মথি অধ্যায় ৫-৭
৫ তিনি যখন লোকদের ভিড় দেখতে পেলেন, তখন তিনি পর্বতে উঠলেন; সেখানে বসার পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে এলেন। ২ তিনি এই বলে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন:
৩ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
৪ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা শোক করে, কারণ তারা সান্ত্বনা লাভ করবে।
৫ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা মৃদুশীল, কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে। a
৬ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা ন্যায়বিচারের b জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত, কারণ তারা পরিতৃপ্ত হবে।
৭ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা করুণাময়, কারণ তাদের প্রতি করুণা দেখানো হবে।
৮ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যাদের হৃদয় বিশুদ্ধ, কারণ তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাবে।
৯ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা শান্তি স্থাপন করে, c কারণ তাদের ঈশ্বরের সন্তান d বলা হবে।
১০ “সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা সঠিক কাজ করার জন্য তাড়িত হয়, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
১১ “সুখী তোমরা, যখন লোকেরা আমার জন্য তোমাদের অপমান করে, তাড়না করে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে সমস্ত ধরনের মন্দ কথা বলে। ১২ আনন্দ কোরো এবং উল্লসিত হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর। তোমাদের আগে যে-ভাববাদীরা ছিলেন, তাদেরও তারা একইভাবে তাড়না করেছিল।
১৩ “তোমরা পৃথিবীর লবণ, কিন্তু লবণ যদি এর স্বাদ হারিয়ে ফেলে, তা হলে কীভাবেই-বা লবণের স্বাদ ফিরিয়ে আনা যাবে? সেই লবণ আর কোনো কাজেই লাগে না। তা কেবল বাইরে ফেলে দেওয়া হয় এবং লোকেরা তা পা দিয়ে মাড়ায়।
১৪ “তোমরা জগতের আলো। পর্বতের উপরে অবস্থিত নগর গুপ্ত থাকতে পারে না। ১৫ লোকেরা প্রদীপ জ্বেলে পাত্র e দিয়ে ঢেকে রাখে না, বরং প্রদীপদানির উপরেই রাখে আর তা ঘরের সকলকে আলো দেয়। ১৬ একইভাবে, তোমাদের আলো লোকদের সামনে উজ্জ্বল হোক, যাতে তারা তোমাদের উত্তম কাজ দেখতে পায় এবং তোমাদের পিতার গৌরব করে, যিনি স্বর্গে থাকেন।
১৭ “তোমরা মনে কোরো না, আমি ব্যবস্থা f কিংবা ভাববাদীদের গ্রন্থ বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে নয়, বরং পরিপূর্ণ করতে এসেছি। ১৮ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এমনকী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী যদি লুপ্ত হয়েও যায়, তবুও ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম অক্ষর কিংবা একটা বিন্দুও কোনোভাবে লুপ্ত হবে না, সমস্তই পরিপূর্ণ হবে। ১৯ তাই, যে-কেউ এই ক্ষুদ্রতম আজ্ঞাগুলোর মধ্যে একটা আজ্ঞা লঙ্ঘন করে এবং অন্যদেরও তা করতে শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যের ব্যাপারে ক্ষুদ্রতম বলে বিবেচিত হবে। g কিন্তু, যে-কেউ সেগুলো পালন করে এবং অন্যদেরও তা করতে শিক্ষা দেয়, সে স্বর্গরাজ্যের ব্যাপারে মহান বলে বিবেচিত হবে। h ২০ কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের ধার্মিকতা i যদি অধ্যাপকদের ও ফরীশীদের চেয়ে বেশি না হয়, তা হলে তোমরা কোনোমতেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
