সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

পারিবারিক জীবন উপভোগ করুন

পারিবারিক জীবন উপভোগ করুন

পারিবারিক জীবন উপভোগ করুন

পরিবারগুলি কি প্রকৃতই সুখী হতে পারে?

কিভাবে এটি সম্ভব?

এই ট্র্যাক্টের মধ্যে এদের যেমন দেখছেন এইরকম একতাবদ্ধ ও সুখী কোন পরিবারকে কি আপনি জানেন? সর্বত্র পরিবারগুলি ভেঙে পড়ছে। বিবাহবিচ্ছেদ, চাকরির নিরাপত্তার অভাব, একক-অভিভাবকের সমস্যা, নৈরাব্য—এগুলির সমস্তই পারিবারিক সমস্যার কারণ। একজন পারিবারিক-জীবন বিশেষজ্ঞ দুঃখ করেন: “এত দিনে পরিবারগুলির ভাঙন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে প্রত্যেকেই অবগত হয়েছে।”

এই ধরনের সাংঘাতিক সমস্যার দ্বারা কেন আজ পরিবারগুলি বিধ্বস্ত? কিভাবে আমরা পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে পারি?

কিভাবে পরিবারের সূত্রপাত হয়েছিল

এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে, আমাদের বিবাহ ও পরিবারের উৎস সম্বন্ধে জানা প্রয়োজন। এর যদি একজন উদ্ভাবক—একজন সৃষ্টিকর্তা—থাকেন তাহলে পরিবারের সকল সদস্যদের পরিচালনার জন্য তাঁর প্রতি তাকান উচিৎ, কারণ তিনি কিভাবে উত্তমরূপে পরিপূর্ণ পারিবারিক জীবন উপভোগ করা যায় তা নিশ্চয়ই জানেন।

আগ্রহজনকভাবে, অনেকে মনে করেন যে পারিবারিক ব্যবস্থার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। দ্যা এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে: “কিছু বিশেষজ্ঞ বিবাহের উৎস খুঁজতে গিয়ে মানুষের চেয়ে নিম্নতর জীবজন্তুর যুগ্ম ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।” তথাপি, যীশু খ্রীষ্ট পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির বিষয়ে বলেন। তিনি কর্তৃত্বহিসাবে প্রাচীন বাইবেলের বিবরণকে উদ্ধৃত করেন এবং বলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”—মথি ১৯:৪-৬.

সুতরাং যীশু খ্রীষ্টের কথাই ঠিক। একজন প্রজ্ঞাবান ঈশ্বর প্রথম মানুষের সৃষ্টি এবং সুখী পারিবারিক জীবনের ব্যবস্থা করেন। ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতির বিবাহ দেন এবং বলেন যে মানুষ “তাহার স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২২-২৪) তাহলে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর বাক্য বাইবেলে যে মানগুলি দিয়েছেন সেগুলি অমান্য করে জীবনধারার অনুসরণই কি আজ পারিবারিক সমস্যার কারণ?

কোন পথে সফলতা আসবে?

আধুনিক জগৎ যে আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মতৃপ্তিকে তুলে ধরেছে, নিঃসন্দেহে আপনি সে বিষয়ে অবগত আছেন। “লোভ স্বাস্থ্যকর,” যুক্তরাষ্ট্রে একটি কলেজে স্নাতক-স্তরের ছাত্রদের একজন অর্থ-বিনিয়োগকারী বলেছিলেন। “আপনি লোভী হতে পারেন এবং তবুও নিজের সম্বন্ধে ভাল বোধ করতে পারেন।” কিন্তু বস্তু সম্পত্তি লাভের অনুসরণ দ্বারা সফলতা আসে না। প্রকৃতপক্ষে, বস্তুবাদ পারিবারিক জীবনে এক বিরাট অশুভের লক্ষণ কারণ এটি মানুষের সম্পর্কের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষের সময় ও অর্থকে নষ্ট করে। এর বিপরীতে, সুখী হওয়ার জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ তা দেখতে বাইবেলের মাত্র দুটি প্রবাদবাক্য কিভাবে আমাদের সাহায্য করে বিবেচনা করুন।

“যেখানে দ্বেষভাব আছে সেখানে উত্তম মাংস খাওয়া অপেক্ষা যাদের ভালবাসেন তাদের সাথে শাক ভক্ষণ ভাল।”

“বিবাদ পূর্ণ গৃহে ভোজন অপেক্ষা শান্তিপূর্ণ মনে শুকনো রুটি খাওয়া ভাল।”

হিতোপদেশ ১৫:১৭; ১৭:১, “টুডেজ্‌ ইংলিশ ভারশন্‌.”

কত কার্যকারী, তাই না? চিন্তা করুন জগৎ কতই না আলাদা হতো যদি প্রত্যেকটি পরিবার এইগুলিকে অগ্রাধিকার দিত! পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে কিভাবে ব্যবহার করবে সেই বিষয়েও বাইবেল মূল্যবান উপদেশ দেয়। যেগুলি দেয় তার মধ্যে অল্প কয়েকটি বিবেচনা করুন।

স্বামীরা: ‘আপনাদের স্ত্রীকে আপনাদের দেহ বলিয়া প্রেম কর।’—ইফিষীয় ৫:২৮-৩০.

