সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

একজন শিক্ষক হিসাবে, আপনি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটির সম্মুখীন হয়ে থাকেন, বিগত শতাব্দীর শিক্ষকেরা কদাচিৎই যার মুখোমুখি হয়েছিলেন—ধর্মীয় বৈচিত্র্য।

সমগ্র মধ্যযুগব্যাপী একটি দেশের নাগরিকেরা সাধারণত একই ধর্ম পালন করত। সম্প্রতিকালেও, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায় পর্যন্ত ইউরোপ মাত্র কয়েকটিই প্রধান ধর্মের সাথে পরিচিত ছিল: পশ্চিমে ক্যাথলিকবাদ ও প্রটেস্ট্যান্টবাদ, পূর্বে অর্থোডক্স ও ইসলাম ধর্ম এবং যিহূদীবাদ। কিন্তু, নিঃসন্দেহে এই বৈচিত্র্য আজকে ইউরোপে ও জগদ্ব্যাপী অনেক বেশি সাধারণ। অপরিচিত ধর্মগুলি তাদের শিকড় বিস্তার করেছে যেগুলির মধ্যে কিছু স্বয়ং দেশীয় জনসাধারণের দ্বারা অবলম্বিত অথবা অন্য দেশ থেকে আগত জনসমূহ বা উদ্বাস্তুদের দ্বারা প্রবর্তিত যাই হোক না কেন।

তাই, আজকে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে আমরা অনেক মুসলমান, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের দেখতে পাই। একই সময়ে, খ্রীষ্টান হিসাবে যিহোবার সাক্ষীরা ২৩৯টিরও বেশি দেশগুলিতে সক্রিয় পরিচর্যা করে চলেছেন। ১৪টি দেশের প্রত্যেকটিতে তাদের সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১,৫০,০০০ এরও বেশি।— যিহোবার সাক্ষীরা জগদ্ব্যাপী এক ধর্ম বাক্সটি দেখুন।

স্থানীয়ভাবে ধর্মীয় অভ্যাসের বৈচিত্র্য হয়ত শিক্ষকের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় উদ্‌যাপনগুলি সম্বন্ধে হয়ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে: ছাত্রছাত্রীদের ধর্মমত নির্বিশেষে—সমস্ত উৎসবগুলি পালন করাকে কি প্রত্যেকটি ছাত্রের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত? অধিকাংশেরাই হয়ত এইধরনের উদ্‌যাপনগুলিতে কোন অন্যায় দেখতে পান না। কিন্তু, একটি সংখ্যালঘু দলের অন্তর্ভুক্ত পরিবারগুলির দৃষ্টিভঙ্গিকেও কি সম্মান দেখানো উচিত নয়? এছাড়া বিবেচনা করার জন্য আরেকটি বিষয়ও রয়েছে: যে দেশগুলিতে আইন ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করে আর যেখানে ধর্মীয় নির্দেশনা পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না সেখানে এইধরনের উদ্‌যাপনগুলি বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পালন করাকে কি কিছুজন অসংগত বলে মনে করেন না?

জন্মদিনগুলি

এমনকি ভুলবোঝাবুঝি হয়ত সেই সমস্ত উদ্‌যাপনগুলির ক্ষেত্রেও উত্থাপিত হতে পারে যেগুলির সাথে খুব কমই ধর্মীয় সংযোগ আছে। এটি জন্মদিনগুলি পালনের ক্ষেত্রে সত্য যা অনেক বিদ্যালয়ে উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। যদিও যিহোবার সাক্ষীরা অন্যদের জন্মদিনগুলি উদ্‌যাপনের অধিকারকে সম্মান করে থাকেন, নিঃসন্দেহে আপনি এই বিষয়ে ভালভাবে অবগত আছেন যে তারা নিজেরা এইধরনের উদ্‌যাপনে অংশ না নেওয়াকে বেছে নেন। কিন্তু আপনি হয়ত কারণটি সম্বন্ধে জানেন না যে কেন তারা এবং তাদের সন্তানেরা এই উদ্‌যাপনগুলিতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে বিতরিত বিশ্বকোষ ল লিভরে ডেস রিলিজন (ধর্ম সম্বন্ধীয় পুস্তক) এই প্রথাকে এক ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান বলে সম্বোধন করে ও এটিকে “জাগতিক অনুষ্ঠানগুলির” সাথে তালিকাবদ্ধ করে। যদিও এটিকে আজকে একটি অক্ষতিকর জাগতিক প্রথা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, জন্মদিন উদ্‌যাপন প্রকৃতপক্ষে পৌত্তলিকতা থেকে এসেছে।

দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা (১৯৯১ সংস্করণ) উল্লেখ করে: “মিশর, গ্রীস, রোম ও পারস্যের প্রাচীন জগৎ ঈশ্বর, রাজা ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্মদিন উদ্‌যাপন করত।” গ্রন্থকার রাল্ফ এবং এডিলিন লিনটন এর অন্তর্নিহিত সুপ্ত কারণটি প্রকাশ করেন। জন্মদিনের কাহিনী (ইংরাজি) নামক তাদের বইয়ে তারা লেখেন: “সভ্যতার জন্মভূমি, মেসোপটেমিয়া ও মিশরই ছিল প্রথম দেশ যেখানে লোকেরা তাদের জন্মদিনগুলিকে স্মরণ ও সম্মান করতেন। জন্মদিনের নথি রাখা প্রাচীনকালে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ কোষ্ঠি তৈরির জন্য জন্ম তারিখ অত্যাবশ্যকীয় ছিল।” জ্যোতিষবিদ্যার সাথে এই সরাসরি সংযোগ তাদের জন্য একটি বড় চিন্তার বিষয়, যারা বাইবেল এটি সম্বন্ধে যা বলে সেই কারণে জ্যোতিষবিদ্যা এড়িয়ে চলেন।—যিশাইয় ৪৭:১৩-১৫.

তাই আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া-য় আমরা পড়ি: “প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা তাঁর [খ্রীষ্টের] জন্মদিন উদ্‌যাপন করতেন না কারণ যে কারও জন্ম উদ্‌যাপনকেই তারা পৌত্তলিক প্রথা হিসাবে বিবেচনা করতেন।”—খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪১৬.

সাক্ষীরা একসাথে আনন্দদায়ক সময় কাটানোকে উপভোগ করে থাকেন

এই বিষয়টি মনে রেখে যিহোবার সাক্ষীরা জন্মদিনের উৎসবে অংশ না নেওয়াকে বেছে নেন। নিশ্চিতভাবেই, একটি শিশুর জন্ম এক সুখকর ও মনোরম ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই, সমস্ত পিতামাতা প্রত্যেকটি বছরে তাদের সন্তানদের বৃদ্ধি ও বিকাশে আনন্দ করেন। এছাড়াও যিহোবার সাক্ষীরা উপহার দিয়ে ও একসাথে উপভোগ্য সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের প্রতি তাদের প্রেম প্রদর্শনে প্রচুর আনন্দ পান। যাইহোক, জন্মদিন উদ্‌যাপনের উৎস সম্বন্ধে স্মরণে রেখে তারা সারা বছরব্যাপী অন্য যে কোন সময়ে এটি করাকে পছন্দ করেন।—লূক ১৫:২২-২৫; প্রেরিত ২০:৩৫.

বড়দিন

জগদ্ব্যাপী, এমনকি অনেক ন-খ্রীষ্টীয় দেশগুলিতেও বড়দিন উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। যেহেতু এই ছুটির দিনটি খ্রীষ্টীয় জগতের অধিকাংশ ধর্মগুলি দ্বারা স্বীকৃত, তাই যিহোবার সাক্ষীরা যে এটির উদ্‌যাপন না করাকে বেছে নেন তা হয়ত আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হতে পারে। কেন তারা তা করেন?

যেমন অসংখ্য বিশ্বকোষগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে এক রোমীয় পৌত্তলিক উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করার জন্য যীশুর জন্মদিনকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে ২৫শে ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। বিভিন্ন তথ্যনির্দেশক গ্রন্থগুলি থেকে নেওয়া নিম্নোক্ত মন্তব্যগুলি লক্ষ্য করুন:

“খ্রীষ্টের জন্মের তারিখ সম্বন্ধে জানা যায় না। সুসমাচার লেখকেরা দিন অথবা মাস কোনটাই উল্লেখ করেননি।”—নতুন ক্যাথলিক বিশ্বকোষ, ইংরাজি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৫৬.

“বড়দিনের সময়ের অধিকাংশ আনন্দোৎসবমূলক প্রথাগুলির ক্ষেত্রে রোমের স্যাটারনেলিয়া আদর্শস্বরূপ কাজ করেছে।”—ধর্ম ও নীতিবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় বিশ্বকোষ

“ইউরোপে, বর্তমানে বিদ্যমান অথবা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত বড়দিন সংক্রান্ত অধিকাংশ প্রথাগুলি প্রকৃতই খ্রীষ্টীয় প্রথা নয় কিন্তু অখ্রীষ্টীয় প্রথা যেগুলি গির্জা কর্তৃক গৃহীত অথবা অনুমোদিত হয়ে এসেছে। . . . বড়দিনের সময়ের অধিকাংশ আনন্দোৎসবমূলক প্রথাগুলির ক্ষেত্রে রোমের স্যাটারনেলিয়া আদর্শস্বরূপ কাজ করেছে।”—ধর্ম ও নীতিবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় বিশ্বকোষ, ইংরাজি (এডিনবার্গ, ১৯১০) জেমস হেস্টিংস দ্বারা সম্পাদিত, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬০৮-৯.

