যীশুর পুনরায় যিরূশালেমের দিকে যাত্রা
অধ্যায় ৮২
যীশুর পুনরায় যিরূশালেমের দিকে যাত্রা
যীশু শীঘ্রই আবার যাত্রা শুরু করলেন, নগর থেকে নগরে ও গ্রামে গ্রামে শিক্ষা দিতে থাকলেন। এখন তিনি পিরিয়া জেলায় আছেন, যিহূদীয়া থেকে যর্দ্দন নদীর ওপারে। কিন্তু তাঁর লক্ষ্যস্থল যিরূশালেম।
যিহূদীদের দর্শন অনুযায়ী কেবলমাত্র কিছু সীমিত সংখ্যকরা পরিত্রাণ পাবে এই বিষয়টি সবেত এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে উদ্যত করে: “প্রভু, যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছে, তাহাদের সংখ্যা কি অল্প?” তাঁর উত্তরের মাধ্যমে যীশু জনতাকে চিন্তা করতে বাধ্য করলেন যে পরিত্রাণের জন্য কি প্রয়োজন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ করিতে প্রাণপণ [অর্থাৎ, যন্ত্রণাভোগ, অথবা কঠোর চেষ্টা] কর।”
এই ধরনের প্রবল চেষ্টা জরুরী, “কেননা অনেকে,” যীশু বলে চলেন, “প্রবেশ করিতে চেষ্টা করিবে, কিন্তু পারিবে না।” কিন্তু কেন পারবে না? তিনি ব্যাখ্যা করলেন, ‘গৃহকর্তা উঠিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলে পর তোমরা বাহিরে দাঁড়াইয়া দ্বারে আঘাত করিতে আরম্ভ করিবে, বলিবে, “প্রভু, আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন,” আর তিনি উত্তর করিয়া তোমাদিগকে বলিবেন, “আমি জানিনা, তোমরা কোথাকার লোক। হে অধর্ম্মাচারী সকলে, আমার নিকট হইতে দূর হও!”’
যারা দরজার বাইরে তারা আপাতরূপে নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে এসেছে। কিন্তু সেই সময় সুযোগের দরজা বন্ধ ও খিল লাগানো। ঢুকতে হলে, তাদের আগে আসা উচিৎ ছিল, যদিও সেই সময় তাদের হয়ত অসুবিধা ছিল। সত্যই, এক দুঃখজনক পরিণাম তাদের জন্য অপেক্ষা করছে যারা যিহোবার উপাসনা জীবনের মূল উদ্দেশ্য না করে সরিয়ে রেখেছে!
যে যিহূদীদের পরিচর্য্যার জন্য যীশু প্রেরিত হন, তাদের বৃহৎ অংশ, পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত চমকপ্রদ বন্দোবস্তকে গ্রহণ করে ধরে রাখতে অকৃতকার্য হয়। সুতরাং যীশু বললেন যখন তাদের বাহিরে ফেলা হবে তারা রোদন ও দন্তঘর্ষণ করবে। অন্যদিকে, “উত্তর ও দক্ষিণ হইতে, এবং পূর্ব ও পশ্চিম হইতে,” হ্যাঁ, সমস্ত জাতি হতে, “লোকেরা আসিয়া ঈশ্বরের রাজ্যের মেজে বসিবে।”
যীশু বলে চলেন: “যাহারা শেষের [অবজ্ঞাত যিহূদী নয় যারা, ও নিপীড়িত যিহূদীরা] এমন কোন কোন লোক প্রথম হইবে, এবং যাহারা প্রথম [বস্তুবাদী ও ধর্মীয় অনুগ্রহপ্রাপ্ত যিহূদীরা] এমন কোন কোন লোক শেষে পড়িবে।” তারা শেষে অর্থ এই ধীরগতি, অকৃতজ্ঞ লোকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে একেবারেই যেতে পাবে না।