২১ “তোমরা শুনেছ, প্রাচীন কালের লোকদের এই কথা বলা হয়েছিল: ‘খুন করবে না। কেউ যদি খুন করে, তা হলে আদালতে তার বিচার করা হবে।’ ২২ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রতি রাগ পুষে রাখে, তা হলে আদালতে তার বিচার করা হবে; আর যে-কেউ তার ভাইকে অবজ্ঞা করে অপমানজনক কথা বলে, সর্বোচ্চ আদালতে তার বিচার করা হবে; আর কেউ যদি তার ভাইকে বলে, ‘ওরে চরিত্রহীন মূর্খ!’ তা হলে সে গিহেন্নায় j যাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
২৩ “তাই, বেদির সামনে উপহার নিয়ে আসার পর, তোমার যদি মনে পড়ে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোনো কথা আছে, ২৪ তা হলে বেদির সামনে তোমার উপহার রেখে চলে যাও। প্রথমে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করো আর তারপর ফিরে এসে তোমার উপহার উৎসর্গ করো।
২৫ “কেউ যখন তোমার বিরুদ্ধে মামলা করতে যায়, তখন আদালতে যাওয়ার পথেই তার সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিটমাট করে ফেলো। তা না হলে সে তোমাকে বিচারকের হাতে তুলে দেবে আর বিচারক তোমাকে আদালতের রক্ষীর হাতে তুলে দেবে এবং তোমাকে কারাগারে বন্দি করা হবে। ২৬ আমি তোমাকে সত্য বলছি, যতক্ষণ না তুমি তোমার সমস্ত টাকা k পরিশোধ কর, ততক্ষণ তুমি কোনোমতে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।
২৭ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল, ‘ব্যভিচার l করবে না।’ ২৮ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি কোনো নারীকে এমনভাবে দেখতে থাকে, যার ফলে তার মধ্যে সেই নারীর প্রতি কামনা জেগে ওঠে, তা হলে সে ইতিমধ্যেই মনে মনে সেই নারীর সঙ্গে ব্যভিচার a করেছে। ২৯ আর তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপ করতে পরিচালিত করে, b তা হলে সেটা উপড়ে দূরে ফেলে দাও। কারণ তোমার সমস্ত শরীর নিয়ে গিহেন্নায় c নিক্ষিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, এক অঙ্গ হারানো তোমার পক্ষে আরও উত্তম। ৩০ আর তোমার ডান হাত যদি তোমাকে পাপ করতে পরিচালিত করে, d তা হলে সেটা কেটে দূরে ফেলে দাও। কারণ তোমার সমস্ত শরীর নিয়ে গিহেন্নায় e যাওয়ার পরিবর্তে, এক অঙ্গ হারানো তোমার পক্ষে আরও উত্তম।
৩১ “আর এই কথাও বলা হয়েছিল: ‘যে-কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে, সে স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদপত্র দিক।’ ৩২ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, কেউ যদি যৌন অনৈতিকতা f ছাড়া অন্য কোনো কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে, তা হলে সে তার স্ত্রীকে ব্যভিচার g করার ঝুঁকির মুখে ফেলে আর যে-কেউ বিবাহবিচ্ছেদপ্রাপ্ত সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে, সে ব্যভিচার h করে।
৩৩ “আর তোমরা এই কথাও শুনেছ, প্রাচীন কালের লোকদের বলা হয়েছিল: ‘তোমরা শপথ করে তা ভঙ্গ করবে না, বরং যিহোবার i কাছে করা অঙ্গীকার রক্ষা করবে।’ ৩৪ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: তোমরা কোনো দিব্যই কোরো না। স্বর্গের দিব্য কোরো না, কারণ তা ঈশ্বরের সিংহাসন; ৩৫ পৃথিবীর দিব্য কোরো না, কারণ তা ঈশ্বরের পাদপীঠ; j জেরুসালেমের দিব্য কোরো না, কারণ তা মহান রাজার নগর। ৩৬ তোমার মাথার দিব্য কোরো না, কারণ একটা চুলও সাদা কিংবা কালো করার ক্ষমতা তোমার নেই। ৩৭ কেবল তোমার ‘হ্যাঁ’ যেন হ্যাঁ হয় এবং ‘না’ যেন না হয়, কারণ এর অতিরিক্ত যা-কিছু বলা হয়, তা শয়তানের k কাছ থেকে আসে।
