সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হারানর অন্বেষণে

হারানর অন্বেষণে

অধ্যায় ৮৫

হারানর অন্বেষণে

যীশু নম্রভাবে যারা ঈশ্বরের সেবা করবে তাদের খুঁজে পেতে উদ্‌গ্রীব। সুতরাং তিনি খোঁজ শুরু করেন এবং প্রত্যেককে রাজ্য সম্বন্ধে বলেন, এমনকি কুখ্যাত পাপীদেরও। এই ব্যক্তিরা এখন কথা শুনতে তাঁর কাছে আসছে।

তা দেখে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা যীশুর বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে লাগল, কারণ তিনি তাদের সঙ্গ দেন যাদের তারা মনে করে অযোগ্য। তারা গোপনে বলতে থাকে: “এ ব্যক্তি পাপীদিগকে গ্রহণ করে, ও তাহাদের সহিত আহার ব্যবহার করে।” তাদের সম্মানীয় পদের কাছে ইহা কতই না নিম্ন কাজ! ফরীশী অধ্যাপকেরা সাধারণ মানুষদের সাথে পায়ের তলার ধূলার সমান ব্যবহার করত। প্রকৃতপক্ষে, তারা ‘অ্যাম হা·’আ’রেটস এই ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করত, “ভূমির [পৃথিবীর] মানুষ,” এদের জন্য তাদের কত ঘৃণা আছে প্রদর্শন করতে।

অন্যদিকে, যীশু প্রতিটি মানুষের সাথে সম্মান, দয়া ও করুণা সহযোগে ব্যবহার করতেন। যার ফলে, এই ধরনের অবনত মানুষেরা, মন্দ কাজের জন্য সুপরিচিত ব্যক্তিরা সহ, সাগ্রহে তাঁর কথা শুনতে চাইত। কিন্তু যাদের তারা অযোগ্য মনে করে তাদের প্রতি যীশুর প্রচেষ্টা ব্যয়ে ফরীশীদের সমালোচনার বিষয়ে কি বলা যায়?

যীশু তাদের এই আপত্তির জবাব এক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে দেন। তিনি ফরীশীদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপরেই কথা বললেন, যেন তারা ধার্ম্মিক এবং ঈশ্বরের পালের মধ্যে সুরক্ষিত রয়েছে, যখন ঘৃণ্য ‘অ্যাম হা·’আ’রেটস, বিচ্ছিন্ন হয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট অবস্থায় রয়েছে। তিনি কি জিজ্ঞাসা করেন শুনুন:

“তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি—যাহার একশত মেষ আছে, ও সেই সকলের মধ্যে একটি হারাইয়া যায়—নিরানব্বইটি প্রান্তরে ছাড়িয়া যায় না, আর যে পর্যন্ত সেই হারাণটি না পায়, সে পর্যন্ত তাহার অন্বেষণ করিতে যায় না? আর তাহা পাইলে সে আনন্দ পূর্বক কাঁধে তুলিয়া লয়। পরে ঘরে আসিয়া বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসীদিগকে ডাকিয়া বলে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটি হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি।’”

যীশু এরপর এই গল্পটির প্রয়োগ সম্বন্ধে বললেন, তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তদ্রূপ একজন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে; যাহাদের মন ফিরান অনাবশ্যক, এমন নিরানব্বইজন ধার্ম্মিকের বিষয়ে তত আনন্দ হইবে না।”

ফরীশীরা নিজেদের ধার্মিক মনে করে, এবং তাদের কোনও অনুতাপের প্রয়োজন নেই। যখন তাদের মধ্যে কয়েকজন কয়েক বছর আগে যীশুর সমালোচনা করেছিল তিনি করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে আহার করেন বলে, তখন তিনি তাদের বলেন: “কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি।” এই আত্ম-ধার্মিক ফরীশীরা, যারা তাদের অনুতাপের প্রয়োজনীয়তা মনে করে না, স্বর্গে আনন্দ আনে না। কিন্তু প্রকৃত অনুতপ্ত পাপীরা আনে।

এই হারান পাপীদের পুনঃস্থাপন মহা আনন্দের কারণ এই বিষয়টি দ্বিগুণ শক্তিশালী করে তুলতে, যীশু আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন। তিনি বললেন: “অথবা কোন স্ত্রীলোক, যাহার দশটি সিকি আছে, সে যদি একটি হারাইয়া ফেলে, তবে প্রদীপ প্তালিয়া ঘর ঝাঁটি দিয়া যে পর্যন্ত তাহা না পায়, ভাল করিয়া খুঁজিয়া দেখে না? আর পাইলে সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসিনীদিগকে ডাকিয়া বলে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটি হারাইয়া ফেলিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি।’”

যীশু তখন একই ভাবে প্রয়োগ করলেন। তিনি বলে চললেন: “তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, একজন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”

তাহলে ঈশ্বরের দূতেদের এই হারান পাপীদের পুনঃস্থাপনের প্রতি প্রেমময় চিন্তা কতই না লক্ষণীয়! বিশেষ করে ইহা এই জন্য যে এই ধরনের অবনত, অবজ্ঞাত ‘অ্যাম হা·’আ’রেটস-রা অবশেষে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের সদস্যদের সারিভূক্ত হবে। যার ফলে, তারা দূতেদের চাইতেও উচ্চতর স্থান স্বর্গে পাবে! ঈর্ষা ও অবজ্ঞাত বোধ না করে, এই দূতেরা বরং নম্রভাবে উপলব্ধি করে যে এই সমস্ত পাপী মানুষেরা জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন ও জয় করেছেন যা তাদের সুসজ্জিত করবে দরদী ও ক্ষমাশীল স্বর্গীয় রাজগণ ও যাজকবর্গ হয়ে সেবা করতে। লূক ১৫:১-১০; মথি ৯:১৩; ১ করিন্থীয় ৬:২, ৩; প্রকাশিত বাক্য ২০:৬.

▪ কেন যীশু পরিচিত পাপীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, এবং ফরীশীদের কাছ থেকে তিনি কি ধরনের সমালোচনা পেলেন?

▪ ফরীশীরা সাধারণ মানুষদের কিভাবে দেখত?

▪ কোন দৃষ্টান্তগুলি যীশু ব্যবহার করলেন, এবং এইগুলির দ্বারা আমরা কি শিখতে পারি?

▪ দূতেদের আনন্দিত হওয়া কেন লক্ষণীয়?