সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ভূতগ্রস্ত বালকের আরোগ্যলাভ

ভূতগ্রস্ত বালকের আরোগ্যলাভ

অধ্যায় ৬১

ভূতগ্রস্ত বালকের আরোগ্যলাভ

যখন যীশু, পিতর, যোহন ও যাকোব কোথাও গেছিলেন, হয়ত হর্ম্মন পাহাড়ের উপরেই গেছিলেন, সেই সময়ে তাঁর অন্য শিষ্যরা এক সমস্যার মধ্যে পড়েন। ফিরে এসে, যীশু তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলেন যে কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। তাঁর শিষ্যদের জনতা ঘিরে ধরেছে এবং অধ্যাপকরা তাদের সঙ্গে তর্ক করে চলেছে। যীশুকে দেখামাত্র, লোকেরা অতিশয় চমৎকৃত হয়ে তাঁর নিকট দৌড়ে এসে তাঁকে মঙ্গলবাদ জানায়। “ইহাদের সঙ্গে তোমরা কোন্‌ বিষয়ে বাদানুবাদ করিতেছ?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।

ভিড়ের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে যীশুর সামনে হাঁটু গেড়ে এই কথা বলে: “হে গুরু, আমার পুত্রটিকে আপনার কাছে আনিয়াছিলাম, তাহাকে বোবা আত্মায় পাইয়াছে; আর সেটি তাহাকে যেখানে ধরে, সেখানে আছাড় মারে, আর তাহার মুখে ফেনা ওঠে, আর সে দাঁত কিড়মিড় করে, আর কাট হইয়া যায়। আমি আপনার শিষ্যদিগকে তাহা ছাড়াইতে বলিলাম, কিন্তু তাহারা পারিলেন না।”

হয়ত অধ্যাপকরা অতিরিক্ত ভাবে দেখাতে চাইছিল যে শিষ্যরা এই বালকটির সুস্থতা দানে অপারগ, হয়ত বা তাদের প্রচেষ্টাকে উপহাস করতে চাইছিল। আর এই সঙ্কটকালেই, যীশু সেখানে এলেন। “হে অবিশ্বাসী বংশ,” তিনি বললেন, “আমি কতকাল তোমাদের নিকটে থাকিব? কতকাল তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করিব?”

যীশুর কথাগুলি যেন মনে হল সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলছেন, কিন্তু সন্দেহ নেই বিশেষ করে এগুলি অধ্যাপকদের উদ্দেশ্যেই বলা, যারা তাঁর শিষ্যদের সঙ্কটের পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এরপর, যীশু সেই বালকটির সম্বন্ধে বললেন: “উহাকে আমার নিকটে আন।” কিন্তু যেমনই বালকটি যীশুর নিকটবর্ত্তী হয়, সেই আত্মা তাকে অতিশয় মুচড়িয়ে ধরল। আর সে মাটিতে পড়ে ফেনা ভেঙ্গে গড়াগড়ি দিতে লাগল।

“ইহার কতদিন এমন হইয়াছে?” যীশু জিজ্ঞাসা করলেন।

“ছেলেবেলা থেকে,” পিতা উত্তর দিলেন। “আর [সেই আত্মা] ইহাকে বিনাশ করিবার নিমিত্ত অনেকবার আগুনে ও অনেকবার জলে ফেলিয়া দিয়াছে।” আর পিতা অনুনয় করলেন: “আপনি যদি কিছু করিতে পারেন, তবে আমাদের প্রতি দয়া করিয়া উপকার করুন।”

হয়ত বহু বছর ধরে, পিতা এ বিষয়ে সাহায্যের রাস্তা খুঁজেছেন। আর এখন, যখন যীশুর শিষ্যরাও অপারগ, তার হতাশা বেড়েই যাচ্ছে। যীশু সেই ব্যক্তির আকুল অনুরোধে উৎসাহজনকভাবে বলেন: “‘যদি পারেন’! যে বিশ্বাস করে, তাহার পক্ষে সকলই সাধ্য।”

“বিশ্বাস করিতেছি!” অমনি সেই বালকটির পিতা অনুনয় করে উঠলেন: “আমার অবিশ্বাসের প্রতিকার করুন!”

পরে লোকেরা একসঙ্গে দৌড়ে আসছে লক্ষ্য করে, যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমকিয়ে বললেন: “হে বধির গোঁগা আত্মা, আমি তোমাকে আজ্ঞা দিতেছি, ইহা হইতে বাহির হও, আর কখনও ইহার মধ্যে প্রবেশ করিও না।” যেমনই আত্মাটি বের হল, তখন বালকটি চিৎকার করে উঠল, আর আত্মা তাকে বার বার মুচড়ে ধরল। তাতে বালকটি মরার মত হয়ে গেল, আর অধিকাংশ লোক বলতে লাগল: “সে মরিয়া গিয়াছে!” কিন্তু যীশু তার হাত ধরে তুললে, সে উঠল।

এর আগে, যখন শিষ্যরা প্রচার কার্য্যে গিয়েছিলেন, তারা অশুচি আত্মাদের বের করে দিতে পেরেছিলেন। তাই এবারে, তারা এক গৃহে প্রবেশ করে, যীশুকে একান্তে জিজ্ঞাসা করলেন: “আমরা কেন সেটা ছাড়াইতে পারিলাম না?”

তাদের বিশ্বাসের অভাবের উপর যীশু ইঙ্গিত করে, উত্তর দিলেন: “প্রার্থনা ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না।” স্পষ্টতঃই এই ধরনের শক্তিশালী অশুচি আত্মাকে বার করতে হলে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে ঈশ্বরের শক্তির সাহায্য চেয়ে প্রার্থনার প্রয়োজন ছিল।

এরপর যীশু যোগ করলেন: “কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটি সরিষাদানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে, তবে তোমরা এই পর্বতকে বলিবে, ‘এখান হইতে ঐখানে সরিয়া যাও,’ আর ইহা সরিয়া যাইবে, এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না।” বিশ্বাস কত শক্তিশালী হতে পারে!

যিহোবার সেবায় যে বাধা ও সমস্যাগুলি উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তা অনেক সময় এক বিরাট পর্বতের সমান মনে হয়, যা অতিক্রমের অসাধ্য ও অনড়। তথাপি, যীশু এখানে বুঝিয়ে দিলেন, যদি আমরা হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে উঠতে দিই, জলসেচন ও উৎসাহ প্রদানের দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করি, তবে এটি আমাদের পরিপক্ক করে তুলবে এবং এ ধরনের পর্বতসম বাধা ও সমস্যাগুলিকেও কাটিয়ে উঠতে সমর্থ করবে। মার্ক ৯:১৪-২৯; মথি ১৭:১৯, ২০; লূক ৯:৩৭-৪৩.

▪ হর্ম্মোণ পর্বত থেকে ফিরবার পরে কোন্‌ পরিস্থিতির সম্মুখীন যীশু হয়েছিলেন?

▪ কি ধরনের উৎসাহ যীশু সেই অশুচি আত্মাগ্রস্ত বালকটির পিতাকে দিয়েছিলেন?

▪ শিষ্যরা কেন সেই অশুচি আত্মাকে তাড়াতে পারেননি?

▪ বিশ্বাস কত শক্তিশালী হতে পারে যীশু কিভাবে বুঝিয়ে দিলেন?