৩৮ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল: ‘চোখের পরিবর্তে চোখ এবং দাঁতের পরিবর্তে দাঁত।’ ৩৯ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: তোমরা দুষ্ট লোককে পালটা আক্রমণ কোরো না, কিন্তু যে তোমার ডান গালে চড় মারে, তার দিকে অন্য গাল ফিরিয়ে দিয়ো। ৪০ আর কোনো ব্যক্তি যদি তোমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তোমার পোশাক নিতে চায়, তা হলে তাকে তোমার চাদরও দিয়ে দিয়ো; ৪১ আর কর্তৃত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি যদি তোমাকে বোঝা নিয়ে এক মাইল l যেতে বাধ্য করে, তা হলে সেই বোঝা নিয়ে দুই মাইল যেয়ো। ৪২ কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চায়, তা হলে তাকে সেটা দিয়ো এবং কেউ যদি তোমার কাছে ধার a চায়, তা হলে তাকে তা দিতে অস্বীকার কোরো না।
৪৩ “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল: ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসবে এবং তোমার শত্রুকে ঘৃণা করবে।’ ৪৪ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: সবসময় তোমার শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের তাড়না করে, তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো, ৪৫ যাতে তোমরা দেখাতে পার, তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান, b কারণ তিনি মন্দ ও ভালো উভয়ের উপর সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক ও অধার্মিক উভয়ের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ৪৬ কারণ তুমি যদি শুধু সেই ব্যক্তিদের ভালোবাস, যারা তোমাকে ভালোবাসে, তা হলে তুমি কী পুরস্কারই-বা লাভ করবে? কর আদায়কারীরাও কি একই কাজ করে না? ৪৭ আর তুমি যদি কেবল তোমার ভাইদের সম্ভাষণ জানাও, তা হলে তুমি বিশেষ কীই-বা করছ? ন-যিহুদি ব্যক্তিরাও কি একই কাজ করে না? ৪৮ অতএব, তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তেমনই তোমরাও সিদ্ধ হও। c
৬ “সাবধান, তোমরা লোকদের দেখানোর জন্য তাদের সামনে যা সঠিক, তা কোরো না; যদি কর, তা হলে তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাবে না। ২ তাই, তুমি যখন দান কর, তখন তোমার সামনে তূরী বাজিয়ো না, যেমনটা ভণ্ডেরা সমাজগৃহে ও রাস্তায় করে থাকে, যাতে তারা লোকদের কাছ থেকে গৌরব পেতে পারে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে গিয়েছে। ৩ কিন্তু, তুমি যখন দান কর, তখন তোমার ডান হাত কী করছে, তা তোমার বাম হাতকে জানতে দিয়ো না, ৪ যেন তোমার দান গোপনে হয়। তা হলে তোমার পিতা, যিনি সমস্ত কিছু দেখতে পান, d তিনি তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
৫ “আর তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন ভণ্ডদের মতো কোরো না, কারণ তারা লোকদের দেখানোর জন্য সমাজগৃহে এবং চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে পছন্দ করে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে গিয়েছে। ৬ কিন্তু, তুমি যখন প্রার্থনা কর, তখন তুমি তোমার নিজের ঘরে যেয়ো এবং দরজা বন্ধ করে তোমার পিতার কাছে প্রার্থনা কোরো, যাঁকে কেউ দেখতে পায় না। e তা হলে তোমার পিতা, যিনি সমস্ত কিছু দেখতে পান, f তিনি তোমাকে প্রতিদান দেবেন। ৭ প্রার্থনা করার সময় ন-যিহুদি লোকদের মতো একই কথা বার বার বোলো না, কারণ তারা মনে করে, অনেক কথা ব্যবহার করলে ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা শুনবেন। ৮ তাই, তোমরা তাদের মতো হোয়ো না, কারণ এমনকী চাওয়ার আগেই তোমাদের পিতা জানেন, তোমাদের কী কী প্রয়োজন।
