সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহূদীয়াতে এক করুণা অভিযান

যিহূদীয়াতে এক করুণা অভিযান

অধ্যায় ৮৯

যিহূদীয়াতে এক করুণা অভিযান

কয়েক সপ্তাহ আগে, উৎসর্গীকরণ পর্বের সময়ে যিরূশালেমে যিহূদীরা যীশুকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল। সুতরাং তিনি উত্তর দিকে যাত্রা করেন যা গালীল সমুদ্র থেকে খুব দূরে নয় এমন একটি স্থানে।

সাম্প্রতিক, তিনি পুনরায় যিরূশালেমের দিকে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে যান, যাবার পথে পিরিয়ার গ্রামগুলিতে প্রচার শুরু করেন, যেগুলি যর্দ্দন নদীর পূর্ব দিকের এক জেলায়। ধনী ব্যক্তি ও লাসারের দৃষ্টান্ত বলার পর, তিনি তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিতে থাকলেন, যা তিনি আগে গালীলে শিখিয়েছিলেন।

উদাহরণস্বরূপ, তিনি বললেন, এক ব্যক্তির ঈশ্বরের “ক্ষুদ্রগণের” মধ্যে এক জনের বিদ্ধ জন্মানোর থেকে “তাহার গলায় যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া” তার পক্ষে বিশেষ লাভজনক হবে। তিনি ক্ষমার প্রয়োজনীয়তার সম্বন্ধেও জোর দিলেন, বললেন: “যদি তোমার [ভ্রাতা], এক দিনের মধ্যে সাত বার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর সাত বার তোমার কাছে ফিরিয়া আসিয়া বলে, ‘অনুতাপ করিলাম,’ তবে তাহাকে ক্ষমা করিও।”

যখন প্রেরিতেরা তাঁকে অনুরোধ করল, “আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন,” যীশু উত্তর দিলেন: “একটি সরিষাদানার মত বিশ্বাস যদি তোমাদের থাকে, তবে ‘তুমি সমূলে উপড়াইয়া গিয়া সমুদ্রে রোপিত হও!’ এই কথা সুকামিন গাছটিকে বলিলে, এ তোমার কথা মানিবে।” সুতরাং ক্ষুদ্র বিশ্বাস বিরাট কিছু করতে পারে।

এরপর, যীশু জীবনে ঘটে এরূপ এক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এক দাসের সঠিক আচরণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করলেন। “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যাহার দাস হাল বহিয়া কিম্বা মেষ চরাইয়া ক্ষেত্র হইতে ভিতরে আসিলে,” যীশু উল্লেখ করেন, “সে তাহাকে বলিবে, ‘তুমি এখনই আসিয়া খাইতে বস’? বরং তাহাকে কি বলিবেনা, ‘আমি কি খাইব, তাহার আয়োজন কর, এবং আমি যতক্ষণ ভোজন পান করি, ততক্ষণ কোমর বাঁধিয়া আমার সেবা কর, তাহার পর তুমি ভোজন পান করিবে’? সেই দাস আজ্ঞা পালন করিল বলিয়া সে কি তাহার ধন্যবাদ করে? সেই প্রকারে সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও, ‘আমরা অনুপযোগী দাস। যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।’” এইভাবে, ঈশ্বরের দাসেরা কখনোই মনে করবে না যে তারা ঈশ্বরের সেবা করে তাঁকে অনুগ্রহ দেখাচ্ছে। বরং, তারা সর্বদা মনে রাখবে যে তাঁর গৃহের বিশ্বস্ত সদস্য হিসাবে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাঁর উপাসনা করার জন্য।

যীশুর এই দৃষ্টান্ত বলবার কিছু পরেই এক সংবাদ বাহক সেখানে আসে। সে মরিয়ম ও মার্থার দ্বারা প্রেরিত হয়েছিল, যারা লাসারের বোন, যিহূদীয়ার বৈথনিয়ায় থাকে। “প্রভু দেখুন! আপনি যাহাকে ভালবাসেন তাহার পীড়া হইয়াছে,” সংবাদ-বাহক বলে।

