সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য”

“স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য”

অধ্যায় ৫৪

“স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য”

সত্যই আগের দিনটি ছিল ঘটনাবহুল। যীশু অলৌকিক উপায়ে হাজার হাজার জনকে খাওয়ান এবং তাঁকে রাজা করার যে চেষ্টা করা হয় তা এড়িয়ে তিনি পালিয়ে যান। সেই রাত্রেই তিনি ঝড়বিক্ষুব্ধ গালীল সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটেন; পিতরকে বাঁচান, যিনি ডুবে যাচ্ছিলেন যখন তিনি ঝড়ে ওলট পালট সমুদ্রের উপর হাঁটতে চেষ্টা করেন; আর তাঁর শিষ্যদের নৌকাডুবি থেকে বাঁচাতে ঢেউকে থামিয়ে দেন।

এখন যে সমস্ত লোকেদের তিনি উত্তর পূর্ব গালীল সমুদ্রের তীরে কফরনাহূমের কাছে আশ্চর্য্যজনক ভাবে খাইয়েছিলেন তারা যীশুকে খুঁজে পেয়ে জিজ্ঞাসা করে: “আপনি এখানে কখন আসিয়াছেন?” তাদের ধমক দিয়ে, যীশু বললেন তারা তাঁর খোঁজে এসেছে এইজন্য যে আর একটি বার বিনামূল্যে খাদ্য খেতে পাবে। তিনি তাদের কাজ করতে বললেন, সেই ভক্ষ্যের জন্য নয় যা নশ্বর, কিন্তু সেই ভক্ষ্যের জন্য শ্রম করতে বললেন, যা অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত থাকে। তখন লোকেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করল: “আমরা যেন ঈশ্বরের কার্য্য করিতে পারি, এজন্য আমাদের কি করিতে হইবে?”

যীশু কেবলমাত্র একটি কার্যকেই সর্বোচ্চ মূল্যের বললেন। “ঈশ্বরের কার্য্য এই,” তিনি ব্যাখ্যা দেন, “যেন তাঁহাতে তোমরা বিশ্বাস কর, যাঁহাকে তিনি প্রেরণ করিয়াছেন।”

তবুও, সেই লোকেরা, যীশুর উপর বিশ্বাস করল না, যদিও তিনি অনেক অলৌকিক কার্য করে দেখালেন। ইহা অবিশ্বাস্য যে, অতগুলি আশ্চর্য্য কাজ দেখবার পর যেগুলি তিনি করলেন, তারা জিজ্ঞাসা করল: “ভাল, আপনি এমন কি চিহ্ন কার্য্য করিতেছেন, যাহা দেখিয়া আমরা আপনাকে বিশ্বাস করিব? আপনি কি কার্য্য করিতেছেন? আমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিলেন, যেমন লেখা আছে, ‘তিনি ভোজনের জন্য তাহাদিগকে স্বর্গ হইতে খাদ্য দিলেন।’

তাদের চিহ্ন দেখানোর অনুরোধের উত্তরে, যীশু এই অলৌকিক আয়োজনের উৎস সম্বন্ধে স্পষ্ট করে বললেন: “মোশি তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে সেই খাদ্য দেন নাই, কিন্তু আমার পিতাই তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য দেন। কেননা ঈশ্বরীয় খাদ্য তাহাই, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, ও জগৎকে জীবন দান করে।”

“প্রভু,” তাহারা বলিল, “চিরকাল সেই খাদ্য আমাদিগকে দিউন।”

“আমিই সেই জীবন-খাদ্য,” যীশু ব্যাখ্যা করেন। “যে ব্যক্তি আমার কাছে আইসে, সে ক্ষুধার্ত্ত হইবে না, ও যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে তৃষ্ণার্ত্ত হইবে না, কখনও না। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি যে, তোমরা আমাকে দেখিয়াছ, আর বিশ্বাস কর না। পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সে সমস্ত আমারই কাছে আসিবে; এবং যে আমার কাছে আসিবে, তাহাকে আমি কোন মতে বাহিরে ফেলিয়া দিব না। কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার নিমিত্ত আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার ইচ্ছা এই, তিনি আমাকে যে সমস্ত দিয়াছেন, তাহার কিছুই যেন না হারাই, কিন্তু শেষ দিনে যেন তাহা উঠাই। কারণ আমার পিতার ইচ্ছা এই, যে কেহ পুত্রকে দর্শন করে ও তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন পায়।”

ইহাতে যিহূদীরা নিজেদের মধ্যে যীশুকে নিয়ে বচসা করতে লাগল কারণ তিনি বলেন, “আমিই সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে।” তারা তার মধ্যে কিছুই যেন দেখেনি কেবলমাত্র এক পার্থিব পিতামাতার সন্তান ছাড়া সুতরাং নাসরতীয় লোকদের মত আপত্তি করে, এরাও বলল: “একি যোষেফের পুত্র সেই যীশু নয়, যাহার পিতা মাতাকে আমরা জানি? এখন এ কেমন করিয়া বলে ‘আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছি’?”

“তোমরা পরস্পর বচসা করিও না,” যীশু উত্তর করলেন। “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না; আর আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। ভাববাদী-গণের গ্রন্থে লেখা আছে, ‘তাহারা সকলে যিহোবার কাছে শিক্ষা পাইবে।’ যে কেহ পিতার নিকটে শুনিয়া শিক্ষা পাইয়াছে, সেই আমার কাছে আইসে। কেহ যে পিতাকে দেখিয়াছে, তাহা নয়; যিনি ঈশ্বর হইতে আসিয়াছেন, কেবল তিনিই পিতাকে দেখিয়াছেন। সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে।”

এরপর, যীশু আবার বললেন: “আমিই জীবন খাদ্য। তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিল, আর তাহারা মরিয়া গিয়াছে। এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, যেন লোকে তাহা খায়, ও না মরে। আমিই সেই জীবন্ত খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। কেহ যদি এই খাদ্য খায়, সে অনন্ত কাল জীবিত থাকিবে।” হ্যাঁ, যীশুর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করলে, যে তিনি ঈশ্বর দ্বারা প্রেরিত, লোকে অনন্ত জীবন পেতে পারে। মান্না, বা আর কোনও খাদ্য এটি যোগাতে পারবে না!

এই স্বর্গীয় খাদ্য বিষয়ে আলোচনাটি আপাতরূপে শুরু হয় যখন লোকে যীশুকে কফরনাহূমের কাছে পায়। তবে ইহা চলতেই থাকে, এবং যীশু যখন কফরনাহূমে এক সমাজ গৃহে শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন চূড়ান্ত পর্য্যায় পৌঁছায়। যোহন ৬:২৫-৫১, ৫৯; গীতসংহিতা ৭৮:২৪; যিশাইয় ৫৪:১৩; মথি ১৩:৫৫-৫৭.

▪ স্বর্গ হতে খাদ্য সম্বন্ধে যীশুর এই আলোচনাটির আগে কি কি ঘটনা ঘটে?

▪ যীশু সবে মাত্র যা কিছু করে দেখিয়েছেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে এক চিহ্ন কার্য করে দেখানোর অনুরোধ কেন অনুপযুক্ত?

▪ যীশুর দাবি যে তিনিই স্বর্গ হতে প্রকৃত খাদ্য, তাতে যিহূদীরা কেন বচসা করছিল?

▪ স্বর্গ হতে খাদ্যের বিষয়ের আলোচনাটি কোথায় হচ্ছিল?