পীলাতের কাছ থেকে হেরোদের নিকট ও আবার ফেরৎ আসা
অধ্যায় ১২২
পীলাতের কাছ থেকে হেরোদের নিকট ও আবার ফেরৎ আসা
যদিও যীশু লুকানোর চেষ্টা করেন না যে তিনি রাজা, কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা করেন যে তাঁর রাজ্য রোমের পক্ষে কোন আশঙ্কার বিষয় নয়। “আমার রাজ্য এ জগতের নয়,” যীশু বলেন। “যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই। কিন্তু, আমার রাজ্য এই উৎস হইতে নয়।” যীশু এইভাবে তিনবার স্বীকার করেন যে তাঁর রাজ্য আছে, যদিও তা পার্থিব উৎস থেকে নয়।
কিন্তু পীলাত তাঁকে আরও জোর করেন: “তবে তুমি কি রাজা?” অর্থাৎ, যদিও তোমার রাজ্য এ জগতের নয় তবুও তুমি কি রাজা?
যীশু পীলাতকে জানান যে তিনি সঠিক উপসংহারে পৌঁছেছেন, এই উত্তর দিয়ে: “তুমিই বলিতেছ যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এইজন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে।”
হ্যাঁ, যীশুর পৃথিবীতে জন্ম নেবার আসল উদ্দেশ্যই হল “সত্যের” সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া, বিশেষ করে রাজ্যের সত্যের সম্বন্ধে। যীশু এই সত্যের পক্ষে বিশ্বস্ত থাকতে প্রস্তুত এমন কি তাঁর জীবনের মূল্যেও। যদিও পীলাত প্রশ্ন করেন: “সত্য কি?” তিনি সেই সম্বন্ধে আর ব্যাখ্যা নিতে অপেক্ষা করেন না। তিনি যথেষ্ট শুনেছেন তার বিচারাদেশ দেবার জন্য।
পীলাত অপেক্ষারত জনতার কাছে ফিরে আসেন প্রাসাদের বাইরে। যীশু সবেত তার পাশে, তিনি প্রধান যাজকদের ও যারা তাদের সাথে আছে তাদের বলেন: “আমি ত ইহার কোন দোষ দেখিতে পাইতেছি না।”
এই সিদ্ধান্তে আধান্বিত হয়ে, জনতা জিদ করতে থাকে: “এ ব্যক্তি সমুদয় যিহূদীয়ায় এবং গালীল অবধি এই স্থান পর্যন্ত শিক্ষা দিয়া প্রজাদিগকে উত্তেজিত করে।”
যিহূদীদের এই অযৌক্তিক গোঁড়ামি পীলাতকে আশ্চর্য্য করে। তাই, প্রধান যাজকগণ ও প্রাচীনেরা যখন চিৎকার করে চলেছে, তখন পীলাত যীশুর দিকে ফিরে, জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কি শুনিতেছ না, উহারা তোমার বিপক্ষে কত বিষয় সাক্ষ্য দিতেছে?” যীশু কিন্তু উত্তর দেবার কোন চেষ্টা করেন না। এইরূপ উগ্র দোষারোপ সত্ত্বেও তাঁর শান্তভাব পীলাতকে আশ্চর্য্য করে দেয়।
যখন তিনি জানতে পারেন যে যীশু গালীলীয়, তখন পীলাত তার দায়িত্ব এড়াবার পথ দেখতে পান। গালীলের শাসক হচ্ছে, হেরোদ আন্তিপাস (হেরোদ দি গ্রেটের ছেলে), সে নিস্তারপর্বের জন্য যিরূশালেমে ছিল, তাই পীলাত যীশুকে তার কাছে পাঠান। এর আগে এই হেরোদ আন্তিপাস যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক ছেদন করিয়েছিল, আর তারপর যখন যীশু আশ্চর্য্য কাজ করতে আরম্ভ করেন, যীশুই আসলে যোহন যার মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থান হয়েছে এই ভেবে সে ভীত হয়।
