সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বৈথনিয়াতে, শিমোনের বাড়ীতে

বৈথনিয়াতে, শিমোনের বাড়ীতে

অধ্যায় ১০১

বৈথনিয়াতে, শিমোনের বাড়ীতে

যীশু যখন যিরীহো ত্যাগ করেন, তিনি বৈথনিয়ার অভিমুখে রওনা হন। এই যাত্রা প্রায় সমস্ত দিন নিয়ে নেয়, কারণ এই পথে প্রায় ১৯ কিলোমিটার রাস্তা খুব চড়াই অতিক্রম করে যেতে হয়। যিরীহো সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২৫০ মিটার নীচু, আর বৈথনিয়া সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৭৬০ মিটার উঁচু। আপনার মনে থাকতে পারে যে, লাসার ও তার ভগ্নীরা, এই বৈথনিয়াতে বাস করতেন। এই ছোট গ্রামটি যিরূশালেম থেকে কেবল ৩ কিলোমিটার দূরে, জৈতুন পর্বতের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

অনেকে যিরূশালেম পৌঁছে গেছে নিস্তারপর্বের জন্য। তারা আগে থেকে এসেছে যাতে নিয়ম অনুসারে নিজেদের শুদ্ধ করতে পারে। হয়ত তারা মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ বা অন্য কিছু করেছে যা তাদের অশুচি করেছে। তাই তারা তাদের রীতি অনুসারে নিজেদের ধৌত করতে এসেছে যাতে নিস্তারপর্ব উদযাপন করতে পারে। এই পূর্বে আগত ব্যক্তিরা যখন মন্দিরে আসতে আরম্ভ করে, অনেকে চিন্তা করতে থাকে যীশু এই নিস্তারপর্বে আসবেন কিনা।

যিরূশালেম তখন যীশুর সম্বন্ধে বাদানুবাদের অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। সকলে জানে যে ধর্মীয় নেতারা তাঁকে বধ করতে চায়। এমনকি, তারা আদেশ দিয়েছে যে যদি কেউ তাঁর খোঁজ জানে, তারা যেন তাদের খবর দেয়। বিগত মাসগুলিতে তিনবার তারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছে—কুটীরবাস উৎসবে, উৎসর্গের উৎসবে, ও লাসারকে পুনরুত্থান দেবার পর। তাই, লোকেরা চিন্তা করছে, যে তিনি জনসাধারণের সামনে আর একবার দেখা দেবেন কিনা? “তোমার ধারণা কি?” তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে।

এর মধ্যে যীশু বৈথনিয়াতে উপস্থিত হন, তখন নিস্তারপর্বের আর ছয়দিন বাকি, যা যিহূদী ক্যালেণ্ডার অনুসারে নিশান ১৪ তারিখে পড়ে। যীশু বৈথনিয়াতে পৌঁছান শুআবার বিকালে, নিশান ৮ তারিখের অরম্ভে। তিনি বৈথনিয়া যাবার যাত্রা শনিবার শুরু করেননি কারণ—শুআবার সূর্য্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্য্যাস্ত অবধি—বিশ্রামবার যে সময় ভ্রমণ যিহূদী আইনে বারণ। যীশু সবেত লাসারের গৃহে যান, যেমন তিনি পূর্বেও গিয়েছেন, এবং শুআবার রাত সেখানে কাটান।

যাহোক, বৈথনিয়ার আর এক অধিবাসী যীশুকে ও তাঁর সঙ্গীদের ভোজনে আমন্ত্রণ করে শনিবার দিন সন্ধ্যায়। সেই ব্যক্তি হচ্ছে শিমোন, যে আগে একজন কুষ্ঠী ছিল, যাকে হয়ত যীশু ভাল করেছিলেন। তার পরিশ্রমী স্বভাবের জন্য, মার্থা অতিথিদের পরিচর্য্যা করছিলেন। কিন্তু, মরিয়ম তার স্বভাব অনুসারে, যীশুর প্রতি মনোযোগী ছিলেন, এবার এমনভাবে যা বিতর্ক উৎপন্ন করে।

মরিয়ম প্রায় আধ কিলোগ্রাম ওজনের বহুমূল্য সুগন্ধি তৈল, “জটামাংসীর আতর”-এর এক শ্বেতপ্রস্তরের পাত্র খোলে। ইহা খুবই মূল্যবান। তার মূল্য, প্রায় এক বৎসরের উপার্জনের সমান! মরিয়ম যীশুর মাথায় ও পায়ে সেই তেল ঢেলে তার চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দেয়, আর সুগন্ধে সারা ঘর পূর্ণ হয়।

শিষ্যরা আধান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে: “এ অপব্যয় কেন?” তখন ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বলে: “এই আতর তিন শত সিকিতে বিআয় করিয়া কেন দরিদ্রদিগকে দেওয়া গেল না?” আসলে যিহূদা গরীবদের বিষয়ে চিন্তিত ছিল না, কারণ শিষ্যরা যে পয়সার বাক্স রেখেছিল তার থেকে সে চুরি করত।

যীশু মরিয়মের হয়ে বলেন। “ইহাকে থাকিতে দাও,” তিনি আজ্ঞা করেন। “কেন ইহাকে দুঃখ দিতেছ? এ আমার প্রতি সৎকার্য্য করিল। কেননা দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্বদাই আছে, তোমরা যখন ইচ্ছা কর, তাহাদের উপকার করিতে পার; কিন্তু তোমরা আমাকে সর্বদা পাইবে না। এ যাহা করিতে পারিত, তাহাই করিল; অগ্রে আসিয়া সমাধির উপলক্ষে আমার দেহে সুগন্ধি তৈল ঢালিয়া দিল। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে এই সুসমাচার প্রচারিত হইবে, সেই স্থানে ইহার এই কর্ম্মের কথাও ইহার স্মরণার্থে বলা যাইবে।”

যীশু এখন বৈথনিয়াতে প্রায় ২৪ ঘন্টার বেশী সময় ধরে আছেন, এবং তাঁর উপস্থিতির কথা রটে গেছে। তাই অনেকে শিমোনের গৃহে যীশুকে দেখতে আসে, তারা লাসারকেও দেখতে আসে, কারণ সেও সেখানে উপস্থিত আছে। তাই প্রধান যাজকগণ কেবল যীশুকে নয় লাসারকেও হত্যা করার মন্ত্রণা করে। কারণ অনেকে সেই মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থান দেখে যীশুর উপর বিশ্বাস করছিল! সত্যই, এই ধর্মীয় নেতারা কত মন্দ! যোহন ১১:৫৫–১২:১১; মথি ২৬:৬-১৩; মার্ক ১৪:৩-৯; প্রেরিত ১:১২.

▪ যিরূশালেমের মন্দিরে কি আলোচনা হচ্ছে, এবং কেন?

▪ কেন যীশু বৈথনিয়াতে শনিবারে নয়, কিন্তু শুআবারে পৌঁছান?

▪ যীশু যখন বৈথনিয়াতে উপস্থিত হলেন, কোথায় তিনি বিশ্রামবার আতিবাহিত করেন?

▪ মরিয়মের কোন কাজ বিতর্কের সূত্রপাত করে, আর যীশু কিভাবে তাকে সমর্থন করেন?

▪ কি প্রধান যাজকদের মহা দুষ্টতা প্রমাণ করে?