যীশু উত্তর করেন: “এ পীড়া মৃত্যুর জন্য হয় নাই, কিন্তু ঈশ্বরের গৌরবের নিমিত্ত, যেন ঈশ্বরের পুত্র ইহা দ্বারা গৌরবান্বিত হন।” দুদিন তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে থাকার পর, যীশু শিষ্যদের বললেন: “আইস আমরা আবার যিহূদীয়ায় যাই।” কিন্তু, তারা তাঁকে মনে করালো: “রব্বি, এই ত যিহূদীরা আপনাকে পাথর মারিবার চেষ্টা করিতেছিল, তবু আপনি আবার সেখানে যাইতেছেন?”

“দিনে কি বারো ঘন্টা নাই?” যীশু উত্তরে জিজ্ঞাসা করলেন। “যদি কেহ দিনে চলে, সে উছোট খায় না, কেননা সে এই জগতের দীপ্তি দেখে। কিন্তু যদি কেহ রাত্রিতে চলে, সে উছোট খায়, কেননা দীপ্তি তাহার মধ্যে নাই।”

যীশু এখানে যা অর্থ করছেন তা হল “দিনের দীপ্তি,” অথবা যীশুর পার্থিব পরিচর্য্যা কালের জন্য যে সময় ঈশ্বর থেকে ঠিক করে দেওয়া আছে, তা এখনও শেষ হয়নি, যতক্ষণ তা না হয়, কেহই তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সেই “দিনের” ক্ষুদ্র অংশটির সবটাই কাজে লাগাতে চান, কারণ এর পর আসবে “রাত্রি” যখন তাঁর শত্রুরা তাঁকে হত্যা করবে।

যীশু যোগ দেন: “আমাদের বন্ধু লাসার নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি।”

শিষ্যরা মনে করল লাসার ঘুমন্ত আবস্থায় বিশ্রাম নিচ্ছে, আর এটি চিহ্ন যে সে সুস্থ হয়ে উঠবে, তাই শিষ্যরা উত্তর দিল, “প্রভু, সে যদি নিদ্রা গিয়া থাকে, তবে রক্ষা পাইবে।”

তখন যীশু সরাসরি বললেন: “লাসার মরিয়াছে; আর তোমাদের নিমিত্ত আনন্দ করিতেছি যে, আমি সেখানে ছিলাম না, যেন তোমরা বিশ্বাস কর। তথাপি চল, আমরা তাহার কাছে যাই।”

ইহা জেনে যে যীশু যে কোন মুহূর্তে যিহূদীয়াতে হত হতে পারেন, তাই তাঁকে উৎসাহ দিয়ে সাহায্য করার জন্য, থোমা তার সহশিষ্যদের বললেন: “চল, আমরাও যাই, যেন ইহাঁর সঙ্গে মরি।” সুতরাং তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও, শিষ্যরা সঙ্গ দিল যিহূদীয়াতে তাঁর সেই করুণা অভিযানে। লূক ১৩:২২; ১৭:১-১০; যোহন ১০:২২, ৩১, ৪০-৪২; ১১:১-১৬.

▪ যীশু সম্প্রতি কোথায় প্রচার করছিলেন?

▪ কোন শিক্ষা যীশু পুনরায় উল্লেখ করেন, এবং কি বাস্তব জীবনের ঘটনা তিনি বর্ণনা করেন কোন বিষয় বোঝানোর জন্য?

▪ যীশু কোন সংবাদ পান, আর তিনি “দীপ্তি” ও “রাত্রির” দ্বারা কি বোঝান?

▪ থোমা যখন বলেন, ‘চল আমরাও যাই, যেন ইহাঁর সঙ্গে মরি,’ তার দ্বারা তিনি কি বলতে চান?