সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যিহোবা তিনি কে?

যিহোবা তিনি কে?

যিহোবা তিনি কে?

কম্বোডিয়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে উনবিংশ শতাব্দীর একজন ফরাসী তথ্য সংগ্রাহক হেনরি মাওহাট একটা চওড়া খাদের কাছে এসে পৌঁছান যা একটা মন্দিরকে ঘিরে ছিল। এটা ছিল অ্যাংকর ওয়াট, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় স্মৃতিসৌধ। এটাকে এক নজর দেখেই মাওহাট বলতে পেরেছিলেন যে শেওলা-ঢাকা এই মন্দিরটা মানুষের তৈরি কলা। তিনি লিখেছিলেন, ‘মাইকেলএঞ্জেলোর মতো দক্ষ কোন এক প্রাচীন কলাকার এটা তৈরি করেছিলেন আর গ্রিস বা রোম আমাদের জন্য যে সব স্থাপত্যকর্ম রেখে গিয়েছে সেগুলোর চেয়েও এটা অনেক বেশি বড় ও সুন্দর।’ শত শত বছর ধরে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও, মাওহাটের কোন সন্দেহই ছিল না যে এই বিস্ময়কর মন্দিরের একজন নকশাদার ছিলেন।

কিন্তু আগ্রহের বিষয় হল যে শত শত বছর আগে লেখা একটা বই যার মধ্যে জ্ঞানের কথা রয়েছে, এই একই যুক্তি দেখিয়েছিল এই বলে যে: “কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:⁠৪) তাহলে, যে ঈশ্বর “সকলই” সৃষ্টি করেছেন তিনি কে?

কে সেই রচয়িতা?

এর উত্তর সেই প্রাচীন বইয়ে পাওয়া যায় যেটার কথা আগে বলা হয়েছে​—⁠বাইবেল। বাইবেল শুরুতেই একেবারে সহজ ও স্পষ্ট করে এই প্রশ্নের উত্তর দেয় যে কে এই সমস্ত কিছু রচনা করেছেন: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।”​—⁠আদিপুস্তক ১:⁠১.

অন্য যাদের ঈশ্বর বলা হয় তাদের থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য সৃষ্টিকর্তা এক অদ্বিতীয় নাম নিয়ে নিজেকে পরিচিত করান: “সদাপ্রভু [যিহোবা] ঈশ্বর, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন . . . যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিঃশ্বাস দেন . . . তিনি এই কথা কহেন।” (যিশাইয় ৪২:​৫, ৮) যিহোবা হল সেই ঈশ্বরের নাম যিনি নিখিলবিশ্বকে রচনা করেছিলেন আর পৃথিবীতে পুরুষ ও স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু যিহোবা কে? তিনি কীরকম ঈশ্বর? আর কেনই বা আপনার তাঁর কথা শোনা উচিত?

তাঁর নামের অর্থ

সৃষ্টিকর্তার নাম যিহোবা, তার মানে কী? বাইবেলের ইব্রীয় অংশে ঈশ্বরের নাম চারটে ইব্রীয় অক্ষরে (יהוה) লেখা আছে আর সেখানে প্রায় ৭,০০০ বার তা পাওয়া যায়। এই নাম ইব্রীয় ক্রিয়াপদ হাওয়া-র (“অস্তিত্বে আসা”) নিমিত্তবাচক রূপ আর তাই এর মানে “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” অন্য কথায়, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ করার জন্য যা কিছু হওয়ারই দরকার হোক না কেন তিনি বিচক্ষণভাবে নিজেকে সেভাবে অস্তিত্বে আনেন। তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করার জন্য সৃষ্টিকর্তা, বিচারক, পরিত্রাতা, জীবনের সংরক্ষক ইত্যাদি হয়ে থাকেন। এছাড়াও, ইব্রীয় ক্রিয়াপদ ব্যাকরণগত যে রূপ নেয় তা বোঝায় যে কাজ পরিপূর্ণ হয়ে চলেছে। এটা দেখায় যে যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য এখনও নিজেকে বিভিন্ন অস্তিত্বে নিয়ে আসেন। হ্যাঁ, তিনি একজন জীবন্ত ঈশ্বর!

