সপ্তম দিনে আরও শিক্ষাদান
অধ্যায় ৬৮
সপ্তম দিনে আরও শিক্ষাদান
কুটীরবাস পর্বের শেষ দিন, সপ্তম দিনের, উৎসব চলেছে। যীশু মন্দিরের যে অংশে এখন শিক্ষা দিচ্ছেন তা মন্দিরের “ভাণ্ডার গৃহ।” হয়ত এই জায়গাটি মহিলাদের বসার স্থান, যেখানে অর্থের বাক্স থাকত, লোকেরা যেখানে দান জমা দিত।
পর্বের সময় প্রতি রাত্রে, এক বিশেষ ধরনের আলোকসজ্জায় মন্দিরের এই অংশটি সজ্জিত হত। চারটি বড় বড় বাতিদান এখানে স্থাপিত ছিল, যার প্রত্যেকটিতে চারটি করে তেল পূর্ণ পাত্র থাকত। এই বাতিদানগুলি থেকে, যে ১৬টি পাত্রের মাধ্যমে আলো জ্বলত, তা দূর পর্যন্ত রাত্রে চারি-পাশকে আলোকিত রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। যীশু এখন যা বললেন, তা তাঁর শ্রোতাদের এই দৃশ্যটিকে মনে করিয়ে দিল। “আমি জগতের জ্যোতি,” যীশু ঘোষণা করলেন। “যে আমার পশ্চাৎ আইসে, সে কোনমতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাইবে।”
ফরীশীরা বাধা দেয়: “তুমি আপনার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিতেছ; তোমার সাক্ষ্য সত্য নহে।”
যীশু উত্তর করে তাদের বললেন: “যদিও আমি আপনার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিই, তথাপি আমার সাক্ষ্য সত্য; কারণ আমি কোথা হইতে আসিয়াছি, কোথায়ই বা যাইতেছি, তাহা জানি। কিন্তু আমি কোথা হইতে আসি, কোথায়ই বা যাইতেছি, তাহা তোমরা জান না।” তিনি আরও বলেন: “আমি আপনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিই, আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।”
“তোমার পিতা কোথায়?” ফরীশীরা জানতে চায়।
“তোমরা আমাকেও জান না, আমার পিতাকেও জান না,” যীশু উত্তর করলেন। “যদি আমাকে জানিতে, আমার পিতাকেও জানিতে।” ফরীশীরা যদিও তখনও যীশুকে ধরতে চাইছে, কিন্তু কেউ তাকে স্পর্শ করল না।
“আমি যাইতেছি,” যীশু আবার বললেন। “আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না।”
এতে যিহূদীরা চিন্তা করতে লাগল: “এ কি আত্মঘাতী হইবে? তাই বলিতেছে, ‘আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না।’”
“তোমরা অধঃস্থানের,” যীশু ব্যাখ্যা দিলেন। “আমি ঊর্দ্ধস্থানের। তোমরা এ জগতের, আমি এ জগতের নহি।” তারপর তিনি যোগ দিলেন: “কেননা যদি বিশ্বাস না কর যে, আমিই তিনি, তবে তোমাদের পাপ সমূহে মরিবে।”
যীশু, এখানে উল্লেখ করছেন তাঁর মনুষ্য পূর্বের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ও তিনি যে প্রতিজ্ঞাত মশীহ, বা খ্রীষ্ট সেই সম্বন্ধে। তবুও, নিঃসন্দেহে তারা অপমানকরভাবে, প্রশ্ন করে: “তুমি কে?”
তাদের দ্বারা অস্বীকৃত হওয়ার সম্মুখীন হয়ে, যীশু বললেন: “কেনই বা আমি তোমাদের কাছে একেবারেই কথা বলি?” তবুও তিনি বলে চললেন; “যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি সত্য, এবং আমি তাঁহার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাই জগৎকে বলিতেছি।” যীশু আরও বললেন: “যখন তোমরা মনুষ্য পুত্রকে উচ্চে উঠাইবে, তখন জানিবে যে, আমিই তিনি, আর আমি আপনা হইতে কিছুই করিনা, কিন্তু পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি। আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন; তিনি আমাকে একা ছাড়িয়া দেন নাই, কেননা আমি সর্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি।”
যীশু যখন এই কথাগুলি বললেন, তখন আনেকেই তাঁকে বিশ্বাস করল। তাদের যীশু বললেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।”
“আমরা অব্রাহামের বংশ,” তাঁর বিরোধীরা দাবি করে, “কখনও কাহারও দাস হই নাই। আপনি কেমন করিয়া বলিতেছেন যে, ‘তোমাদিগকে স্বাধীন করা যাইবে?’”
যদিও যিহূদীরা প্রায়ই বিদেশীদের অধীনতায় আসত, তবুও তারা কোন উৎপীড়ককে প্রভু হিসাবে স্বীকার করত না। তারা দাস হিসাবে নিজেদের জানাতে অস্বীকৃত হত। কিন্তু যীশু ইঙ্গিত দিলেন যে তারা সত্যই দাস। কি ভাবে? “সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি,” যীশু বললেন, “যে কেহ পাপাচরণ করে, সে পাপের দাস।”
তারা যে পাপের দাস এই কথার অস্বীকৃতি যিহূদীদের এক বিপদজনক পরিস্থিতিতে আনল। “আর দাস বাটীতে চিরকাল থাকে না,” যীশু ব্যাখ্যা করলেন। “কিন্তু পুত্র চিরকাল থাকেন।” যেহেতু এক দাসের উত্তরাধিকারের অধিকার নেই, সে যে কোন সময় বিতাড়িত হতে পারে। কেবলমাত্র জন্মানুসারে পুত্র বা পোষ্যপুত্র বাড়ীতে “চিরকাল” থাকে, এর অর্থ, যতদিন পর্যন্ত সে বেঁচে থাকে।
“অতএব পুত্র যদি তোমাদের স্বাধীন করেন,” যীশু বললেন, “তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে।” তাহলে যে সত্য মানুষকে স্বাধীন করবে, তা হল পুত্র যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কিত সত্য। কেবলমাত্র তাঁর সিদ্ধ মানব জীবনের বলিদানের দ্বারাই কেহ মৃত্যুজনক পাপ হতে মুক্ত হয়। যোহন ৮:১২-৩৬.
▪ যীশু সপ্তম দিনে কোথায় শিক্ষা দেন? রাত্রে সেখানে কি দেখা যায়, এবং এটি কি ভাবে যীশুর শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
▪ যীশু তাঁর উৎস সম্বন্ধে কি বললেন, আর ইহা কিভাবে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে দেয়?
▪ কিভাবে যিহূদীরাও দাস, কিন্তু কোন সত্য তাদের স্বাধীন করবে?