সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সাক্ষীরা তাদের সন্তানদের মধ্যে সত্য খ্রীষ্টীয় মূল্যবোধ অনুপ্রবেশ করাতে চেষ্টা করেন

নৈতিক মূল্যবোধ যা সম্মানের যোগ্য

নৈতিক মূল্যবোধ যা সম্মানের যোগ্য

ইতিহাসব্যাপী সাহসী পুরুষ ও নারীরা তাদের সমকালীন জনপ্রিয় চিন্তাধারার বিপরীতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত উৎপীড়ন সহ্য করেছেন আর সেগুলির কারণে প্রায়ই তারা তাদের জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন।

প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা বিশেষভাবে সাহসী ছিলেন। প্রথম তিন শতাব্দীব্যাপী প্রচণ্ড তাড়নার সময়, সম্রাটকে উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করায় পৌত্তলিক রোমীয়রা তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কখনও কখনও মল্লভূমিতে একটি বেদি স্থাপন করা হত। মুক্তি পাওয়ার জন্য খ্রীষ্টানদের কেবলমাত্র সম্রাটের ঐশিক প্রতিকৃতির প্রতি স্বীকৃতিস্বরূপ এক চিমটা ধূপধূনা পোড়াতে হত। যাইহোক, কিছুজন আপোশ করেছিলেন। অধিকাংশেরা তাদের বিশ্বাসকে অস্বীকার করার পরিবর্তে বরং মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন।

আধুনিক সময়ে, যিহোবার খ্রীষ্টীয় সাক্ষীরা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে এক অনুরূপ পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, নাৎসীবাদের সামনে তাদের দৃঢ় পদক্ষেপ এক ঐতিহাসিক নথিস্বরূপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও তা চলাকালীন আনুমানিক এক চতুর্থাংশ জার্মান সাক্ষীরা প্রধানত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলিতে তাদের জীবন হারিয়েছিলেন কারণ তারা নিরপেক্ষ ছিলেন ও “হিটলারের জয় হোক” বলাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অল্পবয়স্ক সন্তানদের তাদের সাক্ষী পিতামাতার কাছ থেকে জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। চাপ সত্ত্বেও, অল্পবয়স্কেরা দৃঢ় ছিল ও অশাস্ত্রীয় শিক্ষার দ্বারা কলুষিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিল যা অন্যেরা তাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল।

পতাকা অভিবাদন

আজকের দিনে যিহোবার সাক্ষীরা সাধারণত এইধরনের তীব্র তাড়নার লক্ষ্যবস্তু নন। তৎসত্ত্বেও, কখনও কখনও ভুলবোঝাবুঝির উদ্ভব হয়ে থাকে যখন অল্পবয়স্ক সাক্ষীরা তাদের বিবেকবুদ্ধিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে কোন দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান যেমন পতাকা অভিবাদনে অংশগ্রহণ করতে চায় না।

“কৈসরের যা প্রাপ্য তা কৈসরকে দাও—এবং ঈশ্বরের যা প্রাপ্য তা ঈশ্বরকে দাও”—মথি ২২:২১, যিরূশালেম বাইবেল

যিহোবার সাক্ষীদের সন্তানেরা অন্যদের পতাকা অভিবাদন করাকে নিরুৎসাহিত না করা সম্বন্ধে শেখে; কারণ তা প্রত্যেক ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কিন্তু, তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পদক্ষেপ দৃঢ়: তারা কোন জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন করেন না। এটি নিশ্চিতভাবেই অসম্মান করার প্রবণতাকে সূচিত করে না। তারা যে দেশে বাস করেন সেখানকার পতাকাকে তারা অবশ্যই সম্মান করেন আর দেশের আইনের বাধ্য হয়ে তারা এই সম্মান প্রদর্শন করেন। তারা কখনও কোন প্রকার সরকার বিরুদ্ধ কার্যকলাপে যুক্ত হন না। বস্তুতপক্ষে, সাক্ষীরা বিশ্বাস করেন যে বর্তমান মনুষ্য সরকারগুলি “ঈশ্বরের ব্যবস্থা” হিসাবে সংস্থাপিত যেগুলিকে তিনি অস্তিত্বে থাকার জন্য অনুমোদন করেছেন। সুতরাং তারা নিজেদের কর প্রদান করা ও এইধরনের “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” সম্মান করা সম্বন্ধীয় ঐশিক আজ্ঞার অধীনস্থ বলে বিবেচনা করেন। (রোমীয় ১৩:১-৭) এটি খ্রীষ্টের বিখ্যাত এই উক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “কৈসরের যা প্রাপ্য তা কৈসরকে দাও—এবং ঈশ্বরের যা প্রাপ্য তা ঈশ্বরকে দাও।”—মথি ২২:২১, ক্যাথলিক যিরূশালেম বাইবেল।

