সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যাতনা দণ্ডে যন্ত্রণা

যাতনা দণ্ডে যন্ত্রণা

অধ্যায় ১২৫

যাতনা দণ্ডে যন্ত্রণা

যীশুর সাথে দুইজন দস্যুকেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বধ করার জন্য। শহর থেকে খুব দূরে নয়, মিছিল থামে গল্‌গথা বা মাথার খুলির স্থান নামক জায়গায়।

বন্দীদের বস্ত্র খুলে নেওয়া হয়। আর তাদের পান করার জন্য পিত্ত মিশ্রিত দ্রাক্ষারস দেওয়া হয়। এই পানীয় সবেত যিরূশালেমের স্ত্রীলোকেরা তৈরী করে, আর যাদের যাতনা দণ্ডে দেওয়া হচ্ছে তাদের যন্ত্রণা কম করার এই পানীয় দিতে রোমীয়রা বাধা দেয় না। কিন্তু, যীশু যখন তা আস্বাদন করেন, তিনি পান করতে অস্বীকার করেন। কেন? কারণ তিনি তাঁর বিশ্বাসের এই চরম পরীক্ষার সময় তাঁর পূর্ণ বোধশক্তি বজায় রাখতে চান।

যীশুকে দণ্ডের উপরে শোয়ানো হয়, তাঁর হাত তাঁর মাথার উপরের দিকে রাখা হয়। তারপর সৈন্যরা তাঁর হাতে ও পায়ে বড় পেরেক বিদ্ধ করে। তিনি যন্ত্রণায় মোচড় দেন যখন পেরেকগুলি তাঁর মাংস ও হাড়ের বন্ধনী ভেদ করে। যখন যাতনাদণ্ডটি খাড়া করা হয় তখন যন্ত্রণা অসহ্য হয়, কারণ সম্পূর্ণ দেহের ভার পেরেকের দ্বারা ক্ষত স্থানগুলিতে পড়ে। কিন্তু, তাদের ভয় না দেখিয়ে, যীশু সেই রোমীয় সৈন্যদের জন্য প্রার্থনা করেন: “পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।”

পীলাত সেই দণ্ডে এক অধিলিপি টাঙ্গিয়ে দেন যাতে লেখা আছে: “নাসরতীয় যীশু, যিহূদীদের রাজা।” তিনি এইরূপ লেখেন কেবল যে তার যীশুর প্রতি শ্রদ্ধা আছে সেইজন্য নয়, কিন্তু যিহূদী ধর্মীয় যাজকরা যেভাবে জোর করে তার কাছ থেকে যীশুর মৃত্যুর আদেশ আদায় করে নিয়েছে, তাদের প্রতি ঘৃণার কারণে। যাতে সকলে তা পড়তে পারে, তিনি এই অধিলিপি তিন ভাষায় লিখিয়েছেন—ইব্রীয়, সরকারী ল্যাটিন এবং সাধারণ গ্রীক ভাষায়।

কায়াফা ও হানন সমেত প্রধান যাজকগণ আতঙ্কিত। এই স্পষ্ট ঘোষণা তাদের জয়ের মুহূর্তকে নষ্ট করে দেয়। তাই তারা প্রতিবাদ জানায়: “এই কথা লিখিবেন না ‘এ যিহূদীদের রাজা,’ কিন্তু লিখুন যে, ‘এ ব্যক্তি বলিল, আমি যিহূদীদের রাজা।’” যাজকদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করায় উত্তেজিত হয়ে, পীলাত দৃঢ়ভাবে উত্তর দেন: “যাহা লিখিয়াছি, তাহা লিখিয়াছি।”

বিরাট জনতা সহ যাজকরা, এবার একত্রিত হয় সেই প্রাণ বধের স্থানে, আর যে অধিলিপি লেখা আছে পুরোহিতরা তা অস্বীকার করে। মিথ্যা অভিযোগ যা তারা যিহূদী মহাসভায় এনেছিল তা আবার উল্লেখ করে। সেই কারণে, আশ্চর্য্যের নয়, যাতায়াতকারী পথিকরা তাঁর সম্বন্ধে মন্দ কথা বলে ঠাট্টা করতে থাকে: “ওহে, তুমি না মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আর তিনদিনের মধ্যে তা গাঁথিয়া তুল! আপনাকে রক্ষা কর; যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে যাতনা দণ্ড থেকে নামিয়া আইস!” (NW)

“ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না!” প্রধান যাজকগণ ও তাদের ধর্মীয় সঙ্গীরা বলতে থাকে। “ও ত ইস্রায়েলের রাজা; এখন যাতনা দণ্ড হইতে নামিয়া আসুক, তাহা হইলে আমরা উহার উপরে বিশ্বাস করিব। ও ঈশ্বরে ভরসা রাখে, এখন তিনি নিস্তার করুন, যদি উহাকে চান; কেননা ও বলিয়াছে, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’”

এই পরিবেশে পড়ে, সৈন্যরাও যীশুর সঙ্গে মজা করে। তারা তাঁকে উপহাস করে সিরকা দেয়, সবেত তাঁর শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট থেকে দূরে ধরে। “যদি তুমি যিহূদীদের রাজা,” তারা বিদ্রূপ করে, “তবে নিজেকে রক্ষা কর।” এমনকি দস্যুরা—একজন যীশুর ডানদিকে, আর অপরজন বামদিকে বিদ্ধ—তাঁকে উপহাস করে। চিন্তা করুন! সর্বকালের বসবাসকারীদের মধ্যে মহত্তম ব্যক্তি, হ্যাঁ, যিনি যিহোবা ঈশ্বরের সাথে সব কিছু সৃষ্টি করায় অংশ নিয়েছিলেন, স্থির ভাবে সব অপব্যবহার স করেন!

সৈন্যরা যীশুর বহির্বস্ত্র নিয়ে চারভাগে ভাগ করে। তারা গুলিবাঁট করে, দেখবার জন্য কার এইগুলি হবে। তাঁর অঙরাখাটি কিন্তু, খুব উন্নত মানের হওয়ায়, তাতে সেলাই ছিল না। তাই সৈন্যরা একে অপরকে বলল: “ইহা চিরিব না, আইস, আমরা গুলিবাঁট করিয়া দেখি, ইহা কাহার হইবে।” এইভাবে, আজান্তে, তারা শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ করে যা বলে: “তাহারা আপনাদের মধ্যে আমার বস্ত্র সকল বিভাগ করিল, আর আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করিল।”

এরমধ্যে, একজন দস্যু উপলব্ধি করে যে যীশু সত্যই রাজা। তাই তার সঙ্গীকে ভর্ৎসনা করে, সে বলে: “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি ত একই দণ্ড পাইতেছ; আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দণ্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি, তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি; কিন্তু ইনি অপকার্য্য কিছুই করেন নাই।” তারপর যীশুকে সম্বোধন করে, সে আবেদন করে: “যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।”

“তোমাকে সত্য বলিতেছি আদ্যই,” যীশু উত্তর দেন, “তুমি আমার সাথে পরমদেশে থাকিবে।” (NW) এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে যখন যীশু স্বর্গ থেকে রাজত্ব করবেন এবং এই অনুতপ্ত দস্যুকে পুনরুত্থান দেবেন পরমদেশরূপ পৃথিবীতে, যেখানে হর্‌মাগিদোন থেকে রক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের সঙ্গীরা গড়ে তোলবার সুযোগ পাবে। মথি ২৭:৩৩-৪৪; মার্ক ১৫:২২-৩২; লূক ২৩:২৭, ৩২-৪৩; যোহন ১৯:১৭-২৪.

▪ যীশু কেন সেই পিত্তমিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান করতে অস্বীকার করেন?

▪ আপাতরূপে, কেন, যীশুর যাতনা দণ্ডে অধিলিপি লেখা হয়েছে, আর ইহা পীলাত ও প্রধান যাজকদের মধ্যে কি কথাবার্তা আরম্ভ করে?

▪ যীশুর প্রতি যাতনা দণ্ডে আর কি অপব্যবহার করা হয়, স্পষ্টতই কি তা করতে পরিচালিত করে?

▪ যীশুর বস্ত্র নিয়ে যা করা হয় কিভাবে তা ভাববাণীর পূর্ণতা লাভ?

▪ একজন দস্যু কি পরিবর্তন করে, ও যীশু কিভাবে তার আবেদন পূর্ণ করবেন?