সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যীশু ও এক ধনী যুবক শাসনকর্তা

যীশু ও এক ধনী যুবক শাসনকর্তা

অধ্যায় ৯৬

যীশু ও এক ধনী যুবক শাসনকর্তা

যীশু পিরিয়া প্রদেশ দিয়ে যখন যিরূশালেমের দিকে চলেছেন, এক যুবক দৌড়ে এসে তাঁর সামনে হাটু গেড়ে বসে। এই ব্যক্তিকে শাসনকর্তা বলা হয়েছে, হয়ত এইজন্য কারণ সে হয়ত স্থানীয় সমাজগৃহে কোন উচ্চ পদে ছিল বা হয়ত মহাসভার সদস্য ছিল। আর, সে খুব ধনীও। “হে সদ্‌গুরু,” সে জিজ্ঞাসা করে, “অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব?”

“আমাকে সৎ কেন বলিতেছ?” যীশু উত্তর দেন। “একজন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর।” এই যুবক ব্যক্তি “সৎ” এটাকে উপাধি হিসাবে ব্যবহার করেছিল, তাই যীশু তাকে জানিয়ে দিলেন যে এই উপাধি কেবল ঈশ্বর দাবী করতে পারেন।

“যদি তুমি,” যীশু বলেন, “জীবনে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা কর, তবে আজ্ঞা সকল পালন কর।”

“কোন, কোন আজ্ঞা?” সেই ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে।

দশ আজ্ঞার পাঁচটি আজ্ঞা উব্ত করে, যীশু বলেন: “নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, পিতা ও মাতাকে সমাদর করিও।” আর এর সাথে আরও গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা যোগ করে, যীশু বলেন: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও।”

“আমি বাল্যকাল অবধি এই সকল পালন করিতেছি,” যুবকটি সততার সাথে উত্তর দেয়। “এখন আমার কি ত্রুটি আছে?”

তার অন্তরিক এবং সনির্বন্ধ অনুরোধ শুনে যীশু তাকে ভালবাসলেন। কিন্তু যীশু লক্ষ্য করেন ব্যক্তিটি ধন-সম্পত্তির সাথে খুব জড়িত তাই তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন: “এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে: যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিআয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে, আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও।”

যীশু সমবেদনার সাথে লক্ষ্য করেন, ব্যক্তিটি বিষণ্ণ হয়ে উঠে চলে যায়। তার ধন তাকে অন্ধ করেছে সত্য সম্পদের মূল্য দেখতে। “কেমন দুধর,” যীশু দুঃখপ্রকাশ করেন, “যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা!”

যীশুর কথায় তাঁর শিষ্যরা বিস্মিত হয়। কিন্তু তারা আরও আশ্চর্য্য হয় যখন তিনি এক সাধারণ নিয়ম উল্লেখ করেন: “ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ।”

“তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে?” শিষ্যরা জানতে চান।

তাদের দিকে তাকিয়ে যীশু উত্তর দেন: “ইহা মনুষ্যদের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।”

তারা সেই ধনী ব্যক্তির চেয়ে অন্য ধরনের জিনিষ বেছে নিয়েছে তা উল্লেখ করে পিতর বলেন: “দেখুন! আমরা সকলই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি।” তাই সে জিজ্ঞাসা করে: “আমরা তবে কি পাইব?”

“পুনঃসৃষ্টিকালে,” যীশু প্রতিজ্ঞা করেন, “যখন মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তোমরা যতজন আমার পশ্চাদগামী হইয়াছ, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” হ্যাঁ, যীশু দেখাচ্ছেন যে পৃথিবীর আবস্থার পুনঃসৃষ্টি হবে যাতে পরিস্থিতি আবার এদন্‌ উদ্যানের মত হয়। আর পিতর ও অন্যান্য শিষ্যরা এই পরমদেশরূপ পৃথিবীর উপরে খ্রীষ্টের সাথে রাজত্ব করার সুযোগ পাবে পুরস্কারস্বরূপ। নিশ্চয়ই, এই মহাপুরস্কার পাওয়ার জন্য যে কোন ত্যাগ যথাযোগ্য!

যাইহোক, এমনকি এখনও পুরস্কার রয়েছে, যা যীশু দৃঢ়ভাবে বলেন: “এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি পিতামাতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে।”

যীশু যেমন প্রতিজ্ঞা করেন, জগতব্যাপী তাঁর শিষ্যরা যেখানেই যাক না কেন, তারা তাদের পরিবারের সভ্যদের চাইতে তাদের খ্রীষ্টিয় ভাইবোনদের সাথে বেশী মূল্যবান এবং ঘনিষ্ঠ মেলামেশা উপভোগ করেন। সেই ধনী যুবক শাসক এই সুযোগ ও স্বর্গীয় রাজ্যে অনন্ত জীবন, উভয় সুযোগ হারায়।

পরে যীশু যোগ দেন: “এইরূপে, যাহারা প্রথম, তাহারা শেষে পড়িবে, এবং যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে।” এর দ্বারা তিনি কি বোঝাতে চান?

তিনি বোঝাতে চান যে অনেক ব্যক্তি যারা “প্রথম” হবার সুযোগ পায় ধর্মীয় দিক দিয়ে, যেমন সেই ধনী যুবক শাসক, রাজ্যে প্রবেশ করবে না। তারা “শেষে” পড়বে। কিন্তু অনেকে, তাঁর শিষ্যরা সহ যারা নম্র, যাদের আত্মধার্মিক ফরীশীরা “শেষের” বলে ঘৃণার চোখে দেখে—এই পৃথিবীর লোক ভাবে, বা ‘অ্যাম হা·’আ’রেটস—তারা “প্রথম” হবে। তাদের “প্রথম” হওয়ার অর্থ হবে যে তারা খ্রীষ্টের সাথে রাজ্যে সহশাসকগণ হবার সুযোগ পাবে। মার্ক ১০:১৭-৩১; মথি ১৯:১৬-৩০; লূক ১৮:১৮-৩০.

▪ স্পষ্টত এই ধনী যুবক, কি ধরনের শাসনকর্ত্তা?

▪ কেন যীশু তাঁকে সৎ বলায় বাধা দেন?

▪ এই যুবকের অভিজ্ঞতা কিভাবে প্রদর্শন করে ধনী হবার বিপদ কি?

▪ কি পুরস্কার যীশু তাঁর পশ্চাদগামীদের প্রতিজ্ঞা করেন?

▪ কিভাবে প্রথমজন শেষ, ও শেষজন প্রথম হয়?