সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মন্দিরে পরিচর্য্যা সম্পূর্ণ হয়

মন্দিরে পরিচর্য্যা সম্পূর্ণ হয়

অধ্যায় ১১০

মন্দিরে পরিচর্য্যা সম্পূর্ণ হয়

যীশুর মন্দিরে শেষ আবির্ভাব। বস্তুত, তিনি পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্য্যা সমাপ্ত করেছেন, কেবল তাঁর বিচার ও মৃত্যু ছাড়া, যা মাত্র আর তিন দিন পরে ঘটবে। এখন তিনি অধ্যাপকগণ ও ফরীশীদের ভর্ৎসনা করে চলেন।

আরও তিনবার তিনি বলে ওঠেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক তোমাদের!” প্রথমে, তিনি তাদের ধিক্কার জানান কারণ তারা পরিষ্কার করে “পানপাত্র ও ভোজনপাত্র বাহিরে, কিন্তু সেগুলির ভিতরে দৌরাত্ম্য ও অন্যায় ভরা।” তাই তিনি উপদেশ দেন: “আগে পানপাত্র ও ভোজনপাত্র ভিতরে পরিষ্কার কর, যেন তাহা বাহিরেও পরিষ্কার হয়।”

এরপর তিনি অধ্যাপক ও ফরীশীদের উদ্দেশ্যে ধিক্কার জানান কারণ তারা ভিতরের পচা জিনিসগুলি বাহিরের ভক্তি দেখিয়ে ঢাকতে চায়। “তোমরা চুণকাম করা কবরের তুল্য,” তিনি বলেন, “তাহা বাহিরে দেখিতে সুন্দর বটে, কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের অস্থি ও সর্বপ্রকার অশুচিতা ভরা।”

শেষে, তাদের কপটতা প্রকাশ পায় যে তারা ভাববাদীদের কবর সুন্দর করে বাঁধিয়ে ও সাজিয়ে রাখে যাতে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে তাদের উদারতার প্রতি। কিন্তু, যীশু যেমন ব্যক্ত করেন, তারা “যাহারা ভাববাদীগণকে বধ করিয়াছিল তাহাদেরই সন্তান।” সত্যই, যে কেহ তাদের কপটতা ব্যক্ত করে তারা বিপদে পড়ে!

এরপর বলতে গিয়ে, যীশু তাঁর ভর্ৎসনার সব থেকে কঠোর বাক্য উচ্চারণ করেন। “সর্পেরা, কালসর্পের বংশেরা,” তিনি বলেন, “তোমরা কেমন করিয়া গিহেন্নার বিচার দণ্ড এড়াইবে?” গিহেন্না যিরূশালেমে এক উপত্যকা যা আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই যীশু বলছেন যে দুষ্টতার পথ নেওয়ার জন্য অধ্যাপকগণ ও ফরীশীরা অনন্ত ধ্বংসে যাবে।

যাদের তিনি তাঁর প্রতিনিধি রূপে পাঠান তাদের সম্বন্ধে, যীশু বলেন: “তাহাদের মধ্যে কতক জনকে তোমরা বধ করিবে ও যাতনা দণ্ডে দিবে, কতক জনকে তোমাদের সমাজগৃহে কোড়া মারিবে, এবং এক নগর হইতে আর এক নগরে তাড়না করিবে, যেন পৃথিবীতে যত ধার্ম্মিক লোকের রক্তপাত হইয়া আসিতেছে, সে সমস্ত তোমাদের উপরে বর্ত্তে—ধার্ম্মিক হেবলের রক্তপাত অবধি, বরখিয়ের [যার নাম ২ বংশাবলিতে যিহোয়াদা], পুত্র যে সখরিয়কে তোমরা মন্দিরের ও যজ্ঞবেদীর মধ্যস্থানে বধ করিয়াছিলে, তাঁহার রক্তপাত পর্যন্ত। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের লোকদের উপরে এই সমস্তই বর্ত্তিবে।”

যেহেতু সখরিয় ইস্রায়েলের নেতাদের শাসন করেন, “তারা তাঁর বিরুদ্ধে চআন্ত করে রাজার আজ্ঞায় যিহোবার গৃহের প্রাঙ্গণে পাথরের আঘাতে তাকে মেরে ফেলে।” কিন্তু যেমন যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ইস্রায়েলকে এই সব ধার্ম্মিক রক্তপাত করার মূল্য দিতে হবে। তারা এর মূল্য দেয় ৩৭ বৎসর পরে, ৭০ সা.শ., যখন রোমীয়রা এসে যিরূশালেম ধ্বংস করে এবং প্রায় দশ লক্ষ যিহূদীকে হত্যা করে।

যীশু যখন এই ভয়ানক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেন, তিনি দুঃখিত হন। “যিরূশালেম, যিরূশালেম,” তিনি আবার ঘোষণা করেন, “কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কতবার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি! কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ! তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।”

যীশু এরপর যোগ করেন: “তোমরা এখন অবধি আমাকে আর দেখিতে পাইবে না, যে পর্যন্ত না বলিবে, ‘ধন্য তিনি, যিনি যিহোবার নামে আসিতেছেন!’” সেই দিন হবে খ্রীষ্টের উপস্থিতিতে যখন তিনি তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যে আসবেন আর লোকেরা তাদের বিশ্বাসের চোখে তাঁকে দেখবে।

যীশু এবার এমন এক জায়গা নিলেন যেখান থেকে মন্দিরের দান বাক্স দেখা যায় আর তিনি লক্ষ্য করেন যে লোকেরা তাতে দান ফেলছে। যারা ধনী তারা অনেক মুদ্রা দেয়। কিন্তু এক দরিদ্রা বিধবা এসে অত্যন্ত কম মূল্যের দুই মুদ্রা ফেলে।

তাঁর শিষ্যদের ডেকে, যীশু বলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল।” তারা চিন্তা করে এইরূপ কিভাবে হতে পারে। তাই যীশু ব্যাখ্যা করেন: “কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল।” এই কথা বলার পর যীশু শেষ বারের মত মন্দির থেকে প্রস্থান করেন।

সেই মন্দিরটির আয়তন ও সৌন্দর্য্য দেখে, তাঁর শিষ্যরা বিস্ময়ে বলেন: “হে গুরু, দেখুন! কেমন পাথর ও কেমন গাঁথনি!” কারণ, বর্ণনা দেখায় যে এই পাথরগুলি প্রায় ১১ মিটার লম্বা, ৫ মিটার চওড়া এবং ৩ মিটার উচ্চতায় ছিল!

“তোমরা কি এই সকল বড় বড় গাঁথনি দেখিতেছ?” যীশু উত্তর করেন, “ইহার একখানি পাথরের উপরে আর একখানি পাথর থাকিবে না, সকলই ভূমিসাৎ হইবে।”

এই সব বলার পর, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা কিদ্রোন স্রোত পার হয়ে জৈতুন পর্বতে ওঠেন। আর সেখান থেকে সেই অপূর্ব মন্দির লক্ষ্য করেন। মথি ২৩:২৫–২৪:৩; মার্ক ১২:৪১–১৩:৩; লূক ২১:১-৬; ২ বংশাবলি ২৪:২০-২২.

▪ যীশু মন্দিরে তাঁর অন্তিম পরিদর্শনে কি করেন?

▪ অধ্যাপকগণ ও ফরীশীদের কপটতা কিভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে?

▪ “গিহেন্নার দণ্ডে” দণ্ডিত হবার অর্থ কি?

▪ যীশু কেন বলেন যে সেই বিধবা ধনীদের থেকে অধিক দিল?