সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ফরীশীর সঙ্গে ভোজন

ফরীশীর সঙ্গে ভোজন

অধ্যায় ৭৬

ফরীশীর সঙ্গে ভোজন

সেই গোঁগা লোকটিকে যীশুর সুস্থতা প্রদানের শক্তির উৎস কি, সমালোচকদের প্রশ্নের উত্তর দেবার পরে এক ফরীশী তাঁকে ভোজনে নিমন্ত্রণ করে। ভোজনে বসবার আগে, ফরীশীরা রীতি অনুযায়ী হাতের কনুই পর্যন্ত ভাল করে ধুত। তারা ইহা করত আহারের আগে ও পরে এমনকি ভোজের বিভিন্ন পদের মধ্যেও। যদিও এই পরম্পরাগত বিধি ঈশ্বরের লিখিত ব্যবস্থা ভঙ্গ করত না, তবুও এটি আনুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতায় ঈশ্বরের অবশ্যকতাকে ছাড়িয়ে যেত।

যখন যীশু এই ধরনের প্রথা পালন করলেন না, তাঁর নিমন্ত্রণ কর্ত্তা আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন। যদিও তিনি মুখে কিছু বলেননি, যীশু ইহা বুঝতে পেরে বলেন: “তোমরা ফরীশীরা ত পানপাত্র ও ভোজনপাত্র বাহিরে পরিষ্কার করিয়া থাক, কিন্তু তোমাদের ভিতরে দৌরাত্ম্য ও দুষ্টতা ভরা। নির্ব্বোধেরা! যিনি বাহিরের ভাগ নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনি কি ভিতরের ভাগও নির্ম্মাণ করেন নাই?”

যীশু এইভাবে ফরীশীদের কপটতাকে প্রকাশ করে দিলেন যারা প্রথাগত ভাবে তাদের হাত ধোয় কিন্তু হৃদয় দুষ্টতা থেকে পরিষ্কার রাখতে অসমর্থ হয়। তিনি উপদেশ দিলেন: “ভিতরে যাহা যাহা আছে, তাহা দান কর, আর দেখ! তোমাদের পক্ষে সকলই শুচি।” তাদের দান যেন প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়, কিন্তু যেন ধার্মিকতার ভান সহ অপরের মনে ছাপ ফেলবার জন্য না হয়।

“কিন্তু হা ফরীশীরা, ধিক তোমাদিগকে,” যীশু বলে চলেন, “কেননা তোমরা পোদিনা, আরুদ ও সকল প্রকার শাকের দশমাংশ দান করিয়া থাক, আর ন্যায়-বিচার ও ঈশ্বর-প্রেম উপেক্ষা করিয়া থাক! কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকল পরিত্যাগ না করা তোমাদের উচিৎ ছিল।” ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুযায়ী ইস্রায়েলীয়দের অবশ্যকতা ছিল যে দশমাংশ (টাইদ্‌), অর্থাৎ দশভাগের একভাগ, ক্ষেতের শস্য দান করা হয়। পোদিনা বা আরুদ ক্ষেতের ছোট গাছ বা ভেষজ যা খাদ্য দ্রব্য সুগন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। ফরীশীরা এই তুচ্ছ ভেষজ খুব সূক্ষ্মভাবে দশ ভাগের এক ভাগ মেপে দিত, কিন্তু যীশু তাদের দোষারোপ করেন এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যকতা তাচ্ছিল্য করার জন্য, যেগুলি হল প্রেম, সহৃদয়তা ও নম্রতা প্রদর্শন করা।

তাদের অভিযোগ করে যীশু আরও বললেন: “হা ফরীশীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা সমাজ গৃহে প্রধান আসন, ও হাটবাজারে লোকদের মঙ্গলবাদ ভালবাস! ধিক্‌ তোমাদিগকে, কারণ তোমরা এমন গুপ্ত কবরের তুল্য, যাহার উপর দিয়া লোকে না জানিয়া যাতায়াত করে!” তাদের অশুচিতা প্রতীয়মান নয়। ফরীশীদের ধর্ম বাইরে থেকে জমকাল কিন্তু ভিতরের মূল্য নাই! ইহা কপটতার উপর ভিত্তিযুক্ত।

