সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হস্তে সমর্পিত এবং নিয়ে যাওয়া

হস্তে সমর্পিত এবং নিয়ে যাওয়া

অধ্যায় ১২৪

হস্তে সমর্পিত এবং নিয়ে যাওয়া

যখন পীলাত, যন্ত্রণাগ্রস্ত যীশুর শান্ত মর্যাদাপূর্ণ মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁকে আবার মুক্তি দিতে চেষ্টা করেন, প্রধান যাজকরা আরও আধান্বিত হয়। তারা ঠিক করে নিয়েছে যেন কিছুই তাদের মন্দ বাসনাকে বাধা না দেয়। তাই তারা আবার চিৎকার করতে আরম্ভ করে: “উহাকে যাতনা দণ্ডে দাও! যাতনা দণ্ডে দাও!” (NW)

“তোমরা আপনারা ইহাকে লইয়া যাতনা দণ্ডে দাও,” পীলাত উত্তর করেন। (NW) (তাদের আগের দাবির বিপরীতে, যিহূদীরা হয়ত ব্যক্তিদের হত্যা করতে পারত যারা গুরুতর ধর্মীয় অপরাধে দোষী।) এরপর, কমপক্ষে পঞ্চমবার পীলাত যীশুকে নির্দোষ ঘোষণা করে বলেন: “আমি ইহার কোন দোষ পাই না।”

যিহূদীরা যখন লক্ষ্য করে যে তাদের রাজনৈতিক অভিযোগগুলিতে কোন ফল হচ্ছে না, তারা আবার সেই ঈশ্বর নিন্দার ধর্মীয় অভিযোগটি আনে, যা তারা তাঁর উপর এনেছিল যিহূদী মহাসভায় বিচারের সময় কয়েক ঘন্টা আগে। “আমাদের এক ব্যবস্থা আছে,” তারা বলে, “সেই ব্যবস্থা অনুসারে তাহার প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত, কারণ সে আপনাকে ঈশ্বরের পুত্র করিয়া তুলিয়াছে।”

এই দোষারোপ পীলাতের কাছে নূতন, আর ইহা তাকে আরও ভীত করে। এবার তিনি বুঝতে পারেন যীশু কোন সাধারণ লোক নন, তার স্ত্রীর স্বপ্ন ও যীশুর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের শক্তি তা প্রমাণ করে। কিন্তু “ঈশ্বরের পুত্র?” পীলাত জানেন যীশু গালীল থেকে এসেছেন। কিন্তু, তার পূর্বেও কি তিনি অস্তিত্বে ছিলেন? তাঁকে আবার প্রাসাদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে, পীলাত জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?”

যীশু নীরব থাকেন। এর আগে তিনি পীলাতকে বলেছিলেন যে তিনি রাজা কিন্তু তাঁর রাজ্য এই জগতের নয়। এখন আরও বিশদ বিবরণ কোন উপকারী উদ্দেশ্য সাধন করবে না। যাইহোক, উত্তর না পেয়ে ইহা পীলাতের মর্যাদার হানী করে, আর তিনি রেগে গিয়ে যীশুকে এই কথা বলেন: “আমার সঙ্গে কথা কহিতেছ না? তুমি কি জান না যে, তোমাকে ছাড়িয়া দিবার ক্ষমতা আমার আছে, ও তোমাকে যাতনা দণ্ডে দিবার ক্ষমতাও আমার আছে?”

“যদি ঊর্দ্ধ হইতে তোমাকে দত্ত না হইত, তবে আমার বিরুদ্ধে তোমার কোন ক্ষমতা থাকিত না,” যীশু সম্মানপূর্বক উত্তর দেন। যে ক্ষমতা ঈশ্বর দিয়েছেন মনুষ্য শাসকদের জাগতিক বিষয় দেখাশুনা করার, তিনি সেই বিষয় উল্লেখ করছেন। যীশু যোগ দেন: “এই জন্য যে ব্যক্তি তোমার হস্তে আমাকে সমর্পণ করিয়াছে, তাহারই পাপ অধিক।” সত্যই, মহাযাজক কায়াফা, তার সঙ্গীরা ও ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা অধিক দায়ী যীশুর প্রতি এই অবিচারের জন্য পীলাতের থেকেও।

যীশুর দ্বারা আরও প্রভাবিত হয়ে এবং ভয়ে যে যীশু হয়ত ঐশিক উৎস থেকে এসেছেন, পীলাত তাঁকে ছেড়ে দেবার আবার চেষ্টা করেন। কিন্তু যিহূদীরা, যাইহোক, পীলাতকে প্রতিরোধ করে। তারা তাদের রাজনৈতিক অভিযোগ আবার উল্লেখ করে, এবং কৌশলে ভয় দেখায়: “যদি উহাকে ছাড়িয়া দেন, তবে আপনি কৈসরের মিত্র নহেন। যে কেহ আপনাকে রাজা করিয়া তুলে, সে কৈসরের বিপক্ষে কথা কহে।”

