সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পীড়িত লোকেদের প্রতি করুণা

পীড়িত লোকেদের প্রতি করুণা

অধ্যায় ৫৭

পীড়িত লোকেদের প্রতি করুণা

ফরীশীদের নিজ আত্ম-তুষ্টিমূলক পরম্পরাগত রীতির প্রকাশ্যে নিন্দা করার পর, যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে চলে গেলেন। খুব বেশী দিনের কথা নয়, আপনার নিশ্চয় মনে আছে, যীশুর তাদের নিয়ে একটু বিশ্রামের প্রচেষ্টায় বাধা পড়ে যখন জনতা তাদের দেখতে পেয়ে যায়। এখন, তাঁর শিষ্যদের নিয়ে, তিনি বহু কিলোমিটার উত্তরে, সোর ও সীদোন অঞ্চলে চলে গেলেন। ইস্রায়েল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মনে হয় এই একটি যাত্রাই তাঁর শিষ্যদের নিয়ে যীশু করেছিলেন।

থাকবার জন্য একটি গৃহ পেয়ে, তিনি ইহা জানাতে চাইলেন যে, কেউ যেন তাদের বর্তমান ঠিকানা জানতে না পারে। তবুও, ইস্রায়েলের বাইরে এই অঞ্চলেও তিনি লোকের দৃষ্টিতে অজানা রইলেন না। এক গ্রীক স্ত্রীলোক, যে সিরিয়ার ফৈনীকী দেশে জন্ম নেয়, তাঁকে দেখতে পেয়ে বিনতি করতে লাগল: “হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। আমার কন্যাটি ভূতগ্রস্ত হইয়া অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছে।” যীশু, কিন্তু, তার কথার কিছুই উত্তর দিলেন না।

শেষে, তাঁর শিষ্যরা যীশুকে বললেন: “ইহাকে বিদায় করুন, কেননা এ আমাদের পিছনে পিছনে চেঁচাইতেছে।” তাকে অবজ্ঞা করার কারণটি ব্যাখ্যা করে যীশু বললেন: “ইস্রায়েল-কূলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকট আমি প্রেরিত হই নাই।”

তবুও, স্ত্রীলোকটি হাল ছাড়ল না। যীশুর সামনে এসে সে প্রণাম করে। সে মিনতি করে, “প্রভু, আমার উপকার করুন!”

যীশুর হৃদয় হয়ত স্ত্রীলোকটির আন্তরিক আবেদনের জন্য কাতর হয়! তবুও, যীশু পুনরায় উল্লেখ করেন তাঁর প্রথম দায়িত্ব ঈশ্বরের প্রজা ইস্রায়েলের পরিচর্য্যা করা। একই সময়ে, মনে হয় তার বিশ্বাসের পরীক্ষার জন্য তিনি যিহূদীদের অন্য জাতি সংআন্ত গোঁড়া মনোভাবের উপর যুক্তি দেখিয়ে বললেন: “সন্তানদের খাদ্য লইয়া বাচ্চা কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।”

তাঁর করুণাপূর্ণ স্বর ও মুখভাবের দ্বারা যীশু নিশ্চয়ই যারা যিহূদী নয় তাদের প্রতিও নিজের কোমল অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এমনকি পরজাতীয়দের কুকুরের সঙ্গে তুলনাও কোমলতাপূর্বক করেন, কারণ তাদের উল্লেখ করেন “বাচ্চা কুকুর,” অথবা কুকুর ছানা বলে। এই কথায় অসন্তুষ্ট না হয়ে বরং স্ত্রীলোকটি বোঝে যে যীশু যিহূদী গোঁড়ামীর বিষয় বলছেন, তাই নম্র ভাবে সে বলে: “হ্যাঁ, প্রভু, কেননা বাচ্চা কুকুরেরাও আপন আপন কর্ত্তাদের মেজ হইতে যে গুঁড়া গাঁড়া পড়ে, তাহা খায়।”

“হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস,” যীশু জানালেন। “তোমার যেমন ইচ্ছা, তেমনি তোমার প্রতি হউক।” সত্যিই তাই হল! যখন স্ত্রীলোকটি নিজের ঘরে ফিরে গেল, দেখল তার কন্যা বিছানায় রয়েছে আর সম্পূর্ণ সুস্থ।

সীদোনের উপকূল অঞ্চল থেকে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা সেই দেশটি পার হয়ে যর্দ্দন নদীর শেষ প্রান্তে গেলেন। হয়তো তারা যর্দ্দন নদীর এই জায়গায় হেঁটে পার হয়েছিলেন, যেখানে গালীল সমুদ্রের উপরিভাগ দিকাপলি অঞ্চলে ঢুকছে, সমুদ্রের পূর্ব প্রান্তে। এখানে তারা একটি পর্বতে ওঠেন, কিন্তু জনতা তাদের দেখতে পেয়ে তাদের মধ্যে যারা খঞ্জ, বিকলাঙ্গ, অন্ধ, বোবা ও অন্য ধরনের রুগী ও অঙ্গহীনদের যীশুর কাছে আনতে লাগল। তারা প্রায় যীশুর পায়ের কাছে তাদের রাখল, আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন। জনতা আশ্চর্য্য হয়ে গেল, তারা দেখল বোবারা কথা বলছে, খঞ্জেরা চলছে, অন্ধেরা দেখছে; আর তারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের গৌরব করল।

যীশুর বিশেষ মনোযোগ এক ব্যক্তির উপর পড়ে, যে কালা ও খুব তোৎলা। কালা ব্যক্তিরা সবসময়ই হতবুদ্ধি অবস্থায় থাকে, আর বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে। যীশু হয়ত এই ব্যক্তিটির বিশেষ স্নায়বিক দুর্বলতা লক্ষ্য করেন। সুতরাং যীশু সহৃদয় ভাবে ব্যক্তিটিকে ভিড় থেকে নির্ড্জন স্থানে নিয়ে যান। যখন তারা একা, যীশু ইঙ্গিত দিলেন তিনি তার জন্য কি করতে যাচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিটির দুই কানে নিজ আঙুল দিলেন, থুথু ফেললেন, ও তার জিহ্বা স্পর্শ করলেন। এরপর, স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধে দৃষ্টি করে, যীশু দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন ও বললেন: “খুলিয়া যাউক।” তাহাতে, সেই ব্যক্তির শুনবার শক্তি ফিরে আসল এবং সে সাধারণ ব্যক্তির মত কথা বলতে লাগল।

যখন যীশু এই ধরনের বহু আরোগ্য সাধন করেন, জনতা উপলব্ধি সহকারে সাড়া দেয়। তারা বলে: “ইনি সকলই উত্তমরূপে করিয়াছেন। ইনি বধিরদিগকে শুনিবার শক্তি, এবং বোবাদিগকে কথা কহিবার শক্তি দান করেন।” মথি ১৫:২১-৩১; মার্ক ৭:২৪-৩৭.

▪ কেন যীশু তৎক্ষণাৎ সেই গ্রীক স্ত্রীলোকের সন্তানকে সুস্থ করেননি?

▪ এরপর, যীশু কোথায় তাঁর শিষ্যদের নিয়ে যান?

▪ কিভাবে যীশু করুণাবিষ্ট হয়ে সেই বধির ব্যক্তিকে সুস্থ করেন, যে আবার তোৎলাও ছিল?