এই দোষারোপ শুনিয়া, তাদের মধ্যে একজন, ঈশ্বরের ব্যবস্থায় পারদর্শী ব্যক্তি প্রতিবাদ করলেন: “হে গুরু, এ কথা বলিয়া আপনি আমাদের অপমান করিতেছেন।”

তিনি এই ব্যবস্থায় পারদর্শী ব্যক্তিদেরও দায়ী বলে জানালেন: “হা ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্‌ তোমাদিগকেও, কেননা তোমরা মনুষ্যদের উপরে দুর্বহ বোঝা চাপাইয়া দিয়া থাক, কিন্তু আপনারা একটি অঙ্গুলি দিয়াও সেই সকল বোঝা স্পর্শ কর না! ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা ভাববাদীদের কবর গাঁথিয়া থাক, আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁহাদিগকে বধ করিয়াছিল!”

যে বোঝা যীশু উল্লেখ করেন তা হল মৌখিক বিধিগুলি, কিন্তু এই সমস্ত ব্যবস্থাবেত্তারা একটি ছোট রীতিকেও সরাতে চায় না যেন মানুষের পক্ষে এগুলি সহজসাধ্য হয়। যীশু প্রকাশ করেন যে তারা ভাববাদীদের হত্যাতেও সম্মতি দিয়েছে, তাই তিনি সাবধান করলেন: “‘জগতের পত্তনাবধি যত ভাববাদীর রক্তপাত হইয়াছে, তাহার প্রতিশোধ এই কালের লোকদের কাছে লওয়া [যাইবে], হেবলের রক্ত অবধি সেই সখরিয়ের রক্ত পর্যন্ত, যিনি যজ্ঞবেদি ও মন্দিরের মধ্যস্থানে নিহত হইয়াছিলেন।’ হ্যাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই কালের লোকদের কাছে তাহার প্রতিশোধ লওয়া যাইবে।”

উদ্ধার লাভের উপযোগী মানব জগতের শুরু হয় আদম ও হবার সন্তানদের দ্বারা; এইরূপে হেবল, “জগতের পত্তনকালে” বসবাস করতেন বলা হল। সখরিয়ের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পর, এক সিরীয় সেনাবাহিনী যিহূদাকে লুণ্ঠন করে। কিন্তু যীশু নিজ কালের লোকদের ভীষণ ধরনের মন্দ কাজের জন্য এর থেকেও বিপর্য্যয়মূলক পরাজয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই ধ্বংস আসে প্রায় ৩৮ বছর পরে, ৭০ সা.শ.-তে।

তাঁর দোষারোপে, যীশু আরও বলে চলেন: “হা ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা জ্ঞানের চাবি হরণ করিয়া লইয়াছ; আপনারা প্রবেশ করিলে না, এবং যাহারা প্রবেশ করিতেছিল, তাহাদিগকেও বাধা দিলে!” এই ব্যবস্থাবেত্তারা কর্তব্য-বদ্ধ ছিল যে মানুষকে ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করবে, এর অর্থকে প্রকাশ করবে। কিন্তু তারা এটি করতে অসমর্থ এমনকি মানুষের কাছে এই বোধগম্যতার সুযোগটি পর্যন্ত হরণ করতে চায়।

এই ফরীশী ও নিয়ম বিশেষজ্ঞরা যীশুর উপর আধান্বিত হয়ে উঠল কারণ তিনি তাদের প্রকাশ করে দিলেন। যখন তিনি সেই গৃহের বাইরে গেলেন, তারা তাঁকে বিরোধীতা ও প্রশ্নের দ্বারা অস্থির করে তুলল। তারা তাঁর মুখের কথা ধরে ফাঁদে ফেলে তাঁকে বন্দী করার প্রচেষ্টায় রইল। লূক ১১:৩৭-৫৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:২২; মীখা ৬:৮; ২ বংশাবলি ২৪:২০-২৫.

▪ যীশু কেন ফরীশী ও অধ্যাপকদের দোষারোপ করেন?

▪ কোন বোঝা ব্যবস্থাবেত্তারা মানুষের উপর চাপায়?

▪ “জগতের পত্তনের” সময়টি কখন?