“চতুর্থ শতাব্দী থেকে সমস্ত খ্রীষ্টীয় গির্জাগুলিতে ২৫শে ডিসেম্বরে বড়দিন উদ্‌যাপন করা শুরু হয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত এই তারিখটি পৌত্তলিক দক্ষিণায়ন উৎসবের দিন ছিল যেটি ‘সূর্যের জন্ম’ (ল্যাটিন, নাটালা) হিসাবে অভিহিত হত যেহেতু সূর্যকে পুনর্জাত হতে দেখা যেত ও আরেকবার দিন বড় হতে শুরু করত। রোমে, গির্জা এটিকে এক নতুন অর্থ প্রদান করে . . . এই অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রথাটি গ্রহণ করেছিল।”—এনসাইক্লোপিডিয়া ইউনিভারসালিস, ১৯৬৮, (ফ্রেঞ্চ) খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ১৩৭৫.

“বড়দিন উৎসবের বিকাশ সল ইনভিকটাস (মিথরা) নামক পৌত্তলিক উদ্‌যাপনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। অপরপক্ষে, দক্ষিণায়নের দিন হওয়ায় ২৫শে ডিসেম্বর সেই আলো দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল যা খ্রীষ্টের মাধ্যমে জগতে উদ্ভূত হয়েছিল আর সল ইনভিকটাস এর প্রতিকৃতি তাই খ্রীষ্টের প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছিল।”—ব্রোকহাস এনস্টুক্লোপেডি, (জার্মান) খণ্ড ২০, পৃষ্ঠা ১২৫.

বড়দিন সম্বন্ধে প্রকৃত সত্যটি শিখে কিছুজন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানায়: “১৬৪৪ সালে গোঁড়া খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ইংরেজরা সংসদের আইন দ্বারা যে কোন আনন্দোৎসব অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে এই ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করেছিলেন যে এটি [বড়দিন] এক অখ্রীষ্টীয় উৎসব আর এই দিনটি উপবাস করে কাটাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। চালর্স দ্বিতীয় উৎসবটি পুনরায় শুরু করেছিলেন কিন্তু স্কটল্যান্ডবাসীরা গোঁড়া খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অনুগত ছিল।” প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা বড়দিন উদ্‌যাপন করেননি আর আজকে যিহোবার সাক্ষীরাও এটি উদ্‌যাপন করেন না অথবা বড়দিনের সাথে সংযুক্ত কোনরকম কার্যকলাপেরও অংশী হন না।

কিন্তু, বাইবেল উপহার দেওয়া অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের আনন্দজনক আহারের জন্য নিমন্ত্রণ করা সম্বন্ধে অনুকূলভাবে বলে থাকে। সামাজিকভাবে যখন উপহারের জন্য প্রত্যাশা করা হয়ে থাকে কেবলমাত্র সেই সময়েই তা দেওয়ার পরিবর্তে, এটি তাদের সন্তানদের আন্তরিকভাবে উদার হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পিতামাতাদের উৎসাহিত করে। (মথি ৬:২, ৩) যিহোবার সাক্ষীদের সন্তানেরা সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে শেখে আর এর অন্তর্ভুক্ত হল অন্যদের বড়দিন উদ্‌যাপন করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। আর পরিবর্তে, তারা এটি উপলব্ধি করে যখন বড়দিন উদ্‌যাপনে অংশগ্রহণ না করা সম্বন্ধীয় তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করা হয়।

অন্যান্য উদ্‌যাপনগুলি

যিহোবার সাক্ষীরা বিভিন্ন দেশগুলিতে বিদ্যালয়ে সারা বছর ধরে অনুষ্ঠিত অন্যান্য ধর্মীয় ও ধর্মের সাথে জড়িত এমন ছুটির দিনগুলি সম্পর্কেও একই পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন যেমন ব্রাজিলের জুন উৎসব, ফ্রান্সের এপিফ্যানি, জার্মানির কারনিভাল, জাপানের সেটসুবন এবং যুক্তরাষ্ট্রের হলউইন। এইগুলি ও অন্য যে কোন নির্দিষ্ট উদ্‌যাপন যেগুলির নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি, সেগুলি সম্বন্ধে সাক্ষী পিতামাতা ও তাদের সন্তানেরা নিশ্চতভাবেই আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে খুশি হবেন।