৯ “অতএব, তোমরা এভাবে প্রার্থনা কোরো:
“‘হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র হোক। g ১০ তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমনই পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক। ১১ আমাদের আজকের খাবার আজ আমাদের দাও; ১২ আমাদের পাপ h ক্ষমা করো, যেমন আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি, যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেছে। i ১৩ আর আমাদের প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করতে দিয়ো j না কিন্তু শয়তানের k হাত থেকে উদ্ধার l করো।’
১৪ “কারণ তোমরা যদি লোকদের অপরাধ ক্ষমা কর, তা হলে তোমাদের স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন; ১৫ কিন্তু, তোমরা যদি লোকদের অপরাধ ক্ষমা না কর, তা হলে তোমাদের পিতাও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
১৬ “তোমরা যখন উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না, a কারণ তারা যে উপবাস করছে, তা লোকদের দেখানোর জন্য মুখ মলিন করে রাখে। b আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে গিয়েছে। ১৭ কিন্তু, তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তেল দিয়ো এবং তোমার মুখ ধুয়ো, ১৮ যেন তুমি যে উপবাস করছ, তা লোকেরা বুঝতে না পারে, কিন্তু কেবল তোমার পিতা বুঝতে পারেন, যাঁকে কেউ দেখতে পায় না। c তা হলে তোমার পিতা, যিনি সমস্ত কিছু দেখতে পান, d তিনি তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
১৯ “তোমরা পৃথিবীতে ধনসম্পদ সঞ্চয় কোরো না, e এখানে পোকায় কাটে এবং মরচে ধরে আর চোর চুরি করে। ২০ বরং তোমরা স্বর্গে ধনসম্পদ সঞ্চয় করো, সেখানে পোকায় কাটে না এবং মরচে ধরে না আর চোর চুরি করে না। ২১ কারণ যেখানে তোমার ধনসম্পদ থাকবে, সেখানে তোমার মনও থাকবে।
২২ “চোখই শরীরের প্রদীপ। তাই, তোমার চোখ যদি একটা বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত f থাকে, তা হলে তোমার সমস্ত শরীর দীপ্তিময় g হবে। ২৩ কিন্তু, তোমার চোখ যদি ঈর্ষাপরায়ণ h হয়, তা হলে তোমার সমস্ত শরীর অন্ধকারময় হবে। আর তোমার মধ্যে যে-আলো রয়েছে, তা যদি প্রকৃতপক্ষে অন্ধকার হয়, তা হলে সেই অন্ধকার কতই-না ভয়ানক!
২৪ “কেউই দুই প্রভুর দাসত্ব করতে পারে না; কারণ সে হয় একজনকে ঘৃণা করবে আর অন্যজনকে ভালোবাসবে, নতুবা একজনের প্রতি অনুগত থাকবে আর অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। তোমরা ঈশ্বর ও ধনসম্পদ, উভয়ের দাসত্ব করতে পার না।
