ২:২৩–৩:২১; মথি ৩:১৬, ১৭; প্রেরিত ২:১-৪; গণনাপুস্তক ২১:৯.

▪ কি নীকদীমকে পরিদর্শনে প্ররোচিত করে, এবং কেন সে রাতে আসে?

▪ “নূতন জন্ম” একথার অর্থ কি?

▪ আমাদের পরিত্রাণে যীশুর ভূমিকা কিভাবে উদাহরণের দ্বারা তিনি চিত্রিত করেন?

▪ যীশু জগতকে বিচার করতে আসেননি এই কথার অর্থ কি?