এখন, হেরোদ খুব খুশি যে সে যীশুকে দেখতে পাবে। এই জন্য নয় যে সে তাঁর সম্বন্ধে চিন্তিত বা তাঁর বিরুদ্ধে দোষারোপ ঠিক কিনা তা পরীক্ষা করতে চায়। সে কেবল কৌতুহলী, এবং আশায় আছে যে যীশু কিছু আশ্চর্য্য কাজ করবেন।
যীশু, কিন্তু, হেরোদের এই কৌতুহল পূর্ণ করেন না। বস্তুত, যখন হেরোদ তাঁকে প্রশ্ন করে, তিনি কোন উত্তর দেন না। নিরাশ হয়ে, হেরোদ ও তার রক্ষী সৈন্যরা যীশুর সঙ্গে মজা করে। তারা এক উজ্জ্বল বস্ত্র পরিয়ে তাঁর সাথে ঠাট্টা করে। তারপর তারা তাঁকে পীলাতের কাছে ফেরৎ পাঠায়। এর ফলে, হেরোদ ও পীলাত, যারা এর আগে শত্রু ছিল, এখন ভাল বন্ধু হয়।
যখন যীশু ফেরৎ আসেন, পীলাত প্রধান যাজকদের, যিহূদী শাসকদের এবং লোকেদের একসাথে ডেকে পাঠান এবং বলেন: “তোমরা এ ব্যক্তিকে আমার নিকটে এই বলিয়া আনিয়াছ যে, এ লোককে বিপথে লইয়া যায়; আর দেখ! আমি তোমাদের সাক্ষাতে বিচার করিলেও, তোমরা ইহার উপরে যে সকল দোষ আরোপ করিতেছ, তাহার মধ্যে এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইলাম না। আর হেরোদও পান নাই, কেননা তিনি ইহাকে আমাদের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইয়াছেন; আর দেখ! এই ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য কিছুই করে নাই। অতএব আমি ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব।”
এইভাবে পীলাত দুইবার যীশুকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। তিনি তাঁকে মুক্তি দিতে আগ্রহী, কারণ তিনি বুঝতে পারেন যে যাজকেরা হিংসাবশত তাঁকে তার কাছে এনেছে। পীলাত যখন চেষ্টা করছেন যীশুকে মুক্তি দেবার জন্য, সে সম্পর্কে তিনি আরও জোরাল অনুপ্রেরণা পান। যখন তিনি বিচারাসনে বসে, তখন তার স্ত্রী এক সংবাদ পাঠিয়ে অনুরোধ করে বলে: “সেই ধার্মিকের প্রতি তুমি কিছুই করিও না; কারণ আমি আজ স্বপ্নে [স্পষ্টত ঐশিক উৎস থেকে] তাঁহার জন্য অনেক দুঃখ পাইয়াছি।”
কিন্তু, কিভাবে পীলাত এই নির্দোষ ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন, যা তিনি জানেন তার করা উচিত? যোহন ১৮:৩৬-৩৮; লূক ২৩:৪-১৬; মথি ২৭:১২-১৪, ১৮, ১৯; ১৪:১, ২; মার্ক ১৫:২-৫.
▪ যীশু তাঁর রাজপদ সম্বন্ধে প্রশ্নের কিভাবে উত্তর দেন?
▪ “সত্য” কি যার জন্য যীশু পৃথিবীতে তাঁর জীবনকালে সাক্ষ্য বহন করেছেন?
▪ পীলাতের বিচার কি, লোকে কিভাবে সাড়া দেয়, এবং পীলাত যীশুর সাথে কি করেন?
▪ হেরোদ আন্তিপাস কে, সে যীশুকে দেখে আনন্দিত কেন, আর সে তাঁর প্রতি কি করে?
▪ কেন পীলাত যীশুকে মুক্তি দিতে আগ্রহী?