সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সংশোধনমূলক অতিরিক্ত উপদেশ

সংশোধনমূলক অতিরিক্ত উপদেশ

অধ্যায় ৬৩

সংশোধনমূলক অতিরিক্ত উপদেশ

কফরনাহূমের বাসস্থানে যখন যীশু ও তাঁর প্রেরিতরা রয়েছেন, তখন প্রেরিতদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই তর্ক ছাড়াও আরও কিছু আলোচনা হয়। কফরনাহূমে তাদের ফিরবার সময়ে হয়ত এই ঘটনাটিও ঘটে, যখন যীশু ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত ছিলেন না। প্রেরিত যোহন সংবাদ দেন: “এক ব্যক্তিকে আপনার নামে ভূত ছাড়াইতে দেখিয়াছিলাম, আর, তাহাকে বারণ করিয়াছিলাম, কারণ সে আমাদের পশ্চাদগমন করে না।”

নিশ্চয়ই হয়ত যোহন মনে করেছিলেন, প্রেরিতরাই হলেন কেবলমাত্র, আরোগ্য দানের জন্য স্বত্বাধিকারী। সুতরাং তিনি মনে করলেন মানুষটি এই ক্ষমতাসম্পন্ন কাজটি অনুপযুক্ত ভাবে করছে, কারণ সে ত তাদের দলের নয়।

এই ক্ষেত্রে, যীশুর উপদেশ: “তাহাকে বারণ করিও না, কারণ এমন কেহ নাই, যে আমার নামে পরাআম-কার্য্য করিয়া সহজে আমার নিন্দা করিতে পারে; কারণ যে কেহ আমাদের বিপক্ষ নয়, সে আমাদের সপক্ষ। বাস্তবিক যে কেহ তোমাদিগকে খ্রীষ্টের লোক বলিয়া এক বাটি জলপান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সে কোন মতে আপন পুরস্কারে বঞ্চিত হইবে না।”

এই ব্যক্তিটিকে যীশুর পক্ষাবলম্বন করতে হলে তাকে শারীরিক ভাবে যীশুর অনুগমণ করতে হবে এটি প্রয়োজনীয় নয়। খ্রীষ্টিয় মণ্ডলী তখনও গঠিত হয়নি, সুতরাং, সে তাদের দলভুক্ত নয় বলে এটি প্রমাণ হচ্ছে না, যে সে অন্য মণ্ডলীর। সেই ব্যক্তিটির যীশুর নামের উপর সত্য সত্যই বিশ্বাস ছিল, ফলে অশুচি আত্মা বিতাড়িত করতে সমর্থ হয়। সে যা করেছিল তা যীশুর কথা অনুযায়ী পুরস্কার পাবার উপযুক্ত, তুলনা করলে অনুকূলজনক। সে তার পুরস্কার হারাবে না।

কিন্তু যদি সে প্রেরিতদের কোন কাজ বা কথায় বিদ্ধ পায়? তা কিন্তু খুব মারাত্মক হবে! যীশু বললেন: “আর এই যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের একজনের বিদ্ধ জন্মায়, বরং তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দিলেও তাহার পক্ষে ভাল।”

যীশু বললেন, তাঁহার অনুসরণকারীরা, তাদের জীবন থেকে অতি প্রিয় কোন কিছুকেও ত্যাগ করবার চেষ্টা করবেন, যেমন, হাত, পা, এবং চোখ যা বিদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের প্রিয় বস্তু ছাড়াই ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা ভাল, কিন্তু এইগুলি নিয়ে গেহেন্নায় নিক্ষিপ্ত হওয়া ঠিক নয়, (যিরূশালেমের কাছে এক জ্বলন্ত আবর্জনার কুণ্ড) যা হল ধ্বংসের প্রতীক।

যীশু আরও সাবধান করলেন: “দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটিকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন।” এর পর তিনি এই “ক্ষুদ্রগণের” মূল্য সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত দিলেন, যখন তিনি এক ব্যক্তির সম্বন্ধে বললেন যার ১০০টি মেষ ছিল, কিন্তু একটি হারিয়ে যায়। এই ব্যক্তিটি ৯৯টি ছেড়ে সেই ১টির খোঁজ করতে শুরু করে, যীশু ব্যাখ্যা করলেন, এবং তাকে পেয়ে সে ৯৯টির থেকে সেই একটির জন্য অধিক আনন্দ করে। “তদ্রূপ,” যীশু এই বলে শেষ করলেন, “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একজনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।”

সবেতঃ, প্রেরিতদের নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কির বিষয়টি মনে এনে, যীশু উৎসাহিত করেন: “তোমরা আপন আপন অন্তরে লবণ রাখ, এবং পরস্পর শান্তিতে থাক।” স্বাদবিহীন খাদ্যকে লবণের সাহায্যে স্বাদযুক্ত করা হয়। তাই, রূপক লবণ যা একজন বলে তা সহজে গ্রহণযোগ্য করায়। এই ধরনের লবণ শান্তি রক্ষা করতে সাহায্য করে।

তবুও অনেক সময়, মানবিক অসিদ্ধতার জন্য, গুরুতর বাদানুবাদ হয়ে যেতে পারে। যীশু এগুলিকে কিভাবে ঠিক করতে হবে তার পথও বলে দিয়েছেন। “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে,” যীশু বললেন, “তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শোনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।” যদি সে কথা না শোনে, যীশু পরামর্শ দেন, “তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন দুই কিম্বা তিনজন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিন্ন হয়।”

আর কেবলমাত্র শেষ পর্য্যায়ে, যীশু বললেন, বিষয়টিকে, “মণ্ডলীর কাছে” নিয়ে যেতে হবে, অর্থাৎ দায়িত্বপূর্ণ যে সব অধ্যক্ষরা মণ্ডলীতে থাকেন, যাতে তারা বিচারগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে যদি দোষী ব্যক্তি তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না চায়, যীশু উপসংহার করেন, “সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।”

এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে, অধ্যক্ষদের যিহোবার বাক্যের পরামর্শগুলিকে সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। এই জন্য, যখন তারা কোন ব্যক্তিকে দোষী ও শাস্তি পাবার যোগ্য মনে করবেন, তখন বিচারটি ‘স্বর্গে বদ্ধ করা হয়ে গেছে।’ আর যখন তারা “পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে,” অর্থাৎ তারা যদি কাউকে নির্দ্দোষ প্রতিপন্ন করেন, তবে তা “স্বর্গে মুক্ত হবে।” এই বিচার সংআন্ত আলোচনার সম্বন্ধে যীশু বলেন, “যেখানে দুই কি তিনজন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি।” মথি ১৮:৬-২০; মার্ক ৯:৩৮-৫০; লূক ৯:৪৯, ৫০.

▪ যীশুর দিনে তাঁর সঙ্গে যাওয়া কেন প্রয়োজনীয় ছিল না?

▪ এক ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে বিদ্ধিত করা কতটা গুরুতর বিষয়, যীশু কিভাবে ক্ষুদ্রগণের গুরুত্ব সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করলেন?

▪ প্রেরিতদের নিজেদের মধ্যে যেন লবণ থাকে, যীশুর এই উৎসাহজনক বিষয়টি বলবার জন্য কোন ঘটনা প্রেরণা যোগায়?

▪ ‘বদ্ধ করা’ এবং ‘মুক্ত করার’ মধ্যে কি তাৎপর্য্য আছে?