স্ত্রীলোকটি তাঁর বস্ত্র স্পর্শ করে
অধ্যায় ৪৬
স্ত্রীলোকটি তাঁর বস্ত্র স্পর্শ করে
যীশু যে দিকাপলি থেকে ফিরে এসেছেন সেই খবর কফরনাহূমে এসে পৌঁছায়, আর সমুদ্র তটে বিরাট এক জনতা একত্র হয় তাঁকে অভ্যর্থনা করার জন্য। কোন সন্দেহ নেই যে তারা শুনেছে কিভাবে তিনি ঝড়কে থামিয়েছেন এবং সেই ভূতগ্রস্ত লোকদের ভাল করেছেন। তাই এখন, যখন তিনি ফিরে আসেন, তারা আগ্রহে ও আশায় অপেক্ষা করে।
একজন যিনি যীশুকে দেখতে খুব ইচ্ছুক, তিনি হলেন, যায়ীর নামে সমাজগৃহের এক অধ্যক্ষ। তিনি যীশুর পায়ে পড়ে বার বার বিনয় করেন: “আমার মেয়েটি মারা যায়। আপনি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করুন, যেন সে সুস্থ হইয়া বাঁচে।” যেহেতু মেয়েটি কেবল ১২ বৎসর বয়সী এবং তার একমাত্র কন্যা, সে যায়ীরের কাছে খুব মূল্যবান।
যীশু সাড়া দিয়ে, সেই জনতার সাথে, যায়ীরের বাড়ির দিকে যান। আমরা লোকেদের উত্তেজনার কথা ভাবতে পারি যখন তারা আরও একটি আশ্চর্য্য কাজের অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেই ভীড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক দাঁড়িয়ে যে তার নিজের ভীষণ সমস্যার বিষয়ে চিন্তিত ছিল।
প্রায় ১২ বৎসর ধরে, এই স্ত্রীলোকটি রক্তস্রাবে ভুগছে। সে এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে যায়, তার সব পয়সা খরচ হয়ে গেছে চিকিৎসায়। কিন্তু কোন ফল হয়নি; বরঞ্চ, তার সমস্যা আরও খারাপ হয়েছে।
যেমন আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, তাকে দুর্বল করা ছাড়াও, তার রোগ খুব লজ্জাকর ও অপদস্থকারক। একজন সাধারণত এমন রোগ সম্বন্ধে প্রকাশ্যে বলে না। এমনকি, মোশির আইনে একজন স্ত্রীলোকের যখন রক্তস্রাব হয় তখন সে অপবিত্র, আর কেউ যদি তাকে ছোঁয় তবে তাকে স্নান করতে হবে ও সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকতে হবে।
এই স্ত্রীলোকটি যীশুর আশ্চর্য্য কার্যের কথা শুনেছে এবং এখন তাঁকে খুঁজে বার করেছে। তার অশুচি অবস্থার কথা স্মরণে রেখে, সে খুব সতর্কতার সাথে ভীড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ও মনে মনে বলছে: “কেবল যদি আমি উহাঁর বস্ত্র স্পর্শ করিতে পাই, তবেই সুস্থ হইব।” যখন সে স্পর্শ করে, তৎক্ষণাৎ সে বোঝে যে তার স্রাব বন্ধ হয়ে গেছে!
“কে আমার বস্ত্র স্পর্শ করিল?” যীশুর ঐ কথাগুলি কিভাবে না তাকে বিস্মিত করে! তিনি কি করে জানলেন? ‘গুরু,’ পিতর প্রতিবাদ করেন, ‘সমস্ত লোকেরা আপনার উপর চাপাচাপি করিতেছে, আর আপনি প্রশ্ন করছেন, “কে আমাকে স্পর্শ করিল?”’
সেই স্ত্রীলোকটির জন্য চারিদিকে তাকিয়ে, যীশু ব্যাখ্যা করেন: “আমাকে কেহ স্পর্শ করিয়াছে, কেননা আমি টের পাইয়াছি আমা হইতে শক্তি বাহির হইল।” বাস্তবিক, ইহা সাধারণ স্পর্শ করা নয়, কারণ যে আরোগ্য হয়েছে সে যীশুর শক্তিকে টেনে নিয়েছে।
স্ত্রীলোকটি যখন দেখে যে, সে যা করেছে তা দৃষ্টি এড়ায়নি, সে এসে যীশুর পায়ে পড়ে, ও ভয়ে কাঁপতে থাকে। সমস্ত লোকের সামনে সে সব খুলে বলে তার রোগ সম্বন্ধে এবং কিভাবে এখনি সে আরোগ্য লাভ করেছে।
তার সমস্ত উক্তি শুনে, যীশু করুণার সাথে তাকে সান্ত্বনা দেন: “হে কন্যে, তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল। শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক।” ইহা জানা কত উত্তম যে ঈশ্বর এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করেছেন পৃথিবীকে শাসন করার জন্য যিনি উষ্ণ ও করুণাময়, লোকেদের যত্ন নেন ও তাদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন! মথি ৯:১৮-২২; মার্ক ৫:২১-৩৪; লূক ৮:৪০-৪৮; লেবীয়পুস্তক ১৫:২৫-২৭.
▪ যায়ীর কে, ও যীশুর কাছে কেন আসেন?
▪ একটি স্ত্রীলোকের কি সমস্যা, আর যীশুর কাছে সাহায্যের জন্য আসা তার পক্ষে কেন অসুবিধাজনক?
▪ কিভাবে স্ত্রীলোকটি আরোগ্য লাভ করে, এবং যীশু তাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেন?