সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিরূশালেমে একটি গোপন যাত্রা

যিরূশালেমে একটি গোপন যাত্রা

অধ্যায় ৬৫

যিরূশালেমে একটি গোপন যাত্রা

শরৎকাল, ৩২ সা.শ., আর কুটীরবাস পর্ব এগিয়ে আসছে। ৩১ সা.শ. নিস্তারপর্বের পর যীশু তাঁর কাজ কেবলমাত্র গালীলেই সীমাবদ্ধ রাখেন, যে সময়ে যিহূদীরা তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টা করেছিল। এরপর কেবলমাত্র তিনটি বাৎসরিক উৎসবের জন্য যীশু যিরূশালেমে গিয়েছিলেন।

যীশুর ভাইরা তাকে অনুরোধ জানালেন, “এখান হইতে প্রস্থান কর, যিহূদীয়াতে চলিয়া যাও।” যিহূদীয়ার প্রধান শহর যিরূশালেম এবং সমগ্র দেশের ধর্মীয় কেন্দ্রস্থান। তার ভাইয়েরা যুক্তি দেখায়: “কারণ এমন কেহ নাই যে গোপনে কর্ম্ম করে, ও আপনি সপ্রকাশ হওয়ার চেষ্টা করে।”

যদিও, যাকোব, শিমোন, যোষেফ ও যিহূদা বিশ্বাস করে না যে তাদের বড় ভাই, যীশু, সত্য সত্যই মশীহ, তবুও তারা চায় যে তিনি যিরূশালেমে যারা একত্রিত হয়েছেন তাদের সামনে তাঁর অলৌকিক কাজ দেখান। যীশু, কিন্তু এতে বিপদ আছে জানেন। “জগৎ তোমাদিগকে ঘৃণা করিতে পারে না,” তিনি বললেন, “কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে, কারণ আমি তাহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিই যে, তাহার কার্য্য মন্দ।” তাই যীশু তাঁর ভাইদের বললেন: “তোমরাই পর্বে যাও, আমি এখনও এই পর্বে যাইতেছি না।”

এই কুটীরোৎসব সাত দিনের পর্ব। আর অষ্টম দিনে কিছু পবিত্র আচার অনুষ্ঠানের পর ইহা শেষ হয়। এই পর্ব কৃষি-কর্মজনিত বাৎসরিক বিষয়ের সমাপ্তিসূচক এবং তার সঙ্গে মহানন্দ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময়। সহযাত্রী এবং যীশুর ভাইদের যাত্রার বেশ কিছু দিন পর, তিনি ও তাঁর শিষ্যরা গোপনে গেলেন, লোকদের দৃষ্টিগোচরে পড়তে চাইলেন না। তারা শমরিয়ার মধ্য দিয়ে যে রাস্তা আছে তা ধরলেন, যর্দ্দন নদীর ধার দিয়ে বেশীর ভাগ লোক যে রাস্তা ধরত সেটা নয়।

যেহেতু যীশু ও তাঁর সঙ্গীদের এক শমরীয় গ্রামে থাকবার বন্দোবস্ত করতে হবে, তাই তিনি প্রস্তুতির জন্য আগেই লোক পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু লোকেরা যীশুর জন্য, কিছু করতে রাজী হল না, ইহা জেনে যে তিনি যিরূশালেমে যেতে উন্মুখ ছিলেন। ক্রুদ্ধভাবে, যাকোব ও যোহন জিজ্ঞাসা করলেন: “প্রভু, আপনি কি ইচ্ছা করেন, আমরা বলি আকাশ হতে অগ্নি নামিয়া আসিয়া ইহাদের ভস্ম করুক?” এই ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আসবার জন্য যীশু তাদের ধমক দিলেন, পরে তারা অন্য গ্রামে চলে গেলেন।

যখন তারা পথে যাচ্ছেন, এক অধ্যাপক যীশুকে বলল: “আপনি যে কোন স্থানে যাইবেন, আমি আপনার পশ্চাৎ যাইব।”

“শৃগালদের গর্ত্ত আছে এবং আকাশের পক্ষীগণের বাসা আছে,” যীশু তাকে বললেন, “কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।” যীশু বোঝাতে চাইলেন যদি এই অধ্যাপক তাঁকে অনুসরণ করতে চান ত কষ্ট স করতে হবে। আর এর দ্বারা সংকেত পাওয়া যাচ্ছে যে অধ্যাপক খুব অহংকারী হওয়ার জন্য এই ধরনের জীবন যাত্রা গ্রহণ করার পক্ষে উপযোগী নন।

আর একজনকে, যীশু বললেন: “আমার পশ্চাৎ আইস।”

“প্রভু, অগ্রে আমার পিতার কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন,” লোকটি উত্তর দিল।

“মৃতেরাই আপন আপন মৃতদের কবর দিউক,” যীশু উত্তর দিলেন, “কিন্তু তুমি গিয়া ঈশ্বরের রাজ্য ঘোষণা কর।” সেই ব্যক্তির পিতা স্পষ্টতঃ তখনও মারা যায়নি, কারণ সেই ব্যক্তি তাহলে যীশুর কথা শুনতে অসত না।” ব্যক্তিটি আপাতরূপে এখানে পিতার মৃত্যু পর্য্যন্ত সময় দিতে অনুরোধ জানায়। সে ঈশ্বরের রাজ্যকে তার জীবনে প্রথম স্থান দিতে প্রস্তুত নয়।

তারা যিরূশালেমের পথে এগোচ্ছেন, আর এক ব্যক্তি যীশুকে বলে: “প্রভু আমি আপনার পশ্চাৎ যাইব, কিন্তু অগ্রে নিজ বাটীর লোকদের নিকটে বিদায় লইয়া আসিতে অনুমতি করুন।”

উত্তরে যীশু বললেন: “যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়।” যারা যীশুর শিষ্য হবেন, তাদের চক্ষু রাজ্যের পরিচর্য্যার প্রতি কেন্দ্রীভূত থাকবে।” যেমন এক লাঙ্গলের ফালরেখা বেঁকে যাবে যদি লাঙ্গল চালক সম্মুখে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রাখে, ঠিক তেমনই যদি কেউ এই পুরাতন জগতের দিকে ঘুরে তাকায় তবে অনন্ত জীবনের দিকে চলতে হোঁচট খেয়ে পথের বাইরে চলে যাবে। যোহন ৭:২-১০; লূক ৯:৫১-৬২; মথি ৮:১৯-২২.

▪ কারা যীশুর ভাই ছিল, এবং তাঁর সম্বন্ধে তারা কি ভাবত?

▪ কেন শমরীয়রা অত রূঢ় ছিল, এবং যাকোব ও যোহন কি করতে চান?

▪ কোন তিনটি কথোপকথন যীশু পথে করেন, এবং আত্মত্যাগমূলক কাজের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে যীশু কিভাবে গুরুত্ব দেন?