সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রথমে হানন, তারপর কায়াফার নিকট

প্রথমে হানন, তারপর কায়াফার নিকট

অধ্যায় ১১৯

প্রথমে হানন, তারপর কায়াফার নিকট

যীশুকে একজন সাধারণ অপরাধীর মত বেঁধে, হাননের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যে পূর্বের প্রভাবশালী মহা-যাজক ছিল। হানন মহা যাজক ছিল তখন যখন যীশু ১২ বৎসরের বালক হিসাবে রব্বি গুরুদের মন্দিরে অবাক করে দেন। তার অনেক পুত্ররা তারপর মহা যাজক রূপে কাজ করে, আর বর্ত্তমানে তার জামাতা কায়াফা সেই পদে আছে।

সবেত যীশুকে প্রথমে ধরে হাননের কাছে নিয়ে যাওয়ার কারণ যিহূদী ধর্মীয় জীবনে প্রধান যাজক রূপে তার অনেক দিনের খ্যাতি। হাননের গৃহে থামার জন্য মহাযাজক কায়াফা সময় পায় যিহূদী মহাসভার ৭১ জন সদস্যকে একত্র করতে, এবং মিথ্যা সাক্ষীদের যোগাড় করতে।

প্রধান যাজক হানন এবার যীশুকে প্রশ্ন করে তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে ও তাঁর শিক্ষা সম্বন্ধে। যাইহোক, যীশু উত্তরে বলেন: “আমি স্পষ্টরূপে জগতের কাছে কহিয়াছি। আমি সর্বদা সমাজ-গৃহে ও ধর্ম্মধামে শিক্ষা দিয়াছি, যেখানে যিহূদীরা সকলে একত্র হয়; গোপনে কিছু বলি নাই। আমাকে কেন জিজ্ঞাসা কর? যাহারা শুনিয়াছে, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর, আমি কি বলিয়াছি। দেখ! আমি কি কি বলিয়াছি, ইহারা জানে।” (NW)

এই কথা বলার জন্য এক পদাতিক যে নিকটে দাঁড়িয়েছিল, সে যীশুকে গালে চড় মারে, এই বলে: “মহাযাজককে এমন ভাবে উত্তর দিলি?”

“যদি মন্দ বলিয়া থাকি,” যীশু উত্তর দেন, “সেই মন্দের সাক্ষ্য দাও; কিন্তু যদি ভাল বলিয়া থাকি, কি জন্য আমাকে মার?” এই কথা বার্ত্তার পর, হানন যীশুকে বন্দী অবস্থায় কায়াফার কাছে পাঠিয়ে দেয়।

এরমধ্যে সব প্রধান যাজকরা এবং প্রাচীনরা ও অধ্যপকগণ, হ্যাঁ, সমস্ত মহাসভা, একত্র হতে আরম্ভ করেছে। আর তাদের এই একত্র হবার স্থান কায়াফার গৃহ। নিস্তারপর্বের রাত্রে এইরূপ বিচার স্পষ্টভাবে যিহূদী আইনের বিপরীত। কিন্তু তা ধর্মীয় নেতাদের তাদের মন্দ উদ্দেশ্য থেকে নিবৃত্ত করে না।

কয়েক সপ্তাহ পূর্বে, যখন যীশু লাসারকে পুনরুত্থান দেন, তখনই যিহূদী মহাসভা ঠিক করে তাদের নিজেদের মধ্যে যে তাঁকে মরতে হবেই। আর কেবল দুই দিন পূর্বে, বুধবার দিন, ধর্মীয় নেতারা একসাথে মন্ত্রণা করে যে কি করে কৌশলে যীশুকে ধরে তারা বধ করবে। চিন্তা করুন, তাঁর বিচার হবার পূর্বেই তাঁকে প্রকৃতপক্ষে দোষী সাব্যস্ত করা হয়!