২৫ “এইজন্য আমি তোমাদের বলছি: তোমরা কী খাবে অথবা কী পান করবে বলে জীবনের বিষয়ে কিংবা কী পরবে বলে শরীরের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হোয়ো না। i খাবারের চেয়ে জীবন আর পোশাকের চেয়ে শরীর কি আরও গুরুত্বপূর্ণ নয়? ২৬ আকাশের পাখিদের ভালো করে লক্ষ করো; এরা বোনেও না, কাটেও না কিংবা গোলা ঘরে সঞ্চয়ও করে না, তবুও তোমাদের স্বর্গীয় পিতা এদের খাবার জুগিয়ে দেন। তোমরা কি তাদের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান নও? ২৭ তোমাদের মধ্যে কেউ কি উদ্বিগ্ন হয়ে তার নিজের আয়ু এক মুহূর্তের জন্যও j বৃদ্ধি করতে পারে? ২৮ আর তোমরা পোশাকের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছ কেন? মাঠে বেড়ে ওঠা ফুলের k কাছ থেকে শেখো; সেগুলো পরিশ্রমও করে না কিংবা সুতোও কাটে না; ২৯ কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, শলোমনের যদিও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস ছিল, তবুও তিনি এই ফুলগুলোর একটার মতোও সুসজ্জিত ছিলেন না। ৩০ মাঠে যে-ঘাস আজ আছে এবং আগামীকাল চুলোয় ফেলে দেওয়া হবে, সেগুলোকে যদি ঈশ্বর এভাবে সজ্জিত করে থাকেন, তা হলে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তিনি কি তোমাদের আরও সজ্জিত করবেন না? ৩১ তাই, কখনো উদ্বিগ্ন হয়ে এমনটা বোলো না, ‘আমরা কী খাব?’ অথবা ‘আমরা কী পান করব?’ কিংবা ‘আমরা কী পরব?’ ৩২ কারণ ন-যিহুদি লোকেরাই দিনরাত এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তো জানেন, এগুলো তোমাদের প্রয়োজন রয়েছে।
৩৩ “অতএব, তোমরা ঈশ্বরের রাজ্যকে এবং তাঁর দৃষ্টিতে যে-বিষয়গুলো সঠিক, সেগুলো করাকে l সবসময় জীবনে প্রথম স্থান দাও, তা হলে এইসমস্ত বিষয়ও তোমাদের দেওয়া হবে। ৩৪ তাই, কখনো আগামীকালের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হোয়ো না, কারণ আগামীকালের জন্য আগামীকালের উদ্বিগ্নতা রয়েছে। দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।
৭ “তোমরা অন্যদের বিচার কোরো না, a যাতে তোমরা বিচারিত না হও; ২ কারণ তোমরা যে-বিচারে বিচার করছ, তোমাদেরও সেভাবে বিচার করা হবে আর তোমরা যে-দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করছ, সেই দাঁড়িপাল্লায় তারা তোমাদের জন্য পরিমাপ করবে। ৩ আর তোমার ভাইয়ের চোখে যে-কুটা আছে, সেটা দেখছ ঠিকই, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে-কড়িকাঠ আছে, সেটা লক্ষ করছ না কেন? ৪ কিংবা তোমার ভাইকে তুমি কীভাবে বলতে পার, ‘এসো, তোমার চোখে যে-কুটা আছে, সেটা বের করে দিই,’ অথচ দেখো! তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে? ৫ ওহে ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠ বের করো, তা হলে তুমি স্পষ্ট দেখতে পাবে, তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কীভাবে কুটা বের করতে হবে।
৬ “কুকুরের সামনে পবিত্র বস্তু দিয়ো না। কিংবা শূকরের সামনে তোমাদের মুক্তো ফেলো না। যদি ফেল, তা হলে এরা হয়তো সেগুলো পা দিয়ে মাড়াবে এবং ফিরে এসে তোমাদের আক্রমণ করবে।
৭ “চাইতে থাকো, তা হলে তোমাদের দেওয়া হবে; অন্বেষণ করতে থাকো, তা হলে তোমরা খুঁজে পাবে; দরজায় আঘাত করতে থাকো, তা হলে তোমাদের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে; ৮ কারণ যারা চায়, তারা সবাই লাভ করবে, যারা অন্বেষণ করে, তারা সবাই খুঁজে পাবে আর যারা দরজায় আঘাত করে, তাদের সবার জন্য তা খুলে দেওয়া হবে। ৯ তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার ছেলে তার কাছে রুটি চাইলে সে তাকে পাথর দেবে? ১০ কিংবা মাছ চাইলে তাকে সাপ দেবে? ১১ তাই, তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের সন্তানদের ভালো ভালো উপহার দিতে জান, তা হলে তোমাদের পিতা, যিনি স্বর্গে আছেন, তাঁর কাছে যারা চায়, তাদের ভালো ভালো উপহার দিতে তিনি আরও কতই-না ইচ্ছুক হবেন!
