শিষ্যত্বের দায়িত্বভার
অধ্যায় ৮৪
শিষ্যত্বের দায়িত্বভার
সেই প্রধান ফরীশী, যিনি সবেত মহাসভার এক সদস্য ছিলেন, তার গৃহ ত্যাগ করার পর, যীশু যিরূশালেমের দিকেই চললেন। বিস্তর জনতা তাঁর অনুসরণ করে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল? তাঁর প্রকৃত অনুসরণকারী হতে হলে কি জড়িত আছে?
যখন তারা একসঙ্গে চলেছেন, যীশু জনতার দিকে ফিরেন এবং তাদের বিস্মিত করেন যখন বললেন: “যদি কেহ আমার নিকটে আইসে, আর আপন পিতা, মাতা, স্ত্রী, সন্তানসন্ততি, ভ্রাতৃগণ কি ভগিনীগণকে এমনকি, নিজ প্রাণকেও ঘৃণা না করে, তবে সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।” (NW)
যীশু কি বুঝান? যীশু কিন্তু এখানে বলছেন না যে তাঁর অনুসরণকারীরা আক্ষরিক অর্থে তাদের আত্মীয়দের ঘৃণা করবে। বরং তারা ঘৃণা করবে এই অর্থে যে তাঁকে যতটা প্রেম করে তার চেয়ে ওদের কম প্রেম করবে। যীশুর পূর্বপুরুষ যাকোব লেয়াকে “ঘৃণা” ও রাহেলকে প্রেম করতেন, এর অর্থ লেয়া তার বোন রাহেলের থেকে কম ভালবাসা পেত।
আরও, বিবেচনা করুন যীশু বলেন তাঁর কোন শিষ্য এমনকি “নিজ প্রাণ” বা জীবনও ঘৃণা করবে। এখানেও যীশু বুঝাচ্ছেন যে এক প্রকৃত শিষ্য যীশুকে তার নিজের প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসবে। যীশু এইভাবে জোর দিচ্ছেন যে তাঁর শিষ্য হওয়া এক কঠিন দায়িত্বভার। ইহা সযত্নে বিবেচনা না করে গ্রহণ করা উচিত নয়।
যীশুর শিষ্য হওয়ার সাথে জড়িত আছে কষ্ট ও তাড়না, যেমন তিনি বললেন: “যে কেহ নিজের যাতনাদণ্ড বহন না করে ও আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।” (NW) তাহলে, এক প্রকৃত শিষ্যকে যীশু যা স করেছিলেন সেই একই ধরনের নিন্দার বোঝা বইতে ইচ্ছুক হতে হবে, যার অন্তর্ভুক্ত, প্রয়োজন হলে, ঈশ্বরের শত্রুদের হাতে মৃত্যুবরণ, যা যীশু শীঘ্রই করতে চলেছেন।
তাহলে খ্রীষ্টের শিষ্য হওয়া, এমন একটি বিষয় যা অনুসরণকারী জনতাকে সযত্নে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। যীশু এই সত্যটিকে এক দৃষ্টান্তের দ্বারা জোর দেন। “উদাহরণস্বরূপ,” তিনি বললেন, “বাস্তবিক দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা করিলে, তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে, সমাপ্ত করিবার সঙ্গতি তাহার আছে কিনা? কি জানি ভিত্তিমূল বসাইলে পর যদি সে সমাপ্ত করিতে না পারে, তবে যত লোক তাহা দেখিবে, সকলে তাহাকে বিদ্রূপ করিতে আরম্ভ করিবে, বলিবে, ‘এ ব্যক্তি নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, কিন্তু সমাপ্ত করিতে পারিল না।’”
সুতরাং যীশু সেই আনুসরণরত জনতাকে দৃষ্টান্ত দিলেন যে তাঁর শিষ্য হওয়ার আগে, তাদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা তা পরিপূর্ণ করতে পারবেন যা এতে জড়িত আছে, যেমন এক ব্যক্তি যিনি দুর্গ নির্মাণ করার আগে নিশ্চিত হন যে তা সম্পূর্ণ করার উপযুক্ত সঙ্গতি তার আছে। আরেকটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে, যীশু বলে চলেন:
“অথবা কোন্ রাজা অন্য রাজার সহিত যুদ্ধে সমাঘাত করিতে যাইবার সময় অগ্রে বসিয়া বিবেচনা করিবেন না, যিনি বিংশতি সহস্র সৈন্য লইয়া আমার বিরুদ্ধে আসিতেছেন, আমি দশ সহস্র লইয়া কি তাহার সম্মুখবর্তী হইতে পারি? যদি না পারেন, তবে শত্রু দূরে থাকিতে তিনি দূত প্রেরণ করিয়া সন্ধির নিয়ম জিজ্ঞাসা করিবেন।”
যীশু তারপর তাঁর দৃষ্টান্তগুলির বিষয়ে জোর দিলেন, এই বলে: “ভাল, তদ্রূপ তোমাদের মধ্যে যে কেহ আপনার সর্বস্ব ত্যাগ না করে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।” অনুসরণকারী জনতা, এবং প্রত্যেকে যারা যীশুর বিষয়ে শিখেছে, তাদের এটি করতে ইচ্ছুক হতে হবে। তাদের যা আছে সব কিছুই ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে—তাদের সর্বস্ব, এমনকি নিজ জীবন পর্যন্ত—যদি তারা তাঁর শিষ্য হতে চায়। আপনি কি তা করতে ইচ্ছুক?
“লবণ ত উত্তম,” যীশু বলে চলেন। তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে, তিনি বলেছিলেন তাঁর শিষ্যরা “পৃথিবীর লবণ,” অর্থাৎ মানুষের উপরে তাদের সংরক্ষণের প্রভাব আছে, যেমন আক্ষরিক লবণ হল সংরক্ষণশীল। “কিন্তু সেই লবণেরও যদি স্বাদ গিয়া থাকে, তবে তাহা কিসে আস্বাদযুক্ত করা যাইবে? তাহা না ভূমির, না সারঢিবির উপযোগী,” যীশু শেষ করলেন। “লোকে তাহা বাহিরে ফেলিয়া দেয়। যাহার শুনিতে কাণ থাকে সে শুনুক।”
সুতরাং যীশু দেখালেন যে যারা বেশ কিছু সময় ধরে তাঁর শিষ্য তাদেরও এই বিষয়ে চলতে থাকার সিদ্ধান্তে দুর্বল হলে চলবে না। যদি তা করে, তবে তারা ব্যর্থ, জগতের চোখে কৌতুকাস্পদ এবং ঈশ্বরের সম্মুখে অনুপযোগী হয়ে পড়বে, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের জন্য নিন্দার কারণ হবে। ঠিক শক্তিহীন, দূষিত লবণের মত, তাদের বাহিরে ফেলে দিতে হবে, হ্যাঁ, ধ্বংস হতে হবে। লূক ১৪:২৫-৩৫; আদিপুস্তক ২৯:৩০-৩৩; মথি ৫:১৩.
▪ এক ব্যক্তির নিজেকে ও তার আত্মীয়স্বজনদের “ঘৃণা” করার অর্থ কি?
▪ কোন দুটি দৃষ্টান্ত যীশু দিলেন, এবং এগুলির অর্থ কি?
▪ লবণ সম্পর্কে যীশুর শেষ মন্তব্যের বিষয়টি কি?