‘কিন্তু তাহলে কেন’ কিছুজন হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন ‘যিহোবার সাক্ষীরা অভিবাদন করে পতাকার প্রতি সম্মান দেখান না?’ এর কারণ হল তারা পতাকা অভিবাদনকে উপাসনা হিসাবে দেখে থাকেন; আর উপাসনা কেবলমাত্র ঈশ্বরেরই প্রাপ্য; ঈশ্বর ব্যতীত আর কাউকে বা কোন কিছুকে তারা বিবেকবুদ্ধিপূর্ণভাবে উপাসনা দিতে পারেন না। (মথি ৪:১০; প্রেরিত ৫:২৯) সুতরাং, তারা এটি উপলব্ধি করেন যখন শিক্ষকেরা তাদের এই প্রত্যয়কে সম্মান করেন ও সাক্ষী সন্তানদের তাদের বিশ্বাসকে মেনে চলতে দেন।

আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, কেবলমাত্র যিহোবার সাক্ষীরা একাই বিশ্বাস করেন না যে পতাকা অভিবাদন উপাসনার সাথে সম্পর্কযুক্ত যেমন নিম্নোক্ত মন্তব্যগুলি দেখায়:

“প্রাচীনকালে পতাকা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রতিকৃতি ছিল। . . . মনে হয় যেন ধর্মীয় আনুসঙ্গিক বিষয়গুলি সর্বদাই জাতীয় পতাকাকে পবিত্রতা দেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজেছে।” (বাঁকা আক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা।

“ক্রুশের মত পতাকাও পবিত্র। . . . জাতীয় প্রতীকের প্রতি মানুষের মনোভাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত নিয়ম নীতিগুলি এইধরনের শক্তিশালী, অভিব্যক্তিমূলক বাক্যগুলি ব্যবহার করে যেমন, পতাকার প্রতি সেবা, . . . পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা, পতাকার প্রতি ভক্তি।’” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা।

“খ্রীষ্টানেরা . . . [রোমীয়] সম্রাটের প্রতিমূর্তির কাছে উৎসর্গ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন—আজকের দিনে পতাকা অভিবাদন করা অথবা নিষ্ঠা শপথ উচ্চারণ করাকে প্রত্যাখ্যান করাও প্রায় অনুরূপ বিষয়।”—ড্যানিয়েল পি. ম্যানিক্স দ্বারা প্রণীত যারা মৃত্যু পথযাত্রী (ইংরাজি, ১৯৫৮), পৃষ্ঠা ১৩৫.

তিনজন ইব্রীয় যুবক বাবিলনীয় রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের দ্বারা নির্মিত প্রতিমার সামনে প্রণিপাত করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন

আবারও, যিহোবার সাক্ষীরা পতাকা অভিবাদনকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা কোন সরকার অথবা এর শাসকদের অসম্মান করার ইঙ্গিত দেন না। তারা কেবলমাত্র এটির উপাসনা করবেন না, এর কাছে প্রণিপাত করবেন না অথবা রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোন মূর্তিকে অভিবাদন করবেন না। তারা এটিকে বাইবেলের সময়ে তিনজন ইব্রীয় যুবক ব্যক্তির দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপের মত একই দৃষ্টিতে দেখে থাকেন যারা দূরা সমস্থলীতে বাবিলনীয় রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের দ্বারা নির্মিত প্রতিমার সামনে প্রণিপাত করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (দানিয়েল, ৩ অধ্যায়) সুতরাং, অন্যেরা যখন অভিবাদন ও নিষ্ঠা সম্বন্ধে অঙ্গীকার করে, যিহোবার সাক্ষীদের সন্তানেরা বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক অনুসরণ করার জন্য শিক্ষা পায়। এইভাবে, তারা নীরবে ও সম্মানসূচকভাবে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। এই একই কারণে সাক্ষী সন্তানেরা জাতীয় সংগীত গাওয়া অথবা বাজানোতে অংশগ্রহণ না করাকে বেছে নেয়।

পিতামাতাদের অধিকার

বর্তমানে, অধিকাংশ দেশগুলি তাদের নিজস্ব অভিমত অনুযায়ী সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পিতামাতাদের অধিকারকে সম্মান জানিয়ে থাকে। সমস্ত ধর্মগুলি এই অধিকারকে সমর্থন করে যেমন এখনও কার্যকারী ক্যাথলিক গির্জার, গির্জা পরিচালনার অনুশাসনে (ক্যানন ল) ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “সন্তানদের জীবন দেওয়ায়, তাদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও পিতামাতাদের কঠোর বাধ্যবাধকতা আছে আর তাদের তা করার অধিকার আছে; তাই প্রাথমিকভাবে তাদের সন্তানদেরকে গির্জার মতবাদ অনুযায়ী খ্রীষ্টীয় শিক্ষা প্রদান করা পিতামাতাদের কর্তব্য।”—ক্যানন ২২৬.

