যীশু জীবিত!
অধ্যায় ১২৮
যীশু জীবিত!
যখন স্ত্রীলোকেরা দেখেন যে কবর শূণ্য, মগ্দলীনী মরিয়ম দৌড়ে যান পিতর ও যোহনকে খবর দিতে। কিন্তু, অন্য স্ত্রীলোকেরা কবরের নিকট থাকেন। শীঘ্রই, এক দূত তাদের সামনে অবির্ভূত হন ও তাদের ভিতরে আমন্ত্রণ জানান।
আর সেখানে স্ত্রীলোকেরা আরও একজন দূতকে দেখতে পান, আর তাদের মধ্যে একজন দূত বলেন: “ভয় করিও না, কেননা আমি জানি যে, তোমরা যাতনা দণ্ডে হত যীশুর অন্বেষণ করিতেছ। তিনি এখানে নাই; কেননা তিনি উঠিয়াছেন, যেমন বলিয়াছিলেন। আইস, যেখানে তিনি শুইয়াছিলেন সেই স্থান দেখ। আর শীঘ্র গিয়া তাঁর শিষ্যদিগকে বল যে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন।” তাই ভয়ে ও মহা আনন্দে, এই স্ত্রীলোকেরা দৌড়ে চলে যান।
এই সময়ের মধ্যে, মরিয়ম পিতর ও যোহনকে খুঁজে পেয়েছেন, আর তিনি তাদের কাছে খবর দেন: “লোকে প্রভুকে কবর হইতে তুলিয়া লইয়া গিয়াছে; তাঁহাকে কোথায় রাখিয়াছে, আমরা জানি না।” আবিলম্বে দুই প্রেরিত দৌড়ে যান সেই স্থানে। যোহন অগ্রে দ্রুত যান—কারণ তিনি বয়সে কম আর তিনিই কবরে প্রথম পৌঁছান। এই সময়ের মধ্যে সেই স্ত্রীলোকেরা চলে গেছেন, তাই ধারে কাছে কেউ নেই। যোহন হেঁট হয়ে, কবরের মধ্যে তাকান আর লক্ষ্য করেন যে কাপড় জড়ান হয়েছিল তা পড়ে আছে, কিন্তু তিনি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন।
যখন পিতর আসেন তিনি ইতস্তত না করে ভিতরে যান। তিনি কাপড় দেখেন এবং যীশুর মাথা যে কাপড়ে মোড়া ছিল তাও লক্ষ্য করেন। তা একদিকে জড়িয়ে রাখা আছে। যোহনও এবার কবরের মধ্যে প্রবেশ করেন ও মরিয়মের খবরে বিশ্বাস করেন। কিন্তু পিতর ও যোহন উভয়েই বুঝতে পারেন না যে যীশুর পুনরুত্থান হয়েছে, যদিও তিনি প্রায়ই তাদের তাঁর পুনরুত্থানের কথা বলতেন। হতবুদ্ধি হয়ে তারা ঘরে ফিরে যান, কিন্তু মরিয়ম, যিনি আবার কবরের কাছে ফিরে এসেছেন, সেখানেই থাকেন।
এর মধ্যে, অন্য স্ত্রীলোকেরা, তাড়াতাড়ি করে শিষ্যদের বলতে যান যে যীশুর পুনরুত্থান হয়েছে, যেমন দূতেরা তাদের আদেশ করেন বলতে। যখন তারা যত দ্রুত পারেন যাচ্ছেন, যীশু তাদের সাথে দেখা করেন ও বলেন: “তোমাদের মঙ্গল হোক!” তারা তাঁর চরণে পড়েন ও প্রণাম করেন। তখন যীশু বলেন: “ভয় করিও না! তোমরা যাও, আমার ভ্রাতৃগণকে সংবাদ দাও, যেন তাহারা গালীলে যায়; সেইখানে তাহারা আমাকে দেখিতে পাইবে।”
এর আগে, যখন ভূমিকম্প হয় আর দূতরা অবির্ভূত হন, তখন রক্ষীরা ভয়ে মৃত ব্যক্তির তুল্য হয়। তারপর স্বাভাবিক হবার পর, অবিলম্বে তারা নগরে গিয়ে প্রধান যাজকদের এই সম্বন্ধে সংবাদ দেয়। যিহূদীদের “প্রাচীনদের” সাথে মন্ত্রণা করার পর, তারা সেই সৈন্যদের ঘুষ দিয়ে ব্যাপারটা চাপা দিতে চায়। তাদের আদেশ করা হয়: “তোমরা বলিও যে ‘তাহার শিষ্যগণ রাত্রিকালে আসিয়া, যখন আমরা নিদ্রাগত ছিলাম, তখন তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছে।’”
