সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যীশুর বাপ্তিস্ম

যীশুর বাপ্তিস্ম

অধ্যায় ১২

যীশুর বাপ্তিস্ম

যোহন প্রচার শুরু করার প্রায় ছয় মাস পরে, যীশু, যিনি এখন ৩০ বৎসর বয়স্ক, তাঁর কাছে যর্দ্দনে আসেন। কি কারণে? সামাজিক পরিদর্শনে? যীশু কি কেবল মাত্র জানতে ইচ্ছুক যে যোহনের কাজ কেমন এগোচ্ছে? না, যীশু যোহনকে বলেন তাঁকে বাপ্তাইজিত করতে।

সঙ্গে সঙ্গে যোহন বাধা দেন: “আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া অবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন?” যোহন জানেন যে তার মাসতুত ভাই যীশু ঈশ্বরের বিশেষ পুত্র। কেন, যোহন মায়ের জঠরে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন যখন মরিয়ম, যীশুকে গর্ভে নিয়ে, তাদের পরিদর্শন করেন! যোহনের মা, ইলিশাবেৎ, কোন সন্দেহ নেই এই সম্বন্ধে পরে তাকে বলেছিলেন। আর নিশ্চয় তিনি তাকে যীশুর জন্ম সম্বন্ধে দূতের যে ঘোষণা, এবং যে রাত্রিতে যীশু জন্ম নেন তখন মেষপালকদের কাছে দূতেদের আগমনের কথাও বলেন।

সেইজন্য যীশু যোহনের অপরিচিত নন। আর যোহন জানেন যে তার বাপ্তিস্ম যীশুর জন্য নয়। ইহা কেবল যারা পাপের জন্য অনুতাপ করবে তাদের জন্য, কিন্তু যীশু ত পাপবিহীন। কিন্তু, যোহনের বাধা সত্ত্বেও, যীশু জোর করেন: “এখন সম্মত হও, কেননা, এইরূপে সমস্ত ধার্ম্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।”

যীশুর জন্য বাপ্তাইজিত হওয়া উপযুক্ত কেন? কারণ যীশুর বাপ্তিস্ম হচ্ছে চিহ্নস্বরূপ, পাপ থেকে অনুতাপের নয়, কিন্তু নিজেকে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য উৎসর্গ করা। যীশু একজন সূত্রধর ছিলেন, কিন্তু এখন সময় উপস্থিত তাঁর সেই পরিচর্য্যা শুরু করার যে কার্য করতে যিহোবা ঈশ্বর তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আপনি কি মনে করেন যে যোহন কিছু অস্বাভাবিক ঘটবে মনে করেন যখন তিনি যীশুকে বাপ্তাইজিত করেন?

যোহন পরে বলেন: “যিনি আমাকে জলে বাপ্তাইজিত করতে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে বলিলেন, ‘যাঁহার উপর আত্মাকে নামিয়া অবস্থিতি করিতে দেখিবে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করেন।’” সেই কারণে যোহন আশা করছেন যাদের তিনি বাপ্তাইজিত করছেন তাদের একজনের উপর ঈশ্বরের আত্মা নেমে আসবে। সেই কারণে, তিনি আশ্চর্য্য হননি যখন, যীশু জল থেকে উঠে আসেন, আর যোহন দেখেন, “পবিত্র আত্মা কপোতের আকারে তাঁহার উপরে নামিয়া আসিলেন।”

কিন্তু যীশু যখন বাপ্তাইজিত হচ্ছেন তার থেকেও বেশী কিছু ঘটে। ‘স্বর্গ খুলে যায়’ তাঁর জন্য। এর অর্থ কি? এর অর্থ হল বাস্তবে যখন তিনি বাপ্তিস্ম নেন, মানব জীবনের পূর্বে তাঁর যে অস্তিত্ব ছিল তা পুনরায় তাঁর স্মরণে আসে। সেই কারণে, যীশু পূর্ণভাবে যিহোবা ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্র হিসাবে তাঁর জীবন স্মরণ করতে পারেন, সেই সাথে সেই সব বিষয়গুলিও যেগুলি ঈশ্বর তাঁকে স্বর্গে তাঁর মনুষ্য অস্তিত্বের পূর্বে বলেছিলেন।

এর সাথে আরও, বাপ্তিস্মের সময়, স্বর্গ থেকে এক রব ঘোষণা করে: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” ইহা কার রব? যীশুর নিজের রব? অবশ্যই না! ইহা ঈশ্বরের রব। ইহা স্পষ্ট, যে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, স্বয়ং ঈশ্বর নন, যেমন কেহ কেহ দাবি করে।

যাহাহোক, যীশু ঈশ্বরের মনুষ্য পুত্র, ঠিক যেমন প্রথম পুরুষ, আদম। শিষ্য লূক, যীশুর বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে বর্ণনার পর লেখেন: “আর যীশু নিজে, যখন কার্য আরম্ভ করেন, কমবেশী ত্রিশ বৎসর বয়স্ক ছিলেন, তিনি যেমন ধরা হইত যোষেফের পুত্র, ইনি এলির পুত্র, . . . ইনি দায়ূদের পুত্র, . . . ইনি অব্রাহামের পুত্র, . . . ইনি নোহের পুত্র, . . . ইনি আদমের পুত্র, ইনি ঈশ্বরের পুত্র।”

যেমন আদম একজন মনুষ্য “ঈশ্বরের সন্তান” ছিলেন, যীশুও তেমন। যীশু হচ্ছেন সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনো জীবিত ছিলেন, যা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয় যখন আমরা যীশুর জীবনী পরীক্ষা করি। যাহা হোক, তাঁর বাপ্তিস্মের সময়, যীশু ঈশ্বরের সাথে এক নূতন সম্পর্কে আসেন, এবং ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্রও হন। ঈশ্বর তাঁকে যেন স্বর্গে ডেকে নেন, এই অর্থে, যে তাঁকে সেই পথে চালিত করেন যা তাঁকে পরিচালিত করবে তাঁর মনুষ্য জীবনকে সর্বকালের জন্য দোষী মানবজাতির জন্য বলিরূপে উৎসর্গ করতে। মথি ৩:১৩-১৭; লূক ৩:২১-৩৮; ১:৩৪-৩৬, ৪৪; ২:১০-১৪; যোহন ১:৩২-৩৪; ইব্রীয় ১০:৫-৯.

▪ কেন যীশু যোহনের কাছে অপরিচিত নন?

▪ যেহেতু তিনি কোন পাপ করেননি, তবুও যীশু কেন বাপ্তিস্ম নেন?

▪ যীশুর সম্বন্ধে যোহন যা জানেন তা স্মরণে রেখে, যখন ঈশ্বরের আত্মা যীশুর উপরে নেমে আসে, কেন তিনি আশ্চর্য্য হবেন না?