সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হাল ছেড়ে দেবেন না!

হাল ছেড়ে দেবেন না!

হাল ছেড়ে দেবেন না!

আপনি যখন কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন আপনি কী করেন? আপনি কি তখন খুব বেশি নিরাশ হয়ে পড়েন, না কি সাহসের সঙ্গে সেই সমস্যার মোকাবিলা করেন? এটা সত্যি যে, আমাদের সকলের জীবনেই সমস্যা আসে। তবে, কারো কারো জীবনে সমস্যার পাহাড় নেমে আসে। অনেক গবেষক বলেছেন, কঠিন সময়ে একজন ব্যক্তি যে-ধরনের মনোভাব রাখেন, সেটা থেকে বোঝা যায়, তিনি কীভাবে চিন্তা করেন। কেন কেউ কেউ বড়ো বড়ো সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে, আবার অন্যেরা সামান্য সমস্যার মধ্যেও সাহস হারিয়ে ফেলে?

কল্পনা করুন, আপনি একটা চাকরি খুঁজছেন। আপনি একটা ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিন্তু চাকরিটা আপনার হয়নি। আপনার কেমন লাগবে? আপনি কি এইরকম চিন্তা করবেন, ‘আমার মতো একজন লোককে কেউ চাকরিতে রাখবে না’? কিংবা আপনি কি এই একটা ঘটনার কারণে এইরকম মনে করবেন, ‘আমি কোনো কাজেরই নই। আমি জীবনে কিছুই করতে পারব না’? আপনি যদি এভাবে চিন্তা করেন, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আপনি নিরাশ হয়ে পড়বেন।

ভুল চিন্তাভাবনা যেন আপনার উপর প্রভাব না ফেলে!

আপনার মনে যদি খারাপ চিন্তা আসে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে, কোন ধরনের চিন্তাভাবনা আপনাকে নিরাশ করে দিতে পারে। এরপর এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে আপনার উপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না। আপনার প্রতি যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন চিন্তা করার চেষ্টা করুন যে, এর কারণ কী হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনাকে চাকরিতে না নেওয়ার কারণ কী এই যে, তারা আপনাকে পছন্দ করেনি, না কি আপনার যে-দক্ষতা রয়েছে, তা কোম্পানির চাহিদা থেকে আলাদা?

একটু থেমে চিন্তা করুন, পরিস্থিতি কি আসলেই অনেক খারাপ, না কি আপনি এভাবে চিন্তা করছেন? আপনার প্রতি যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন এইরকম চিন্তা করবেন না, আপনি কখনোই ভালো কিছু করতে পারবেন না। এর পরিবর্তে, ভালো বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন। যেমন, আপনি চিন্তা করতে পারেন, পরিবার হিসেবে আপনারা ভালো আছেন কিংবা আপনার ভালো বন্ধুবান্ধব রয়েছে। আপনি যদি চাকরি না পান, তা হলে এইরকম চিন্তা করবেন না, আপনি কখনো চাকরি পাবেন না। আপনি আর কী করতে পারেন, যাতে ভুল চিন্তাভাবনা আপনার উপর প্রভাব না ফেলে?

লক্ষ্য স্থাপন করুন

সম্প্রতি গবেষকেরা জানান যে, প্রত্যাশা রাখার অর্থ কী। তারা বলেন, প্রত্যাশা রাখার অর্থ হল, নিজের ওপর এই আস্থা রাখা যে, আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। এভাবে আপনি আপনার চিন্তাভাবনা ঠিক করতে পারবেন আর আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। পরবর্তী প্রবন্ধে প্রত্যাশা সম্বন্ধে আমরা আরও জানতে পারব।

আপনি কি মনে করেন, আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন? আপনি যদি ছোটো ছোটো লক্ষ্য স্থাপন করেন এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছান, তা হলে নিজের উপর আপনার আস্থা বাড়বে। আপনি যদি এখনও পর্যন্ত কোনো লক্ষ্য স্থাপন করে না থাকেন, তা হলে একটা লক্ষ্য স্থাপন করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। কখনো কখনো আমরা আমাদের জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, আমরা ভুলে যাই, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী এবং আমাদের লক্ষ্য কী। বাইবেলে এই বিষয়ে অনেক আগেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাইবেল বলে, ‘তোমরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ণয় করো।’—ফিলিপীয় ১:১০.