এই ভয়াবহ জটিলতা সত্ত্বেও, পীলাত যীশুকে আরও একবার বাইরে আনেন। “দেখ! তোমাদের রাজা!” তিনি তাদের কাছে অনুনয় করেন।

“দূর কর! দূর কর! উহাকে যাতনা দণ্ডে দাও!” (NW)

“তোমাদের রাজাকে কি যাতনা দণ্ডে দিব?” হতাশায় পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

যিহূদীরা রোমীয়দের শাসনের আধীনে ক্রুদ্ধ। বাস্তবিকই, তারা রোমীয় শাসনকে ঘৃণা করে! কিন্তু, কপটতার সাথে, প্রধান পুরোহিতরা বলে: “কৈসর ছাড়া আমাদের অন্য রাজা নেই।”

তার রাজনৈতিক পদ ও খ্যাতির ভয়ে পীলাত অবশেষে যিহূদীদের চাপের সম্মুখে নতি স্বীকার করেন। তিনি যীশুকে তাদের হাতে সঁপে দেন। সৈন্যরা যীশুর বেগুনিয়া বস্ত্র খুলে নেয় ও তাঁকে আলখাল্লা পরায়। যখন যীশুকে যাতনা দণ্ডে দেবার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, নিজেকে তাঁর যাতনা দণ্ড বয়ে নিয়ে যেতে হয়।

এখন প্রায় মধ্য সকাল শুআবার, নিশান ১৪; আর হয়ত মধ্যাহ্ন এগিয়ে আসছে। যীশু সেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেগে আছেন, আর তার সাথে একের পর এক, কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা ভোগ করে চলেছেন। সেইজন্য, বোঝা যায় যে কেন তাঁর শক্তি তিনি হারিয়ে ফেলেন যাতনা দণ্ডের ভারের জন্য। সুতরাং শিমোন নামে এক পথিককে, আফ্রিকার কুরীণীয়কে, কাজে লাগান হয় সেই যাতনা দণ্ড তাঁর জন্য বয়ে নিয়ে যেতে। তারা যখন আগ্রসর হয়, অনেক ব্যক্তিরা, যার মধ্যে মহিলারাও ছিল, তারা দুঃখে তাদের বুক চাপড়াতে থাকে যীশুর জন্য।

যীশু সেই স্ত্রীলোকদের দিকে ফিরে বলেন: “ওগো যিরূশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিও না, বরং আপনাদের এবং আপন আপন সন্তান সন্ততির জন্য কাঁদ। কেননা দেখ! এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকে বলিবে, ‘ধন্য সেই স্ত্রীলোকেরা, যাহারা বন্ধ্যা, যাহাদের উদর কখনও প্রসব করে নাই, যাহাদের স্তন কখনও দুগ্ধ দেয় নাই!’ . . . কারণ লোকেরা সরস বৃক্ষের প্রতি যদি এমন করে, তবে শুধ বৃক্ষে কি না ঘটিবে?”

যীশু যে বৃক্ষের কথা ইঙ্গিত করছেন তা হল যিহূদী জাতি, যার মধ্যে এখনও কিছু রস আছে যীশুর উপস্থিতির এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাসী অবশিষ্টাংশদের জন্য। কিন্তু জাতির মধ্য থেকে যখন এদেরকে বের করে নেওয়া হবে, কেবল একটি আত্মিক মৃত বৃক্ষ অবশিষ্ট থাকবে, হ্যাঁ, শুকিয়ে যাওয়া এক জাতীয় সংগঠন। ওহ, কি রোদনের কারণই না হবে যখন রোমীয় সৈন্যরা, ঈশ্বরের ঘাতকরূপে, যিহূদী জাতিকে ধ্বংস করবে! যোহন ১৯:৬-১৭; ১৮:৩১; লূক ২৩:২৪-৩১; মথি ২৭:৩১, ৩২; মার্ক ১৫:২০, ২১.

▪ যিহূদী ধর্মীয় নেতারা যীশুর বিরুদ্ধে কি আভিযোগ করে যখন তাদের রাজনৈতিক অভিযোগসকল বিফল হয়?

▪ পীলাত কেন আরও ভীত হন?

▪ যীশুর প্রতি যা ঘটে তার জন্য অধিক পাপী কারা?

▪ অবশেষে, যাজকরা কিভাবে যীশুকে হত্যা করার জন্য সমর্পণ করতে পীলাতকে পরিচালিত করে?

▪ যে স্ত্রীলোকেরা তাঁর জন্য রোদন করছিল তাদের যীশু কি বলেন, আর বৃক্ষ “সরস” ও “শুধ” এই কথার দ্বারা কি ইঙ্গিত করেন?