যিহোবার প্রধান গুণাবলি

বাইবেল দেখায় যে এই সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণকারী এই ব্যক্তি খুবই চমৎকার। যিহোবা তাঁর অসাধারণ গুণাবলি সম্বন্ধে নিজেই বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:​৬, ৭) এখানে যিহোবাকে সাক্ষাৎ দয়ার ঈশ্বর বলা হয়েছে। যে ইব্রীয় শব্দটা এখানে ব্যবহার করা হয়েছে সেটাকে “নিষ্ঠাপূর্ণ ভালবাসা” হিসেবেও অনুবাদ করা যায়। যিহোবা তাঁর অনন্তকালীন উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাঁর সৃষ্টির প্রতি নিষ্ঠার সঙ্গে ভালবাসা দেখিয়ে আসছেন। আপনি কি এইধরনের ভালবাসাকে কৃতজ্ঞতার চোখে দেখেন না?

এছাড়াও যিহোবা ক্রোধে ধীর আর আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করতে দেরি করেন না। এমন একজন ব্যক্তির কাছে আসতে পারা কতই না খুশির বিষয় যিনি ভুল খুঁজে বেড়ান না কিন্তু আমাদের ক্ষমা করতে চান। কিন্তু এর মানে নয় যে যিহোবা অন্যায় সহ্য করেন। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসি, অধর্ম্মযুক্ত অপহরণ ঘৃণা করি।” (যিশাইয় ৬১:⁠৮) একজন ন্যায়বিচারক হওয়ায় তিনি চিরকাল সেইসব উদ্ধত পাপীদের সহ্য করবেন না যারা অন্যায় করেই চলে। সুতরাং, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে এই পৃথিবীর সমস্ত অন্যায়কে দূর করবেন।

প্রেম ও ন্যায়বিচার এই দুটো গুণের মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রজ্ঞা দরকার। আর যিহোবা এই দুটো গুণের মধ্যে অদ্ভুতভাবে ভারসাম্য নিয়ে আসেন যখন তিনি মানুষদের সঙ্গে ব্যবহার করেন। (রোমীয় ১১:​৩৩-৩৬) সত্যিই তাঁর প্রজ্ঞা এই পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এই অদ্ভুত সৃষ্টি তার প্রমাণ দেয়।​—⁠গীতসংহিতা ১০৪:২৪; হিতোপদেশ ৩:⁠১৯.

কিন্তু শুধু প্রজ্ঞা থাকাই যথেষ্ট নয়। তাঁর মনের চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার অবশ্যই পূর্ণ শক্তি থাকতে হবে। বাইবেল তাঁকে এইরকম একজন ঈশ্বর হিসেবেই দেখায়: “ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, . . . তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য . . . প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।” (যিশাইয় ৪০:২৬) সত্যিই, তাঁর ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য যিহোবার “সামর্থ্যের আধিক্য” রয়েছে। এইরকম গুণাবলি কি আপনাকে যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করে না?

যিহোবাকে জানার উপকারগুলো

যিহোবা “[পৃথিবীকে] অনর্থক সৃষ্টি” করেননি বরং মানুষের “বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন” যাদের সঙ্গে তাঁর এক অর্থপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। (যিশাইয় ৪৫:১৮; আদিপুস্তক ১:২৮) তিনি তাঁর পার্থিব সৃষ্টির যত্ন নেন। তিনি একটা বাগানের মতো বাড়িতে, পরমদেশে মানবজাতির জীবন নিখুঁতভাবে শুরু করে দিয়েছিলেন। যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে মানুষেরা এটাকে ধ্বংস করছে। কিন্তু যিহোবা তাঁর নামের অর্থের সঙ্গে মিল রেখে মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। (গীতসংহিতা ১১৫:১৬; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) তিনি তাদের জন্য পৃথিবীকে আবারও পরমদেশ করে দেবেন যারা তাঁর বাধ্য সন্তান হয়ে থাকতে চায়।​—⁠হিতোপদেশ ৮:১৭; মথি ৫:⁠৫.

বাইবেলের শেষ বই সেই সুন্দর জীবনের বর্ণনা দেয় যা আপনি পরমদেশে উপভোগ করবেন। এখানে বলা আছে: “তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:​৩, ৪) এটাই সেই আসল জীবন যা যিহোবা আপনার জন্য চান যে আপনি তা উপভোগ করুন। কতই না দয়ালু পিতা তিনি! আপনি কি তাঁর সম্বন্ধে ও পরমদেশে বাস করতে হলে আপনাকে কী করতে হবে সেই বিষয়ে আরও জানতে চান?

উল্লেখ না করা থাকলে ব্যবহৃত সমস্ত বাইবেল উদ্ধৃতি বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত।