সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মেষদের খোঁয়াড় ও মেষপালক

মেষদের খোঁয়াড় ও মেষপালক

অধ্যায় ৮০

মেষদের খোঁয়াড় ও মেষপালক

যীশু যিরূশালেমে এসেছেন উৎসর্গীকরণ, বা হানুক্কা পর্ব উপলক্ষে, একটি পর্ব যা মন্দির পুনরায় যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকরণে পালিত হয়। ১৬৮ সা.শ.পূ., প্রায় ২০০ বছর আগে, ৪র্থ অ্যান্টিওকাস্‌ ইপিফেনেস্‌ যিরূশালেম অধিকার করে এবং মন্দির ও তার বেদী অপবিত্র করে। তবে, তিন বছর পরে যিরূশালেম আবার পুনরাধিকারে আসে এবং মন্দির পুনরুৎসর্গীকৃত হয়। পরে, এক বার্ষিক পুনরুৎসর্গীকরণের পর্ব উদ্‌যাপিত হয়।

এই উৎসর্গীকরণ পর্বের সময় ছিল ২৫শে চিজলেভ্‌, যিহূদী ক্যালেণ্ডার মাস যা আমাদের আধুনিক ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী নভেম্বরের শেষভাগ ও ডিসেম্বরের প্রথম ভাগ। এইরূপে, ৩৩ সা.শ. সেই স্মরণীয় নিস্তারপর্বের আর মাত্র ১০০ দিনের কিছু বেশী বাকি। যেহেতু এই ঋতুটি ঠাণ্ডার সময়, প্রেরিত যোহন একে বলেন “শীতকাল।”

যীশু এখন এক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করলেন, যাতে তিনি তিনটি মেষের খোঁয়াড় এবং উত্তম মেষপালক রূপে তাঁর ভূমিকা উল্লেখ করেন। যে প্রথম খোঁয়াড়টি সম্বন্ধে তিনি বলেন তা মোশির ব্যবস্থা চুক্তি সম্পর্কিত বলে সনাক্ত করা যায়। এই ব্যবস্থা এক বেড়ারূপে কাজ করত, যিহূদীদের পৃথক করে রাখত সেই সমস্ত ব্যক্তিদের থেকে যারা দুর্নীতি পূর্ণ ছিল এবং ঈশ্বরের সঙ্গে বিশেষ চুক্তিতে ছিল না। যীশু ব্যাখ্যা করলেন: “সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ দ্বার দিয়া মেষেদের খোঁয়াড়ে প্রবেশ না করে, কিন্তু আর কোন দিক দিয়া উঠে, সে চোর ও দস্যু। কিন্তু যে দ্বার দিয়া প্রবেশ করে, সে মেষদের পালক।”

অন্যরা এসে মশীহ, বা খ্রীষ্ট রূপে দাবী করবে, কিন্তু তারা প্রকৃত মেষপালক নয় যার বিষয় যীশু বলে চললেন: “তাহাকেই দ্বারী দ্বার খুলিয়া দেয়, আর মেষেরা তাহার রব শুনে; আর সে নাম ধরিয়া তাহার নিজের মেষদিগকে ডাকে, ও বাহিরে লইয়া যায়। . . . কিন্তু তাহারা কোন মতে আপর লোকের পশ্চাৎ যাইবে না, বরং তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে, কারণ অপর লোকদের রব তাহারা জানে না।”

এই প্রথম খোঁয়াড়ের “দ্বারী” ছিলেন যোহন বাপ্তাইজক। দ্বারী হিসাবে, যোহন যীশুকেই দ্বার ‘খুলে দেন’ রূপক মেষদের কাছে তাঁকে সনাক্ত করে দিয়ে যাতে তিনি তাদের চরাণীতে নিয়ে যান। এই মেষদের যীশু নাম ধরে ডাকবেন এবং নিয়ে যাবেন ও অবশেষে তাদের আর এক খোঁয়াড়ে প্রবেশ করাবেন, যার জন্য বর্ণনা করলেন: “সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, আমিই মেষদিগের দ্বার,” অর্থাৎ, এক নূতন খোঁয়াড়ের দ্বার। যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নূতন চুক্তি স্থাপন করেন এবং স্বর্গ থেকে পবিত্র আত্মা পরবর্তী পঞ্চাশত্তমীর দিন তাদের উপর বর্ষণ করেন, তারা এই নূতন খোঁয়াড়ে স্থান পায়।