যেহেতু রোমীয় সৈন্যদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে প্রহরায় ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, যাজকরা প্রতিজ্ঞা করে: “আর এ কথা [ঘুমিয়ে পড়েছিল] যদি দেশাধ্যক্ষের কর্ণগোচর হয়, তবে আমরাই তাহাকে বুঝাইয়া তোমাদের ভাবনা দূর করিব।” যেহেতু ঘুষের অঙ্ক বেশ বড় ধরনের ছিল, সৈন্যরা যা তাদের আজ্ঞা করা হয় তাই করে। ফলে, যীশুর দেহ চুরির মিথ্যা বর্ণনা যিহূদীদের মধ্যে বিস্তার লাভ করে।
মগ্দলীনী মরিয়ম, যে কবরের নিকট রয়ে যায়, তার দুঃখ হয়। যীশু কোথায় থাকতে পারেন? হেঁট হয়ে তিনি কবরের ভিতরে দেখেন, এবং লক্ষ্য করেন শুক্ল বস্ত্র পরিহিত দুইজন দূত, যারা আবার আবির্ভূত হয়েছেন! একজন পায়ের কাছে ও আরেকজন মাথার কাছে বসে, যীশুর শরীর যেখানে শায়িত ছিল সেইখানে। “নারী, রোদন করিতেছ কেন?” তারা জিজ্ঞাসা করেন।
“লোকে আমার প্রভুকে লইয়া গিয়াছে,” মরিয়ম উত্তর দেন, “কোথায় রাখিয়াছে, জানি না।” তারপর ফিরে আরও একজনকে দেখতে পান যিনি এই একই প্রশ্ন করেন: “নারী, রোদন করিতেছ কেন?” আরও জিজ্ঞাসা করেন: “কাহার অন্বেষণ করিতেছ?”
সে মনে করে এই ব্যক্তি বাগানের মালী যেখানে কবর রয়েছে, তিনি তাকে বলেন: “মহাশয়, আপনি যদি তাঁহাকে লইয়া গিয়া থাকেন, আমাকে বলুন, কোথায় রাখিয়াছেন; আমিই তাঁহাকে লইয়া যাইব।”
“মরিয়ম!” সেই ব্যক্তি বলেন। আর যে পরিচিত রীতিতে তিনি তার সাথে কথা বলেন, তার দ্বারা তিনি অবিলম্বে বুঝতে পারেন, ইনিই যীশু। “রব্বূণি!” (অর্থ “গুরু!”) তিনি বলে ওঠেন। আর মহা আনন্দে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু যীশু বলেন: “আমাকে স্পর্শ করিও না। কেননা আমি এখনও ঊর্দ্ধে পিতার নিকটে যাই নাই। কিন্তু তুমি আমার ভ্রাতৃগণের নিকটে গিয়া বল, ‘যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা, এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর, তাঁহার নিকটে আমি ঊর্দ্ধে যাই।’”
মরিয়ম দৌড়ে যান যেখানে প্রেরিত ও অন্য শিষ্যরা সমবেত আছেন। তিনি গিয়ে তার বিবরণ যোগ করেন অন্য স্ত্রীলোকদের সাথে পুনরুত্থিত যীশুকে দেখার বিষয়। কিন্তু, এই ব্যক্তিরা, যারা প্রথম স্ত্রীলোকদের কথা বিশ্বাস করেননি, সবেত মরিয়মের কথাও বিশ্বাস করেন না। মথি ২৮:৩-১৫; মার্ক ১৬:৫-৮; লূক ২৪:৪-১২; যোহন ২০:২-১৮.
▪ কবর শূন্য দেখার পর, মগ্দলীনী মরিয়ম কি করেন, আর অন্য স্ত্রীলোকদের কি অভিজ্ঞতা হয়?
▪ পিতর ও যোহন যখন কবর খালি দেখেন তাদের কি প্রতিক্রিয়া হয়?
▪ অন্য স্ত্রীলোকেরা যখন যীশুর পুনরুত্থানের কথা শিষ্যদের বলতে যাচ্ছিলেন তখন কার সম্মুখীন হন?
▪ সৈন্যদের, যারা প্রহরায় ছিল তাদের কি হয়, আর যে সংবাদ তারা যাজকদের দেয় তার কেমন সাড়া পায়?
▪ মগ্দলীনী মরিয়ম যখন একা কবরের কাছে ছিলেন তখন কি হয়, আর স্ত্রীলোকেরা যে খবর দেন শিষ্যরা তার প্রতি কিরূপ সাড়া দেন?