ফরীশীরা এরপর যীশুর কাছে এসে বলে: “বাহির হও, এস্থান হইতে চলিয়া যাও; কেননা হেরোদ [আন্তিপাস্] তোমাকে বধ করিতে চাহিতেছেন।” হয়তো হেরোদ নিজেই এই গুজব ছড়ায় যাতে যীশুকে ঐ স্থান হতে পালিয়ে যেতে হয়। হেরোদ হয়তো ঈশ্বরের আর এক ভাববাদীর হত্যাতে জড়িত হতে ভয় পাচ্ছেন, যেমন তিনি যোহন বাপ্তাইজকের হত্যার সময়ে ছিলেন। কিন্তু যীশু ফরীশীদের বললেন: “তোমরা গিয়া সেই শৃগালকে বল, ‘দেখ, অদ্য এবং কল্য আমি ভূত ছাড়াইতেছি ও আরোগ্য করিতেছি, এবং তৃতীয় দিবসে সিদ্ধকর্ম্মা হইব।’”
এখানে তাঁর কাজ শেষ করার পর, যীশু তাঁর যাত্রা শুরু করেন যিরূশালেমের পথে, যেমন তিনি বললেন, “কারণ এমন হইতে পারে না যে, যিরূশালেমের বাহিরে কোন ভাববাদী বিনষ্ট হয়।” কেন ইহা আশা করা যায় যে যীশু যিরূশালেমে হত হবেন? কারণ যিরূশালেম ছিল মূল নগরী, যেখানে ৭১ জন সদস্যের মহাসভার হাইকোর্টটি ছিল এবং এখানে পশু বলিদান করা হত। তাহলে ইহাই গ্রহণযোগ্য যে “ঈশ্বরের মেষশাবক” আর কোথাও নিহত না হয়ে যিরূশালেমে হবেন।
“যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদীগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক,” যীশু দুঃখ করে বললেন: “কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, আমি কত বার তেমনি তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না! দেখ! তোমাদের সেই গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” কারণ ঈশ্বরের পুত্রকে অস্বীকার করাতে, জাতিটিই ধ্বংসের পথে যাবে!
যীশু যিরূশালেমের পথে এগিয়ে চললে, এক ফরীশীদের অধ্যক্ষর বাড়ীতে নিমন্ত্রিত হলেন। এটি এক বিশ্রামবার, লোকে খুব তীক্ষ্ণ নজর রাখছে যীশুর প্রতি কারণ সেখানে এক ব্যক্তি উপস্থিত যে বহুবছর ধরে জলোদরী রোগে ভুগছে, সবেত হাত ও পায়েতে জল জমে যায়। যীশু উপস্থিত ব্যবস্থাবেত্তাদিগকে ও ফরীশীগণকে কহিলেন, “বিশ্রাম বারে আরোগ্য করা বিধেয় কিনা?”
তারা সবাই চুপ করে রইল। তখন যীশু তাকে সুস্থ করলেন এবং বিদায় দিলেন। তিনি তাদের বললেন: “তোমাদের মধ্যে কে আছে, যাহারা সন্তান কিম্বা বলদ কূপে পড়িলে সে বিশ্রামবারে তৎক্ষণাৎ তাহাকে তুলিবে না?” পুনরায় কেউ এই সকল কথার উত্তর দিতে পারল না। লূক ১৩:২২–১৪:৬; যোহন ১:২৯.
▪ পরিত্রাণের জন্য কি প্রয়োজন, যীশু তা কি ভাবে দেখান এবং কেন অনেকেই বন্ধ দরজার বাহিরে থেকে যাবে?
▪ কারা এই “শেষের” কিন্তু তারাই প্রথমে, এবং “প্রথমে,” কিন্তু শেষে থেকে যাবে?
▪ কেন সবেত এটি বলা হয়েছিল যে হেরোদ যীশুকে হত্যা করতে চেয়েছিল?
▪ কেন ইহা উপযুক্ত নয় যে এক ভাববাদী যিরূশালেমের বাইরে বিনষ্ট হবেন?