তাঁর ভূমিকা আরও ব্যাখ্যা করে, যীশু বলেন: “আমিই দ্বার, আমা দিয়া যদি কেহ প্রবেশ করে, সে পরিত্রাণ পাইবে, এবং ভিতরে আসিবে ও বাহিরে যাইবে ও চরাণী পাইবে। . . . আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জীবন পায় ও উপচয় পায়। . . . আমিই উত্তম মেষপালক, আমার নিজের সকলকে আমি জানি এবং আমার নিজের সকলে আমাকে জানে, যেমন পিতা আমাকে জানেন ও আমি পিতাকে জানি; এবং মেষদিগের জন্য আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি।”

সম্প্রতি, যীশু তাঁর অনুসরণকারীদের সান্ত্বনা করেছেন, এই বলে: “ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্ক হইয়াছে।” এই ক্ষুদ্র মেষপাল, যারা অবশেষে গণিত হবে ১,৪৪,০০০ হিসাবে, তারাই এই নূতন, বা দ্বিতীয় খোঁয়াড়ে আসবে। কিন্তু যীশু বলে চলেন: “আমার আরও মেষ আছে, সে সকল এ খোঁয়াড়ের নয়; তাহাদিগকেও আমার আনিতে হইবে; এবং তাহারা আমার রব শুনিবে, তাহাতে এক পাল ও এক পালক হইবে।”

যেহেতু এই “অপর মেষ” এই “খোঁয়াড়ের নয়,” তারা আর একটি খোঁয়াড়ের, যেটি তৃতীয়। এই শেষের দুই খোঁয়াড়, বা মেষের দলের, ভিন্ন ধরনের লক্ষ্য। এক খোঁয়াড়ের “ক্ষুদ্র মেষপাল” খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গে রাজত্ব করবে, এবং অন্য খোঁয়াড়ের “অপর মেষেরা” পরমদেশ পৃথিবীতে বাস করবে। যদিও এদের দুটি খোঁয়াড়, তবুও, মেষদের মধ্যে ঈর্ষা নেই, বা তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করে না, কারণ যীশু বলেন, তারা “এক পাল হইবে,” এবং “এক পালকের” অধীনে।

উত্তম মেষপালক, যীশু খ্রীষ্ট, স্বেচ্ছায় তাঁর জীবন এই দুই খোঁয়াড়ের মেষেদের জন্য দেবেন। “আমি আপনা হইতেই তাহা সমর্পণ করি,” তিনি বললেন। “তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছে; এবং পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে। এই আদেশ আমি আপন পিতা হইতে পাইয়াছি।” যীশু যখন এই কথা বললেন, যিহূদীদের মধ্যে এক বিভেদ দেখা দিল।

অনেকে বলল: “এ ভূতগ্রস্ত ও পাগল। ইহার কথা কেন শুনিতেছ?” অন্যেরা উত্তর করল: “এ সকল ত ভূতগ্রস্ত লোকের কথা নয়।” তখন, কয়েক মাস আগে এক জন্মান্ধ মানুষকে সুস্থ করার বিষয়টি উল্লেখ করে, তারা যোগ দেয়: “ভূত কি অন্ধদের চক্ষু খুলিয়া দিতে পারে?” যোহন ১০:১-২২; ৯:১-৭; লূক ১২:৩২; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩; ২১:৩, ৪; গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

▪ উৎসর্গীকরণের পর্বটি কি ছিল, এবং কখন এটি উদ্‌যাপিত হত?

▪ প্রথম মেষের খোঁয়াড়টি কি, এবং এর দ্বারী কে?

▪ কিভাবে দ্বারী মেষপালককে দ্বার খুলে দেয়, এবং এরপর এই মেষেরা কোথায় প্রবেশ করে?

▪ উত্তম মেষপালকের দুটি খোঁয়াড় কাদের দ্বারা গঠিত, এবং কতগুলি পাল তারা হল?