এখন চেষ্টা চলছে মিথ্যা সাক্ষীদের যোগাড় করার যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে যাতে যীশুর বিরুদ্ধে মামলা তৈরী করা যায়। কিন্তু, কোন সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যায় না, যারা তাদের সাক্ষ্যে পরস্পর একমত। শেষে, দুই জন এগিয়ে আসে এবং দাবী করে: “আমরা উহাকে এই কথা বলিতে শুনিয়াছি, ‘আমি এই হস্তকৃত মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আর তিন দিনের মধ্যে অহস্তকৃত আর এক মন্দির নির্ম্মাণ করিব।’”

“তুমি কি কিছুই উত্তর দিবে না?” কায়াফা জিজ্ঞাসা করে। “তোমার বিরুদ্ধে ইহারা কি সাক্ষ্য দিতেছে?” কিন্তু যীশু নীরব থাকেন। এমন কি এই মিথ্যা অভিযোগেও, যিহূদী মহাসভার অবমাননা সত্ত্বেও, সাক্ষ্যদানকারীরা তাদের বানানো ল্পে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। তাই মহাযাজক অন্য উপায় চেষ্টা করে।

কায়াফা জানে যিহূদীরা তার প্রতি দারুণ প্রতিক্রিয়াশীল যদি কেউ দাবি করে যে সে ঈশ্বরের পুত্র। এর আগে হঠকারীরূপে তারা দুই ক্ষেত্রে, যীশুকে ঈশ্বর নিন্দাকারী যার মৃত্যু হওয়া উচিৎ বলেছে, একবার তারা ভুল করে মনে করে যে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান করছিলেন। কায়াফা এখন ধূর্তভাবে জিজ্ঞাসা করে: “আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্য দিতেছি, আমাদিগকে বল দেখি, তুমি কি খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র!”

যিহূদীরা যাই ভাবুক না কেন, যীশু সত্যই ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। যদি তিনি নীরব থাকেন তা বোঝাবে তিনি যে খ্রীষ্ট তা অস্বীকার করছেন। সেই কারণে যীশু সাহসের সাথে উত্তর দেন: “আমিই সেই; আর তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাআমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে ও আকাশের মেঘসহ আসিতে দেখিবে।”

এই কথায় কায়াফা নাটকীয় ভঙ্গিতে, তার বস্ত্র ছিঁড়ে বলে: “এ ঈশ্বরনিন্দা! আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন? দেখ! এখন তোমরা ত ঈশ্বর-নিন্দা শুনিলে। তোমাদের কি বিবেচনা হয়?”

“এ মরিবার যোগ্য,” মহাসভা ঘোষণা করে। তারপর তারা তাঁর উপহাস করতে আরম্ভ করে, ও তাঁর বিপক্ষে ঈশ্বর নিন্দার অনেক কথা বলতে আরম্ভ করে। তারা তাঁর মুখে চড় মারে ও থুথু দেয়। অন্যেরা তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মারে ও মজা করে বলে: “রে খ্রীষ্ট, আমাদের কাছে ভাববাণী বল্‌। কে তোকে মারিল?” এই অশ্লীল ও বিধিবহির্ভূত ব্যবহার চলে রাত্রিকালীন বিচারের সময়। মথি ২৬:৫৭-৬৮; ২৬:৩, ৪; মার্ক ১৪:৫৩-৬৫; লূক ২২:৫৪, ৬৩-৬৫; যোহন ১৮:১৩-২৪; ১১:৪৫-৫৩; ১০:৩১-৩৯; ৫:১৬-১৮.

▪ যীশুকে প্রথমে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সেখানে তাঁর কি ঘটে?

▪ এরপর যীশুকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, এবং কি উদ্দেশ্যে?

▪ কিভাবে কায়াফা যিহূদী মহাসভাকে পরিচালিত করে যীশু মৃত্যুর যোগ্য তা ঘোষণা করতে?

▪ বিচারের সময় কি অশ্লীল ও বিধিবহির্ভূত ব্যবহার করা হয়?