সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ব্যবহারিক বুদ্ধি দ্বারা ভবিষ্যতের জন্য যোগান

ব্যবহারিক বুদ্ধি দ্বারা ভবিষ্যতের জন্য যোগান

অধ্যায় ৮৭

ব্যবহারিক বুদ্ধি দ্বারা ভবিষ্যতের জন্য যোগান

যীশু সবেমাত্র অপব্যয়ী পুত্রের গল্পটি এক জনতার কাছে শেষ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে তাঁর শিষ্যরা, অসৎ করগ্রাহী ও কুখ্যাত পাপীরা এবং ফরীশী ও অধ্যাপকেরা। এখন, তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্যে, তিনি এক দৃষ্টান্ত বললেন এক ধনী ব্যক্তির বিষয়ে, যিনি তার গৃহাধ্যক্ষ (স্টুয়ার্ড) সম্বন্ধে কিছু অপ্রীতিকর কথা শুনেছেন।

যীশুর কথা অনুযায়ী, সেই ধনী ব্যক্তি তার দেওয়ানকে ডেকে বললেন তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন। “কি করিব, আমার প্রভু ত আমার নিকট হইতে দেওয়ানী পদ লইতেছেন?” দেওয়ান মনে মনে ভাবে। “মাটি কাটিবার বল আমার নাই, ভিক্ষা করিতে আমার লজ্জা হয়। আমার দেওয়ানী পদ গেলে লোকে যেন আপন আপন গৃহে আমাকে গ্রহণ করে, এজন্য যাহা করিব, তাহা বুঝিলাম।”

এই দেওয়ানের পরিকনো কি ছিল? তিনি নিজ প্রভুর প্রত্যেক ঋণীকে ডেকে পাঠালেন। “তুমি আমার প্রভুর কত ধার?” সে জিজ্ঞাসা করে।

প্রথম জন বলল, ‘এক শত মণ তৈল।’

‘তোমার ঋণপত্র লও, ও শীঘ্র বসিয়া পঞ্চাশ লেখ,’ সে তাকে বলল।

পরে সে আর একজনকে বলল, ‘তুমি কত ধার?’

‘এক শত বিশি গম,’ সে বলল।

‘তোমার ঋণপত্র লইয়া আশী লেখ।’

এই দেওয়ানের অধিকার ছিল তার প্রভুর ঋণপত্রে কম করার, কারণ সে তখনও প্রভুর অর্থের হিসাবরক্ষক ছিল। এই ঋণ ভার কমিয়ে দিয়ে, সে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছে যারা তাকে সাহায্য করতে পারে যখন তার চাকুরি থাকবে না।

যখন প্রভু জানতে পারলেন কি হয়েছে, তিনি প্রভাবিত হলেন। প্রকৃত পক্ষে, তিনি দেওয়ানের প্রশংসা করলেন, “যদিও সে অধার্মিক, কিন্তু বুদ্ধিমানের কর্ম্মই করিয়াছে।” যার জন্য, যীশু যোগ দিলেন: “বাস্তবিক এই যুগের সন্তানেরা নিজ জাতির সম্বন্ধে দীপ্তির সন্তানগণ অপেক্ষা বুদ্ধিমান।”

এবারে, তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে, দৃষ্টান্তটির প্রসঙ্গে যীশু উৎসাহ দিলেন: “আপনার জন্য অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্রলাভ কর, যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে।”

যীশু সেই দেওয়ানের অধার্ম্মিকতার প্রশংসা করছেন না কিন্তু তার সুদূর-প্রসারী, ব্যবহারিক বুদ্ধির জন্য করছেন। প্রায়ই “এই যুগের সন্তানরা” বিচক্ষণতার সাথে তাদের অর্থ বা প্রতিপত্তি ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যাদের কাছে পরে তারা কিছু পাবে। কাজেই “দীপ্তির সন্তানগণ,” যারা ঈশ্বরের দাস, তাদেরও উচিত তাদের জাগতিক সম্পদকে, “অধার্ম্মিক ধনকে,” বুদ্ধিপূর্বক ব্যবহার করা যাতে নিজেদের উপকার হয়।

কিন্তু যেমন যীশু বলেন, তারা বন্ধুত্ব করবে এই ধনের দ্বারা তাদেরই সঙ্গে, যারা তাদের “অনন্ত আবাসে গ্রহণ করবে।” ক্ষুদ্র মেষ পালেদের জন্য, এই আবাস হল স্বর্গ; “অপর মেষের” জন্য, ইহা হবে পরমদেশ পৃথিবীতে। যেহেতু একমাত্র যিহোবা ও যীশু ব্যক্তিদের এই স্থানগুলিতে গ্রহণ করবেন, তাই আমাদের সচেষ্ট হতে হবে এবং আমাদের তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে এই “অধার্ম্মিক ধন” যা আমাদের আছে তা রাজ্যের প্রচার কাজের সাহায্যার্থে ব্যয় করে। তাই, যখন পার্থিব ধন ব্যর্থ বা শেষ হবে, যা নিশ্চিত হবেই, আমাদের অনন্তকালীন ভবিষ্যৎ কিন্তু নিশ্চিৎ থেকে যাবে।

যীশু বলে গেলেন, যে ব্যক্তি এই জাগতিক বস্তু ও তুচ্ছ বিষয়ে বিশ্বস্ত থাকবে, সে বৃহত্তর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি রক্ষার্থেও বিশ্বস্ত থেকে যাবে। “অতএব,” তিনি বললেন, “তোমরা যদি অধার্ম্মিকতার ধনে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে বিশ্বাস করিয়া তোমাদের কাছে সত্য ধন [যা হল আত্মিক, বা রাজ্যের, আগ্রহ] তা রাখিবে? আর যদি পরের [রাজ্যের আগ্রহ সম্পর্কিত বিষয় যা ঈশ্বর তাঁর দাসদের কাছে রাখেন] বিষয়ে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে তোমাদের নিজ [অনন্তকালীন আবাস সম্পর্কিত যে পুরস্কার] বিষয় তোমাদিগকে দিবে?”

আমরা ঈশ্বরের সত্য দাস ও তার সঙ্গে অধার্মিক ধনের, বা জাগতিক ধনের দাস হয়ে থাকতে পারি না, যেমন যীশু শেষ করেন: “কোন ভৃত্যই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করতে পারে না, কেননা সে হয় একজনকে ঘৃণা করিবে, অন্যকে প্রেম করিবে, নয়ত একজনের অনুরক্ত হইবে, অন্যকে তুচ্ছ করিবে। তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” লূক ১৫:১, ২; ১৬:১-১৩; যোহন ১০:১৬.

▪ কিভাবে যীশুর দৃষ্টান্তের দেওয়ান তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যারা তাকে পরে সাহায্য করতে পারবে?

▪ “অধার্ম্মিকতার ধন” কি, আর ইহার দ্বারা আমরা কিভাবে বন্ধুত্ব করতে পারি?

▪ কারা আমাদের “অনন্তকালীন আবাসে” গ্রহণ করবেন, আর এই স্থানগুলি কি?