আমরা যদি বুঝতে পারি, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, তা হলে আমরা সেই অনুযায়ী লক্ষ্য স্থাপন করতে পারব। তবে, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন আমরা শুরুতেই খুব বেশি লক্ষ্য স্থাপন না করি। এ ছাড়া, আমাদের এমন লক্ষ্য স্থাপন করতে হবে, যে-লক্ষ্যে আমরা সহজেই পৌঁছাতে পারব। আমরা যদি এমন লক্ষ্য রাখি, যা খুবই কঠিন, তা হলে আমরা নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেব। এইজন্য আমাদের এমন ছোটো ছোটো লক্ষ্য স্থাপন করা উচিত, যেগুলোতে আমরা সহজেই পৌঁছাতে পারি।

একটা পুরোনো প্রবাদ রয়েছে, “ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।” একবার লক্ষ্য স্থাপন করার পর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে আমাদের কোন কোন উপকার হবে, তা নিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি, তা হলে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আরও প্রচেষ্টা করব। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা হয়তো বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি, কিন্তু এতে আমাদের নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা কী করব, সেটা নিয়ে আগে থেকেই চিন্তা করতে হবে। সি. আর. সিন্ডার নামে একজন লেখক পরামর্শ দিয়েছেন, যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ভিন্ন ভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। একটা উপায় যদি কাজ না করে, তা হলে দ্বিতীয় উপায় কাজে লাগাতে হবে আর সেটা কাজ না করলে তৃতীয় উপায় কাজে লাগাতে হবে।

লেখক সিন্ডার আরও বলেন, কখনো কখনো আমাদের কয়েক বার লক্ষ্য পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। আমরা যদি কোনো লক্ষ্যেই পৌঁছাতে না পারি আর সেটা নিয়ে চিন্তা করতেই থাকি, তা হলে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব। অন্যদিকে, আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করি এবং এমন লক্ষ্য স্থাপন করি, যেটাতে আমরা পৌঁছাতে পারব, তা হলে আমাদের মনে পুনরায় আশা জেগে উঠবে।

বাইবেলের সময়ে রাজা দায়ূদও এইরকম বিষয় বলেছেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, তিনি যিহোবা ঈশ্বরের জন্য একটা মন্দির নির্মাণ করবেন। কিন্তু, ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন, তিনি নন বরং তার ছেলে শলোমন মন্দির নির্মাণ করবেন। এতে নিরাশ না হয়ে দায়ূদ তার লক্ষ্য পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি ঠিক করেছিলেন, মন্দির নির্মাণ করার জন্য তিনি তার ছেলেকে সাহায্য করবেন। আর তিনি সোনা, রুপো এবং অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করার জন্য যথাসাধ্য করেন, যাতে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়।—১ রাজাবলি ৮:১৭-১৯; ১ বংশাবলি ২৯:৩-৭.

আমরা হয়তো আমাদের জীবনে আনন্দিত হতে এবং প্রত্যাশা রাখা শিখতে পারি, তবে কখনো কখনো আমরা আবার নিরাশ হয়ে পড়তে পারি। এর কারণ হল, কোনো কোনো বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমানে লোকেরা দারিদ্র্য, যুদ্ধ, অবিচার, রোগ ও মৃত্যুর কারণে হতাশাগ্রস্ত। এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে আমরা হয়তো প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলি। কে আমাদের প্রত্যাশা দিতে পারে?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি যদি কোনো চাকরি না পান, তা হলে আপনি কি এইরকম মনে করেন যে, আপনি কখনো চাকরি পাবেন না?

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজা দায়ূদ তার লক্ষ্য পরিবর্তন করেছিলেন