সহজ, কিন্তু খুবই বাস্তব! বাইবেল একজন স্বামীকে আরও নির্দেশ দেয় ‘স্ত্রীকে সমাদর কর।’ (১ পিতর ৩:৭) তিনি তা করেন স্ত্রীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে যার অন্তর্ভুক্ত বিবেচনাপূর্বক ব্যবহার, পরস্পর বোঝাপড়া এবং দৃঢ় আশ্বাস প্রদান। তিনি তার মতামতকেও মূল্য দেবেন ও তার কথা শুনবেন। (তুলনা করুন আদিপুস্তক ২১:১২.) আপনি কি একমত নন যে কোন পরিবার এইভাবে উপকৃত হতে পারে যদি একজন স্বামী নিজে যেমন আশা করে, তেমনি তার স্ত্রীর সাথে সে বিবেচনাপূর্বক ব্যবহার করে?—মথি ৭:১২.

স্ত্রীরা: “[তোমাদের] স্বামীদের গভীর শ্রদ্ধা কর।”—ইফিষীয় ৫:৩৩, NW.

একজন স্ত্রী তার স্বামীকে গুরুদায়িত্বগুলি পালন করতে সহযোগিতা করে পরিবারে সুখ আনতে পারে। এটিই ছিল উদ্দেব্য, কারণ ঈশ্বর একটি স্ত্রী দিয়েছিলেন “তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী” হবে বলে। (আদিপুস্তক ২:১৮) আপনি কি পরিবারিক আশীর্বাদ উপলব্ধি করেন যখন একজন স্ত্রী তার স্বামীর পারিবারিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার সিদ্ধান্তগুলিকে সমর্থন ও সহযোগিতার দ্বারা সম্মান প্রদর্শন করে?

বিবাহিত সঙ্গীরা: “স্বামী এবং স্ত্রীরা অবব্যই পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে।”—ইব্রীয় ১৩:৪, TEV.

যখন তারা থাকে, পরিবার নিশ্চিত উপকৃত হয়। ব্যভিচার প্রায়ই একটি পরিবারকে বিধ্বস্ত করে দেয়। (হিতোপদেশ ৬:২৭-২৯, ৩২) তাই, বিজ্ঞতার সাথে বাইবেল উপদেশ দেয়: “তুমি তোমার ভার্য্যায় আমোদ কর এবং বিবাহিত স্ত্রীতে সতত মোহিত থাক . . . কেন তুমি তোমার প্রেম পরকীয়া স্ত্রীকে দিবে?”—হিতোপদেশ ৫:১৮-২০, TEV.

পিতামাতারা: “[তোমাদের সন্তানদের] গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও।”—হিতোপদেশ ২২:৬.

যখন পিতামাতারা সন্তানদের প্রতি সময় ও মনোযোগ দেন, তখন নিশ্চিতরূপে পারিবারিক জীবন উন্নত হয়। এইভাবে, বাইবেল পিতামাতাদের পরামর্শ দেয় ‘তাহাদের গৃহে উপবেশন ও পথে গমন কালে এবং শয়ন ও গাত্রোত্থান কালে’ সন্তানদের সঠিক নীতিগুলি শিক্ষা দিতে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৯) বাইবেল আরও বলে পিতামাতাদের সন্তানদের প্রতি প্রেম দেখান উচিৎ তাদের শাসন করার দ্বারা।—ইফিষীয় ৬:৪.

সন্তানেরা: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও।”—ইফিষীয় ৬:১.

সত্যই, এই অধর্মের জগতে পিতামাতার বাধ্য হওয়া সব সময় সহজ হয় না। তথাপি, তোমরা কি একমত নও যে পরিবারের উদ্যোক্তা আমাদের যা বলেন তা পালন করা বিজ্ঞতার কাজ? পরিবারকে অধিক সুখী করার জন্য সবচেয়ে ভাল উপায় কি তিনি জানেন। তাই তোমাদের পিতামাতার বাধ্য হতে কঠোর চেষ্টা কর। এই জগতের নানারকম প্রলোভন যা মন্দ তা এড়িয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ হও।—হিতোপদেশ ১:১০-১৯.

প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্য বাইবেলের উপদেশ যত প্রয়োগ করবে, পারিবারিক জীবন তত উপকৃত হবে। কেবলমাত্র এখনই নয় কিন্তু ভবিষ্যতেও ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে সুন্দর জীবন উপভোগ করার আশা পরিবারের থাকবে। (২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) সুতরাং একত্রে বাইবেল অধ্যয়নের পারিবারিক অভ্যাস গড়ে তুলুন! পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ পরিবার প্রকৃত উপকৃত হতে মনোরম উদাহরণ সম্পন্ন আপনি পরমদেশ পৃথিবীত অনন্তকাল বঁচে থাকতে পারন বইটি থেকে নির্দেশ খুঁজে পেয়েছে।

উল্লেখ না করা থাকলে ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত।

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

চিত্র সৌজন্য: Cubs: Courtesy Hartebeespoortdam Snake and Animal Park.