সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রার্থনার ও বিনয়ী হওয়ার প্রয়োজন

প্রার্থনার ও বিনয়ী হওয়ার প্রয়োজন

অধ্যায় ৯৪

প্রার্থনার ও বিনয়ী হওয়ার প্রয়োজন

এর পূর্বে, যীশু যখন যিহূদীয়ায় গিয়েছিলেন, তিনি এক দৃষ্টান্ত দেন যা দেখায় কেন অবিরত প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এখন, তাঁর যিরূশালেমে অন্তিম যাত্রার সময়, তিনি আবার জোর দেন কেন প্রার্থনা বন্ধ করা উচিত নয়। যীশু হয়ত তখনও শমরিয়া বা গালীলে ছিলেন যখন তিনি তাঁর শিষ্যদের এই দৃষ্টান্তটি বলেন:

“কোন এক নগরে এক বিচারকর্ত্তা ছিল, সে ঈশ্বরকে ভয় করিত না, মনুষ্যকেও মানিত না। আর সেই নগরে এক বিধবা ছিল, সে তাহার নিকটে আসিয়া বলিত, ‘অন্যায়ের প্রতীকার করিয়া আমার বিপক্ষ হইতে আমাকে উদ্ধার করুন।’ বিচারকর্ত্তা কিছু কাল পর্যন্ত সম্মত হইল না; কিন্তু পরে মনে মনে কহিল, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না, মনুষ্যকেও মানি না, তথাপি এই বিধবা আমাকে ক্লেশ দিতেছে, এই জন্য অন্যায় হইতে ইহাকে উদ্ধার করিব, পাছে এ সর্বদা আসিয়া আমাকে প্তালাতন করিয়া তুলে।’”

যীশু তারপর এই গল্পের প্রয়োগ করেন, এই বলে: “শুন, ঐ অধার্মিক বিচারকর্ত্তা কি বলে! তবে ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে, যদিও তিনি তাহাদের বিষয়ে দীর্ঘসহিষ্ণু?”

যীশু বোঝাতে চাননি যে যিহোবা ঈশ্বর কোন ভাবে সেই অধার্মিক বিচারকর্তার মত। বরং, যদি এক অধার্মিক বিচারকর্তা সাড়া দেয় সর্বদা পীড়াপীড়ি করার জন্য, তাহলে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না যে ঈশ্বর, যিনি সর্বতোভাবে ধার্মিক ও উত্তম, উত্তর দেবেন, যদি তাঁর লোকেরা প্রার্থনা করা বন্ধ না করে। সুতরাং যীশু বলে চলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, [ঈশ্বর] শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করিবেন।”

যারা গরীব ও নিচু শ্রেণীর লোক, তাদের প্রতি বেশীর ভাগ সময় ন্যায়বিচার করা হয় না, কিন্তু ক্ষমতাবান ও ধনীদের প্রায়ই অনুগ্রহ দেখান হয়। ঈশ্বর, কেবল যে, দুষ্টদের উপযুক্ত সাজা হোক দেখবেন তা নয় কিন্তু তাঁর দাসদের প্রতি ন্যায়বিচার দেখাবেন তাদের অনন্ত জীবন সুনিশ্চিত করে। কিন্তু কত লোক দৃঢ় বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর খুব দ্রুত ন্যায়বিচার করবেন?

প্রার্থনার শক্তির সাথে বিশ্বাসের যোগ আছে উল্লেখ করে, যীশু জিজ্ঞাসা করেন: “যখন মনুষ্যপুত্র আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?” যদিও এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি, এর অর্থ হতে পারে যে যখন খ্রীষ্ট রাজ্যের ক্ষমতায় আসবেন এমন বিশ্বাস হয়ত তখন সাধারণ ব্যাপার হবে না।

যারা যীশুর কথা শুনছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে খুব আস্থাবান ছিল। তারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে ও অন্যদের ঘৃণার চোখে দেখে। যীশুর শিষ্যদের মধ্যেও হয়ত কেউ কেউ এমন ছিলেন যারা এই দলের। তাই পরবর্তী দৃষ্টান্ত তিনি তাদের উদ্দেশ্যে দেন:

“দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করিবার জন্য ধর্ম্মধামে গেল; একজন ফরীশী, আর একজন করগ্রাহী। ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি; আমি সপ্তাহের মধ্যে দুইবার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি।’”

ফরীশীরা জনসাধারণে তাদের ধার্মিকতা প্রদর্শনে খুব উল্লেখযোগ্য যাতে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। যে দিনগুলি তারা আরোপ করেছে উপবাস করার জন্য তা হল সোমবার ও বৃহস্পতিবার, এবং তারা সামান্য বিষয়েও অতি যত্নবান হয়ে দশমাংশ দেয় যেমন তাদের ক্ষেত্র থেকে ক্ষুদ্র শাকগুলির। কয়েক মাস পূর্বে, সাধারণ লোকেদের প্রতি তাদের ঘৃণা তারা ব্যক্ত করে যখন কুটীরবাস পর্বে তারা বলে: “কিন্তু যে লোকসমূহ ব্যবস্থা জানে না, [তা হল, ফরীশীরা যে ব্যাখ্যা দেয়] ইহারা শাপগ্রস্ত।”

তাঁর দৃষ্টান্ত আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে, যীশু এমন এক “শাপগ্রস্ত” লোক সম্বন্ধে বলেন: “কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, ‘হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর।’” এই করগ্রাহী নম্রভাবে তার দোষ স্বীকার করার জন্য, যীশু বলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।”

তাই যীশু আবার জোর দেন নম্র হবার প্রয়োজনীয়তার উপর। যেখানে আত্মধার্মিক ফরীশীরা অধিক প্রভাবশীল এবং যেখানে অবস্থান ও পদের উপর সব সময় জোর দেওয়া হয়, এমন সমাজে মানুষ হয়ে, এমন কি যীশুর শিষ্যরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হবে ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় নয়। কিন্তু, নম্রতা সম্বন্ধে কি উত্তম শিক্ষাই না যীশু দেন! লূক ১৮:১-১৪; যোহন ৭:৪৯.

▪ কেন অধার্মিক বিচারকর্তা বিধবার অনুরোধ মেনে নেয়, এবং যীশুর এই দৃষ্টান্ত দ্বারা কি শিক্ষা পাওয়া যায়?

▪ যীশু যখন আসবেন তখন কি ধরনের বিশ্বাস খুঁজবেন?

▪ কাদের প্রতি যীশু তাঁর ফরীশী ও করগ্রাহীর দৃষ্টান্ত ইঙ্গিত করেন?

▪ ফরীশীদের কি ধরনের মনোভাব এড়ান দরকার?