সন্তানদের অন্যদের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শনের জন্য উৎসাহিত করা হয়ে থাকে

যিহোবার সাক্ষীরা এর চেয়ে বেশি কিছু চান না। যত্নশীল পিতামাতা হিসাবে, তারা তাদের সন্তানদের মধ্যে সত্য খ্রীষ্টীয় মূল্যবোধ অনুপ্রবেশ করাতে চেষ্টা করেন ও তাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম ও অন্যের সম্পত্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য শিক্ষা দেন। ইফিষের খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে দেওয়া প্রেরিত পৌলের পরামর্শকে অনুসরণ করতে তারা আকাঙ্ক্ষী: “পিতামাতারা, সন্তানদের সাথে এমন ব্যবহার করবেন না যাতে তারা ক্রুদ্ধ হয়। পরিবর্তে, তাদের খ্রীষ্টীয় শাসন ও নির্দেশনার দ্বারা প্রতিপালন করুন।”—ইফিষীয় ৬:৪, আজকের ইংরাজি সংস্করণ।

ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারগুলি

কিছু পরিবারগুলিতে, পিতামাতার মধ্যে কেবলমাত্র একজন যিহোবার সাক্ষী। এইধরনের এক পরিস্থিতিতে, সাক্ষী পিতা বা মাতাকে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে যেন তিনি ন-সাক্ষী পিতা বা মাতার তার ধর্মীয় অভিমত অনুসারে সন্তানদের নির্দেশিত করার অধিকারকেও স্বীকার করে নেন। ভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে বড় হয়ে ওঠা সন্তানেরা খুব কমই খারাপ প্রভাবগুলি ভোগ করে থাকে। * প্রকৃতপক্ষে, সমস্ত সন্তানদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কোন্‌ ধর্ম অনুসরণ করবে। স্বাভাবিকভাবেই, সমস্ত যুবক-যুবতীরাই তাদের পিতামাতার ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করাকে বেছে নেয় না তা তারা যিহোবার সাক্ষী হোক অথবা নাই হোক।

বিবেকের স্বাধীনতা সম্বন্ধে সন্তানদের অধিকার

আপনার এটিও জানা উচিত যে যিহোবার সাক্ষীরা ব্যক্তিবিশেষের খ্রীষ্টীয় বিবেকের প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। (রোমীয়, ১৪ অধ্যায়) ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন দ্বারা প্রণীত শিশুদের অধিকারের উপর একটি সম্মেলনে এক সন্তানের অধিকারকে “চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা” হিসাবে এবং স্বচ্ছন্দে তার মতামত প্রকাশ করা ও সন্তানকে প্রভাবিত করে এমন যে কোন বিষয় অথবা কার্যপ্রণালীর ক্ষেত্রে সেই মতামতকে বিবেচনা করার অধিকারকে স্বীকার করা হয়।

দুটি সন্তান কখনই নিখুঁতভাবে সমরূপ নয়। তাই, আপনি হয়ত যুক্তিসংগতভাবেই প্রত্যাশা করতে পারেন যে নির্দিষ্ট কোন কার্যকলাপ এবং কর্মনিযুক্তি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অল্পবয়স্ক সাক্ষী ও অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকবেই। আমরা আস্থা রাখি যে আপনিও বিবেকের স্বাধীনতা সম্বন্ধীয় নীতির প্রতি সম্মতি জানাবেন।

^ অনু. 18 অসম বিশ্বাসের মধ্যে সম্পাদিত বিবাহগুলির ক্ষেত্রে সন্তানদের সম্বন্ধে স্টিভেন কার রূবেন, পিএইচ. ডি. সমকালীন জগতে যিহূদী সন্তানদের প্রতিপালন করা (ইংরাজি) নামক তার বইয়ে উল্লেখ করেন: “সন্তানেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে যখন পিতামাতারা অস্বীকারকারী, বিশৃঙ্খল, গোপনীয় এবং যেন ধর্মীয় বিষয়কে এড়িয়ে চলছেন এমনভাবে জীবনযাপন করেন। যখন পিতামাতারা তাদের নিজস্ব বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও উৎসবগুলি উদ্‌যাপনের বিষয়ে অকপট, সৎ ও সুস্পষ্ট হন, তখন সন্তানেরা সুরক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে আত্ম-মূল্যসহ গড়ে ওঠে যেটি জগতে তাদের স্থান সম্বন্ধে তাদের সর্বাঙ্গীণ আত্ম-সন্তুষ্টি এবং জ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী।”