১২ “অতএব, সমস্ত ক্ষেত্রে লোকেরা তোমাদের প্রতি যা করুক বলে তোমরা চাও, তোমরাও তাদের প্রতি তা-ই কোরো। আসলে, এটাই ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থের b সারমর্ম।
১৩ “সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করো, কারণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এমন দরজা চওড়া এবং রাস্তা সহজ আর অনেক লোকই সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে; ১৪ কিন্তু, জীবনের দিকে নিয়ে যায় এমন দরজা সরু এবং রাস্তা কঠিন আর অল্প লোকই সেই রাস্তা খুঁজে পায়।
১৫ “মিথ্যা ভাববাদীদের কাছ থেকে সাবধান, যারা তোমাদের কাছে মেষের ছদ্মবেশে আসে, কিন্তু আসলে তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ে। ১৬ তোমরা তাদের ফল দ্বারাই তাদের চিনতে পারবে। কাঁটাগাছ থেকে আঙুর ফল কিংবা শিয়ালকাঁটা থেকে ডুমুর ফল সংগ্রহ করা যায় না। ১৭ একইভাবে, প্রত্যেক ভালো গাছে উত্তম ফল ধরে কিন্তু প্রত্যেক মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে। ১৮ ভালো গাছে মন্দ ফল ধরতে পারে না কিংবা মন্দ গাছে উত্তম ফল ধরতে পারে না। ১৯ যে-গাছে উত্তম ফল ধরে না, সেই গাছ কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হয়। ২০ তাই, তোমরা সেই লোকদের ফল দ্বারাই তাদের চিনতে পারবে।
২১ “যারা আমাকে ‘হে প্রভু, হে প্রভু’ বলে, তারা প্রত্যেকেই যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করবে, এমন নয়, বরং যে আমার স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করে, সে-ই প্রবেশ করবে। ২২ সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে: ‘হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই কি আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করিনি, আপনার নামেই কি আমরা মন্দ স্বর্গদূত ছাড়াইনি, আপনার নামেই কি আমরা অনেক অলৌকিক কাজ করিনি?’ ২৩ তখন আমি তাদের বলব: ‘আমি তোমাদের চিনি না! দুষ্টের দল, আমার কাছ থেকে দূর হও!’
২৪ “অতএব, যারা আমার এইসমস্ত কথা শোনে এবং পালন করে, তারা এমন একজন বুদ্ধিমান c ব্যক্তির মতো, যে শিলার উপর তার বাড়ি নির্মাণ করল। ২৫ পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল এবং ঝোড়ো বাতাস এসে সেই বাড়িতে আঘাত করল, কিন্তু তা ভেঙে পড়ল না, কারণ সেটার ভিত্তি শিলার উপরে ছিল। ২৬ আর যারা আমার এইসমস্ত কথা শোনে অথচ পালন করে না, তারা এমন একজন মূর্খ ব্যক্তির মতো, যে বালির উপর তার বাড়ি নির্মাণ করল। ২৭ পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল এবং ঝোড়ো বাতাস এসে সেই বাড়িতে আঘাত করল। এতে সেই বাড়ি ভেঙে পড়ল এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল।”
২৮ যিশু যখন এইসমস্ত কথা শেষ করলেন, তখন লোকেরা তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল, ২৯ কারণ তিনি তাদের অধ্যাপকদের মতো নয়, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে যেভাবে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
a আক্ষ., “কারণ তারাই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে।”
b বা “যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো মেনে চলার।”
c “যারা শান্তিপ্রবণ।”
d আক্ষ., “পুত্র।”
e বড়ো ধরনের এক পাত্র, যা শস্য মাপার জন্য ব্যবহার করা হতো।
f সীনয় প্রান্তরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মোশির মাধ্যমে ঈশ্বর ইজরায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন।
g স্পষ্টতই বোঝায়, “সে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।”
h স্পষ্টতই বোঝায়, “সে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।”
i বা “বাধ্যতা।”
j জেরুসালেমের বাইরে আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলার স্থান। প্রাচীন জেরুসালেমের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত হিন্নোম উপত্যকার গ্রিক নাম। ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে এটাকে এমন এক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, জীবন্ত অবস্থায় পোড়ানোর জন্য অথবা যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য পশুপাখি অথবা মানুষকে গিহেন্নায় নিক্ষেপ করা হতো। তাই, এই স্থান এমন কোনো অদৃশ্য জায়গাকে চিত্রিত করতে পারে না, যেখানে মানুষকে মৃত্যুর পর চিরকাল আগুনে যন্ত্রণা দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে, যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরা যখন গিহেন্না শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, তখন তারা ‘দ্বিতীয় মৃত্যু’ অর্থাৎ অনন্তধ্বংসকে বুঝিয়েছিলেন।
k বা “তোমার শেষ ক্ষুদ্র মুদ্রা।”
l নিজের বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে একজন বিবাহিত পুরুষ অথবা নারীর স্বেচ্ছায় যৌনসম্পর্ক করাকে বোঝায়।
a ৫:২৭ পদের ফুটনোট দেখুন।
b বা “যদি তোমার বিশ্বাসের পক্ষে বাধা হয়ে ওঠে।”
d ৫:২৯ পদের প্রথম ফুটনোট দেখুন।
f গ্রিক পরনিয়া থেকে এসেছে, যে-শব্দ সমস্ত ধরনের অবৈধ যৌনসম্পর্ককে বোঝায়। এর অন্তর্ভুক্ত ব্যভিচার, বেশ্যাবৃত্তি, অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক, সমকামিতা ও পশুগমন। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে “মহতী বাবিল” হিসেবে অভিহিত ধর্মীয় বেশ্যার জন্য এই শব্দ রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ ক্ষমতা ও বস্তুগত লাভের জন্য সে এই জগতের শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে।
g ৫:২৭ পদের ফুটনোট দেখুন।
h ৫:২৭ পদের ফুটনোট দেখুন।
i পবিত্র শাস্ত্র অনুযায়ী “যিহোবা” হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম।
j অর্থাৎ পা রাখার টুল।
k আক্ষ., “সেই দুষ্ট ব্যক্তির।”
l দূরত্বের এই পরিমাপ, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এর মূল পাঠ্যাংশে কেবল এক বার মথি ৫:৪১ পদে এসেছে। এটা সম্ভবত রোমীয় মাইলকে নির্দেশ করে, যা ১,৪৭৯.৫ মিটারের (৪,৮৫৪ ফুট) সমান ছিল।
a অর্থাৎ সুদ ছাড়া ধার।
b আক্ষ., “পুত্র।”
c বা “অতএব, তোমরা তোমাদের স্বর্গীয় পিতার নিখুঁত উদাহরণ অনুসরণ করো।”
d বা “যিনি গোপনে দেখেন।”
e বা “যিনি গোপনে থাকেন।”
f বা “যিনি গোপনে দেখেন।”
g বা “পবিত্র বলে গণ্য হোক; পবিত্র বলে মান্য করা হোক।”
h আক্ষ., “ঋণ।”
i আক্ষ., “আমাদের কাছে ঋণী।”
j আক্ষ., “আমাদের প্রলোভনে ফেলো।”
k আক্ষ., “সেই দুষ্ট ব্যক্তির।”
l বা “মুক্ত।”
a বা “করে রাখা বন্ধ করো।”
b বা “জন্য চেহারার যত্ন নেয় না।”
c বা “যিনি গোপনে থাকেন।”
d বা “যিনি গোপনে দেখেন।”
e বা “সঞ্চয় করা বন্ধ করো।”
f বা “তোমার দৃষ্টি যদি স্পষ্ট।” আক্ষ., “তোমার চোখ যদি সরল।”
g বা “আলোতে পরিপূর্ণ।”
h আক্ষ., “মন্দ।”
i বা “উদ্বিগ্ন হওয়া বন্ধ করো।”
j বা “এক হাতও।”
k বা “লিলি ফুলের।”
l বা “তাঁর ধার্মিকতাকে।”
a বা “বিচার করা বন্ধ করো।”
b “ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থ” অভিব্যক্তিটা পুরো ইব্রীয় শাস্ত্রকে বোঝায়।
c বা “বিচক্ষণ।”